

ঘড়ির কাঁটা রাত ১২ টা ছুঁতেই বদলে যাবে ক্যালেন্ডার, আলোচিত ঘটনায় মোড়ানো ২০২১ শেষে যাত্রা শুরু ২০২২ সালের। বছরের প্রথম দিনেই নতুন স্বপ্ন নিয়ে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট খেলতে নামছে বাংলাদেশ। ক্রিকেটের যে ফরম্যাটে সবচেয়ে নাজুক পারফরম্যান্স টাইগারদের সেই টেস্ট দিয়েই নতুন বছরকে স্বাগতম জানাবে মুমিনুল হকের দল। নিউজিল্যান্ডের মাটিতে বিবর্ণ, বিধ্বস্ত বাংলাদেশ দলের অতীত পরিসংখ্যানকে পেছনে ফেলে নতুন উদ্যমে মাঠে নামতে রোমাঞ্চিত অধিনায়ক মুমিনুল হক।
নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে এর আগে ১৫ টেস্টে সাফল্য বলতে মাত্র ৩ টি টেস্টে ড্র, যেখানে বৃষ্টির সাহায্যও পেয়েছে টাইগাররা। যার ৩ টিই আবার বাংলাদেশের মাটিতে। নিউজিল্যান্ডের মাটিতে খেলা ৯ টেস্টের সবকটিতেই সঙ্গী পরাজয়, ইনিংস ব্যবধানেই হেরেছে ৫ ম্যাচে। বাকি চার ম্যাচের দুইটি ৯ উইকেট একটি ৭ উইকেট, একটি ১২১ রান ও একটি ১৩৭ রানের বড় ব্যবধানে হারতে হয়েছে।
শুধু টেস্ট নয়, সব ফরম্যাট মিলিয়েই কিউই মুল্লুকে খেলা ৩২ ম্যাচের কোনোটিতে জয়ের মুখ দেখেনি বাংলাদেশ। এমন পরিসংখ্যানের সাথে সাম্প্রতিক বাজে পারফরম্যান্সে বাংলাদেশ সিরিজ শুরুর আগেই ব্যাকফুটে থাকছে কাগজে-কলমে। কিন্তু টাইগার কাপ্তান অতীতকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে তাকাতে চান সামনের দিকে।
আজ (৩১ ডিসেম্বর) ম্যাচ পূর্ববর্তী দিন সংবাদ সম্মেলনে মুমিনুল বলেন, ‘নতুন বছর নিয়ে রোমাঞ্চিত। আগে কী হয়েছে এসব নিয়ে চিন্তা না করে সামনের বছর কীভাবে ভালো করে শুরু করা যায় এটা নিয়ে চিন্তাভাবনা করছি। আসলেই আমি খুব এক্সাইটেড। শুরু ভালো হলে বাকিটাও ভালো যায়।’
‘আপাতত ২০২২ নিয়ে এত চিন্তা করছি না। এই সিরিজে কতটা ভালো খেলতে পারি এটা নিয়েই চিন্তা করছি। এক বছর টেস্টে কেমন করবেন এসব ভাবা খুব কঠিন। সামনে কঠিন সব কন্ডিশনে খেলব। ছোট ছোট লক্ষ্য তৈরি করে এগিয়ে যাওয়াই ভালো।’
২০২১ সালে বাংলাদেশ খেলেছে ৭ টি টেস্ট, যেখানে ৫ ম্যাচেই পরাজয় হয়েছে সঙ্গী। একমাত্র জয়টি এসেছে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে, একমাত্র ড্র শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। যেখানে নিউজিল্যান্ড ৬ ম্যাচে জিতেছে ৩ টিতে, ড্র দুইটি, হেরেছে মাত্র একটিতে। টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের প্রথম চক্রে নিউজিল্যান্ড যেখানে চ্যাম্পিয়ন দল সেখানে বাংলাদেশ একমাত্র দল হিসেবে জিতেনি কোনো ম্যাচ।
সবমিলিয়ে কঠিন এক চ্যালেঞ্জের সামনেই পড়তে হচ্ছে বাংলাদেশকে নিশ্চিত। তবে নিজেদের নিয়ে বেশ আত্মবিশ্বাসী মুমিনুল হক। বাংলাদেশ সময় ভোর ৪ টায় শুরু হতে যাওয়া মাউন্ট মঙ্গানুইয়ের বে ওভাল টেস্টের একাদশে নিউজিল্যান্ড পেসারদের থাকবে আধিপত্য।
টাইগার কাপ্তান বলছেন কিউইদের স্পিনার না থাকলেও পেসারদের সামলানোর সামর্থ্য আছে বাংলাদেশ ব্যাটারদের, ‘ওদের পেস বোলিংই সবচেয়ে বেশি চ্যালেঞ্জ হবে। এই চ্যালেঞ্জ নেওয়ার মত সামর্থ্য আমাদের আছে, নেওয়া উচিৎ।’
প্রথম কয়েক ঘন্টা কাটাতে পারলে ব্যাটাররা ব্যাট করে মজা পাবে বলেও মত মুমিনুলের, ‘আপনি নিউজিল্যান্ডে আসার আগে যেরকম চিন্তা করবেন, উইকেট এরকমই হবে। বিদেশে খেলার সময় মাইন্ড সেটআপ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। উইকেট খুব চ্যালেঞ্জিং হবে- এরকম চিন্তা করলে হবে না।’
‘আমার কাছে মনে হয় ব্যাটিং করলে ব্যাটাররা ভালো উপভোগ করবে, বোলাররাও বল করে মজা পাবে। প্রথম দিকে চ্যালেঞ্জ হয়ত একটু বেশি থাকবে। নিউজিল্যান্ডে সবসময় প্রথম এক-দেড় ঘণ্টা চ্যালেঞ্জিং হয়।’
অভিজ্ঞ ওপেনার তামিম ইকবাল নেই, ছুটিতে আছেন সাকিব আল হাসানও। ফলে একাদশ সাজাতে গিয়ে বাংলাদেশকে খানিক বেগ পাওয়ারই কথা। ওপেনিংয়ে সাদমান ইসলামের সঙ্গী হতে যাচ্ছে মাহমুদুল হাসান জয়। বোলিং আক্রমণে ৩ পেসারের সাথে ১ স্পিনার থাকতে পারে বলে আভাস দেন কোচ রাসেল ডোমিঙ্গো।
৩ পেসারের একজন ফর্মে থাকা তাসকিন আহমেদ নিশ্চিত, তার সাথে যোগ দিতে পারেন শরিফুল ইসলাম, এবাদত হোসেন ও আবু জায়েদ রাহির যেকোনো দুজন। স্পিনারদের ক্ষেত্রে প্রতিপক্ষ একাদশে বাঁহাতি ব্যাটার বিবেচনায় মেহেদী হাসান মিরাজ টিকে যেতে পারেন। অবশ্য ধারাবাহিক পারফর্মার বাঁহাতি স্পিনার তাইজুলের সম্ভাবনাও কম নয়। যদিও উইকেট দেখে তবেই একাদশ সাজানোর পুরোনো সূত্রেই আছে বাংলাদেশ।
সম্প্রতি বাজে পারফরম্যান্সের মাঝেও উন্নতি দেখছেন কোচ রাসেল ডোমিঙ্গো। তার মতে ফলাফলে বাজে হওয়াতে উন্নতি চোখে পড়ছে না। সাকিব, তামিমের না থাকা, অভিজ্ঞ মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের অবসরের কারণে কিছুটা অনভিজ্ঞ দল নিয়ে নিউজিল্যান্ড সফরে যাওয়াকে এক দিক থেকে ইতিবাচক বলছেন টাইগার কোচ।
এ প্রসঙ্গে তার ভাষ্য, ‘মাস দুয়েক ধরে খুব কঠিন সময় যাচ্ছে, সন্দেহ নেই। টেস্ট ম্যাচে আমরা দল হিসেবে উন্নতি করছি। ফলাফলে হয়তো সেই প্রতিফলন নেই, তবে টেস্ট ম্যাচে আমরা আগের চেয়ে ভালো করছি। আমাদের দু-একজন বড় ক্রিকেটার এখানে নেই, যা খুব একটা আদর্শ নয়। তবে অনেক ইতিবাচক দিকও আছে এটির।’
‘অনেক তরুণ ক্রিকেটার এখানে এসেছে, যারা নিউ জিল্যান্ডে খুব একটা টেস্ট খেলেনি। আগের পারফরম্যান্সের ক্ষত তাই তাদের থাকবে না। এটিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখতে হবে আমাদের। আমরা জানি যে, টেস্ট ম্যাচে আমাদের রেকর্ড ভালো নয় এখানে। তবে আমরা রোমাঞ্চিত যে তরুণদের সামনে ভালো সুযোগ নিউ জিল্যান্ডের স্বাদ পাওয়ার ও ভালো পারফর্ম করার।’
ভোর ৪ টায় শুরু হতে যাওয়া ম্যাচটি বাংলাদেশের দুইটি টিভিতে সম্প্রচার হবে। চ্যানেল দুইটি হলো গাজী টিভি ও দেশের প্রথম স্পোর্টস চ্যানেল টি-স্পোর্টস।
বাংলাদেশের সম্ভাব্য একাদশঃ
সাদমান ইসলাম, মাহমুদুল হাসান জয়, নাজমুল হোসেন শান্ত, মুমিনুল হক (অধিনায়ক), মুশফিকুর রহিম, লিটন দাস (উইকেটরক্ষক), ইয়াসির আলি চৌধুরী, মেহেদী হাসান মিরাজ/তাইজুল ইসলাম, তাসকিন আহমেদ, আবু জায়েদ রাহি এবং শরিফুল ইসলাম/ এবাদত হোসেন।