

অতি আত্মবিশ্বাসী হয়ে রিভিউ নষ্ট করা, অহেতুক রিভিউ নিয়ে ধারাভাষ্য কক্ষে হাস্য রসের খোরাক জোগানো, সহজ ক্যাচ মিস, রান আউটের সুবর্ণ সুযোগ লুফে নিতে না পারা সহ একটা দিনকে খারাপ বলার বহু উপকরণ ছিলো বাংলাদেশের জন্য। তবে এতো কিছুর পরেও শেষ বিকেলে এবাদত হোসেনের ভয়ংকর এক স্পেলে মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্টের চতুর্থ দিনও বাংলাদেশের।
প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের ১৩০ রানের লিডের জবাবে নিউজিল্যান্ড দ্বিতীয় ইনিংসে ৫ উইকেটে ১৪৭ রান তুলে দিন শেষ করে। ইতোমধ্যে নিউজিল্যান্ডের লিড দাঁড়িয়েছে ১৭ রানের।
২ উইকেটে ৬৮ রান তুলে চা বিরতিতে যায় কিউইরা। ৩২ রানে উইল ইয়াং ও ১৩ রানে অপরাজিত ছিলেন রস টেইলর।
চা বিরতির পরের সেশন দুজনে মিলে নির্বিঘ্নে পার করে দিচ্ছিলেন। তবে ক্যাচ মিস, রিভিউ নষ্টের মহড়ায় বেশ নাটকীয়তাও তৈরি হয়ে যায় ততক্ষণে।
তাসকিনের করা ইনিংসের ৩৭তম ওভারে টেইলরের বিপক্ষে এলবিডব্লিউর আবেদন করে বাংলাদেশ। খালি চোখেই দেখা যাচ্ছিলো ইয়র্কার লেংথের বলটি টেইলর ব্যাট দিয়েই ডিফেন্স করেন সাবলীলভাবে।
তবে অতি আত্ববিশ্বাসী হয়ে নিজেদের শেষ রিভিউটিও নষ্ট করে বাংলাদেশ। এমন কিছুতে হাস্যরসের খোরাক জন্মায় ধারাভাষ্য কক্ষেও।
মিরাজের করা ইনিংসের ৪২ তম ওভারে ডিপ মিড উইকেটে টেইলরের (তখন ১৭ রানে) সহজ ক্যাচ ছাড়েন সাদমান ইসলাম। ৪৩ তম ওভারের দ্বিতীয় বলে ২ রান নিয়ে ১৩৭ বলে ফিফটি তুলে নেন ইয়াং।
৫০তম ওভারের দ্বিতীয় বলে রান আউটের সহজ সুযোগও হাত ছাড়া করে বাংলাদেশ ফিল্ডাররা। এবাদতের বলে পয়েন্টে ঠেলে দিয়ে রানের জন্য ছুটেন ইয়াং, তবে মাঝপথে দ্বিধায় ভুগে ফিরে যান, ততক্ষণে প্রায় প্রান্ত বদল রস টেইলরের।
ফিরে আসতে আসতে নিশ্চিতভাবেই হতে পারতেন রান আউট, কিন্তু এ দফায় বোলার এবাদত বল ধরে তা স্টাম্পে স্পর্শ করাতে ব্যর্থ। ব্যক্তিগত ২৯ রানে জীবন পেলেন টেইলর।
টেইলর-ইয়াংয়ের ব্যাটে লিডও পেয়ে যায় স্বাগতিকরা। তবে দুজনের ৭৩ রানের জুটি ভাঙেন এবাদত হোসেন। ভেতরে ঢোকানো গুড লেংথের বলে বোল্ড করেন ১৭২ বলে ৭ চারে ৬৯ রান করা ইয়াংকে। এক বলের ব্যবধানে এবাদত বোল্ড করেন হেনরি নিকোলসকেও (০)। নিজের পরের ওভারেই এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেন টম ব্লান্ডেলকে (০)।
আর তাতেই ২ উইকেটে ১৩৬ থেকে ৫ উইকেটে ১৩৬ রানে পরিণত হয় নিউজিল্যান্ড। এবাদতের ৬ ওভারের এই স্পেলটি ছিলো এমন ৬-২-১৪-৩।
দিনের বাকি অংশ অবশ্য টেইলর ও রাচিন রবীন্দ্র মিলে পার করে দেন। কিউইদের স্কোরবোর্ডে ৫ উইকেটে ১৪৭ রান। ১১ রানের জুটিতে অবিচ্ছেদ্য আছেন দুজনে, টেইলর ৩৭ ও রাচিন ৬ রানে অপরাজিত আছেন। সব মিলিয়ে ইনিংসে এখনো পর্যন্ত এবাদতের বোলিং ফিগার ১৭-৪-৩৯-৪। যা তার ক্যারিয়ার সেরা বোলিং ফিগারও।
এ দিন টাইগার অফ স্পিনার মিরাজ কতটা ভালো বল করেছেন তা অবশ্য তার ২২-৫-৪৩-০ এই বোলিং ফিগার দিয়ে বোঝা অসম্ভব। তার বলে সহজ ক্যাচ ও হাফ চান্সগুলো লুফে নেওয়া গেলে নামের পাশে অনায়েশেই থাকতে পারতো ২-৩ উইকেট।
প্রথম ইনিংসে নিউজিল্যান্ডের ৩২৮ রানের জবাবে বাংলাদেশ তৃতীয় দিন শেষ করেছিলো ৬ উইকেটে ৪০১ রান নিয়ে। যেখানে মিরাজ ২০ ও ইয়াসির আলি রাব্বি অপরাজিত ছিলেন ১১ রানে।
৭৩ রানের লিড নিয়ে চতুর্থ দিন শুরু করা বাংলাদেশ যোগ করতে পারে আরও ৫৭ রান। ৪৫৮ রানে অলআউট হওয়ার আগে মিরাজের ব্যাটে ৪৭ ও রাব্বি থামেন ২৬ রানে। ইনিংস শেষে টাইগারদের লিড ১৩০।
জবাবে নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে লাঞ্চের আগে ৩ ওভার বাট কয়ারর সুযোগ পেয়ে বিনা উইকেটে ১০ রান তোলে কিউইরা। তবে লাঞ্চের পর হারায় টম লাথাম (১০) ও প্রথম ইনিংসের সেঞ্চুরিয়ান ডেভন কনওয়ের (১৩) উইকেট।
চা বিরতির পর বাংলাদেশ নষ্ট করে দুইটি রিভিউ। এবাদতের করা ১৭তম ওভারে ২১ রানে ব্যাট করা ইয়াংয়ের বল থাই প্যাড ছুঁয়ে উইকেট রক্ষক লিটন দাসের গ্লাভসে জমা হয়। কিন্তু বেশ আত্মবিশ্বাসের সাথে কট বিহাইন্ডের আবেদনে সাড়া না পেয়ে রিভিউ নিয়েছিলো টাইগাররা যদিও বিফলে যায়।
এবাদতের করা ২৯তম ওভারে আরেক দফা রিভিউ নষ্ট করে বাংলাদেশ। টেইলরের খালি চোখে দেখা যাওয়া ব্যাট-বলের ফাঁককেই অবিশ্বাস্যভাবে কট বিহাইন্ডের আবেদন করে বসেন এবাদত। অতি আত্মবিশ্বাসের সাথে রিভিউ নিতেও বাধ্য করেন। তবে লাভ হয়নি কিছুই।
সংক্ষিপ্ত স্কোর (৪র্থ দিন শেষে):
নিউজিল্যান্ড ১ম ইনিংসে ৩২৮/১০ (১০৮.১), ল্যাথাম ১, ইয়াং ৫২, কনওয়ে ১২২, টেইলর ৩১, নিকোলস ৭৫, ব্লান্ডেল ১১, রাচিন ৪, জেমিসন ৬, সাউদি ৬, ওয়েগনার ০, বোল্ট ৯*; শরিফুল ২৬-৭-৬৯-৩, এবাদত ১৮-৩-৭৫-১, মিরাজ ৩২-৯-৮৬-৩, মুমিনুল ৪.১-০-৬-২
বাংলাদেশ ১ম ইনিংসে ৪৫৮/১০ (১৭৬.২), সাদমান ২২, জয় ৭৮, শান্ত ৬৪, মুমিনুল ৮৮, মুশফিক ১২, লিটন ৮৬, রাব্বি ২৬, মিরাজ ৪৭, তাসকিন ৫, শরিফুল ৭, এবাদত ০*; সাউদি ৩৮-৪-১১৪-২, বোল্ট ৩৫.২-১১-৮৫-৪, জেমিসন ৩৫-১১-৭৮-১, ওয়াগনার ৪০-৯-১০১-৩
নিউজিল্যান্ড ২য় ইনিংসে ১৪৭/৫ (৬৩), ল্যাথাম ১৪, ইয়াং ৬৯, কনওয়ে ১৩, টেইলর ৩৭*, নিকোলস ০, ব্লান্ডেল ০, রবীন্দ্র ৬*; তাসকিন ৯-১-২২-১, এবাদত ১৭-৪-৩৯-৪
নিউজিল্যান্ড ২য় ইনিংসে ১৭ রানে এগিয়ে।