

বছরের পর বছর তিন ফরম্যাটে খেলে যাওয়ার ব্যাপারটা যেমন কষ্টকর, তেমনি চ্যালেঞ্জিং। তিন ফরম্যাটে ক্রিকেট খেলতে গিয়ে পরিবারকে পর্যাপ্ত সময় দিতে পারেননি সাকিব। নিজের মন ও শরীরকে বিশ্রাম দেওয়ার জন্যই টেস্ট ক্রিকেট থেকে বিরতির কথা ভাবছেন সাকিব আল হাসান। তবে এসব বিষয় নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতেই বিসিবির সঙ্গে আগে আলোচনায় বসতে চান সাকিব, এরপরই সাজাবেন পরিকল্পনা। করোনায় ক্রিকেটাঙ্গনে বসছে বাহারি বিধিনিষেধ! এমন ক্রিকেট বিশ্ব সাকিবের কাছে যেন এক জেলখানা।
ব্যাটে-বলে সাকিব আল হাসান তিন ফরম্যাটেই বাংলাদেশের এক নম্বর পারফর্মার। ক্রিকেটের তিন ফরম্যাটেই দক্ষতা দেখিয়ে যাচ্ছেন সাকিব। তবে এবার সিদ্ধান্ত বদলে ফরম্যাট কমানোর চিন্তা-ভাবনা করছেন সাকিব। ‘এনটিভি’কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সাকিব বললেন,
‘আমার কাছে কোনটা গুরুত্বপূর্ণ সেটা আমি জানি এবং কোনটার অগ্রাধিকার দিতে হবে সেটাও আমি জানি। আর এখন আসলেই এমন একটা সময় এসেছে যে আমি টেস্ট নিয়ে চিন্তা করছি। এটাই হচ্ছে সমস্যা। আমি আদৌ আর টেস্ট খেলবো কি না। খেললেও কি ভাবে খেলবো।’
‘এমনকি ওয়ানডে ফরম্যাটে যে গুলো পয়েন্ট পদ্ধতিতে হয় সেই গুলায় আমার অংশগ্রহণ দরকার আছে কি না। আসলে আমার কাছে আর কোন অপশন নাই। আমি বলছি না যে টেস্ট ক্রিকেট থেকে সরে দাঁড়াবো। এমনো হতে পারে ২০২২ সালের বিশ্বকাপের পরে আমি আর টি-টোয়েন্টিই না খেলি। তখন ওয়ানডে আর টেস্ট খেললাম। একসাথে তিন ফরম্যাটে খেলা চালিয়ে যাওয়া অসম্ভব। কারণ আপনি যখন ৪০-৪২ দিনের মধ্যে দুইটা টেস্ট খেলেন এটা কোন ভাবেই ফুলফিল হওয়ার মত বিষয় না। স্বাভাবিক ভাবেই এটা অনুপ্রাণিত করে বাছাই করা ম্যাচ খেলার জন্য। যে গুলো নিয়ে বিসিবির সঙ্গে ভালোভাবে একটা পরিকল্পনা করা জরুরি। আর সেই পরিকল্পনা করেই সামনে আগানোই হবে বুদ্ধিমানের মত কাজ। আর এই পরিকল্পনা জানুয়ারির মধ্যে হলেই জানতে পারবো পুরো পরিকল্পনা কি হচ্ছে।’
করোনার আবহে নিরন্তর খেলা চালিয়ে যাওয়া যে কতটা কঠিন তা সেই পরিস্থিতিতে না থাকলে বোঝাটা বেশ মুশকিল। কঠোর বিধিনিষেধে যে খেলা চালিয়ে যাওয়ার পক্ষে একেবারেই নন সাকিব, তা স্পষ্ট করে দিলেন।
করোনার ফলে যে কোনও প্রতিযোগিতা বা সিরিজ শুরুর আগে বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হচ্ছে প্লেয়ারদের। দীর্ঘদিন জৈব সুরক্ষা বলয়ে থাকার ফলে বাড়ে মানসিক চাপ। অনেকে প্লেয়ারই ভুগতে শুরু করেছেন অবসাদে। পরিবার পরিজন ছেড়ে দীর্ঘ দিন এ ভাবে থাকা যে কতটা কঠিন, তা আরও একবার বোঝা গেল সাকিব আল হাসানের কথায়,
‘আমার কাছে মনে হয়েছে,যদি আপনাকে জেল খানায় দিয়ে দেয় যেমন লাইফ থাকবে ঠিক তেমন। জেলখানায় আপনি কারো সাথে কথা বলতে পারবেন। এমন না যে প্লেয়াররা বাইরে ঘুরাঘুরি করে, শপিং মলে যায়, সিনেমা হলে যায়, রাস্তা দিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে তা কিন্তু না। এটা আসলে মেন্টালি যখন জানবেন আপনি চাইলেও বের হতে পারবেন না তখন সমস্যাটা ওখানে। আপনি দেখেন নিউজিল্যান্ড অনূর্ধ্ব-১৯ দল পাঠাবে না বিশ্বকাপে। শুধু মেন্টাল হেলথের কথা চিন্তা করে। তাদের কাছে যেটা মনে হচ্ছে করোনা তাড়াতাড়ি যাওয়ার না। তো আমাদের এর মধ্যে বেঁচে থাকতে হলে আমাদের যেটা করতে হবে এটা উপায় বের করতে হবে। বায়োবাবল বা কোয়ারেন্টাইন হয়তো ভালো সমাধান না।’
বাংলাদেশ দল এখন নিউজিল্যান্ড সফরে, আর দেশসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান উড়ে গেলেন যুক্তরাষ্ট্রে। পরিবারকে সময় দিতেই নিউজিল্যান্ড সফর থেকে নিজেকে বাইরে রাখেন সাকিব। করোনার বায়ো-বাবল ইস্যুতে নাজেহাল বিশ্বের সেরা সেরা ক্রীড়া ব্যক্তিত্বরা। টানা সূচির কারণে থাকতে পারছেন না পরিবারের সাথে। তবে এসবের বিপরীতে যেয়ে সাকিব পর্যাপ্ত সময়টুকুই দিতে চান তাঁর পরিবারকে,
‘যখন আপনার তিনটা ছোট ছোট বাচ্চা থাকবে আর আপনি তাদের সময় দিতে পারবেন না। হঠাৎ তাদের সাথে দেখা হবে ৮-১০ দিনের জন্য তারপর আবার আপনি দেড় থেকে দুই মাসের জন্য বাইরে। আবার ১৫ দিনের জন্য দেখা হবে। খুবই অস্বস্তিকর অবস্থা। এটা বাচ্চাদের বড় হওয়ার পিছনে খুব আনহেলদি, ওদের বড় বিকশিত হওয়ার পিছনে খুব আনহেলদি। তাই আমি নিজেই চাই না আমার বাচ্চারা এই অবস্থায় থাকুক।’