

প্রথম দুই ম্যাচ হারের পর অস্ট্রেলিয়া অলরাউন্ডার অ্যাশটন টার্নার বলেছিলেন খেলার গভীরে গিয়ে সমাধান খুঁজছেন তারা। তবে তৃতীয় টি-টোয়েন্টি একই পরিণতি সফরকারীদের। পরিকল্পনা মাফিক এগিয়েও টাইগার থাবায় বিধ্বস্ত ক্যাঙ্গারুরা। পেন্ডুলামের মত দুলতে থাকা ম্যাচে অস্ট্রেলিয়াকে ১০ রানে হারিয়ে ২ ম্যাচ হাতে রেখেই সিরিজ নিশ্চিত বাংলাদেশের।
এই সিরিজের আগে ১৭ বছরে ৪ বার টি-টোয়েন্টিতে দেখা হয়েছিল দুই দলের। আইসিসি ইভেন্টে দেখা হওয়া সবকটি ম্যাচেই হেরেছে বাংলাদেশ। এবারই প্রথম দ্বিপাক্ষিক সিরিজ খেলতে নেমে টানা তিন জয় টাইগারদের।
জিতলেই ২ ম্যাচ হাতে রেখে বাংলাদেশের সিরিজ জয়, অন্যদিকে সিরিজ বাঁচাতে অস্ট্রেলিয়ার আবশ্যিক জয়। আগের দুই ম্যাচে বাংলাদেশের স্লো উইকেটে নাকানি চুবানি খাওয়া অজিরা এদিন ১২৮ রানের লক্ষ্য তাড়ায় দারুণ শুরুও পায়। মিচেল মার্শের ফিফটিতে পথেই ছিল জয়ের, তবে ঠিক সময়মত জ্বলে উঠে বাংলাদেশকে দুর্দান্ত এক জয় উপহার দেয় বোলাররা।
৪৫ মিনিট দেরিতে শুরু হওয়া ম্যাচে উইকেট বিবেচনায় টস জিতে ফিল্ডিংই নেওয়ার কথা যেকোনো অধিনায়কের। তবে বোলারদের জন্য ভালো একটা সংগ্রহ এনে দিতে বাংলাদেশ দলপতি মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ নিলেন ব্যাটিং। প্রতিপক্ষ অধিনায়কের অবশ্য তাতে খুব একটা ক্ষতি হয়নি, টস জিতলে নিতেন ফিল্ডিংই।
শেষ পর্যন্ত অধিনায়ক রিয়াদের ফিফটিতে ৯ উইকেটে ১২৭ রানে থামে টাইগাররা। রিয়াদের ৫২ রান ছাড়া দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৬ রান সাকিব আল হাসানের ব্যাটে। ইনিংসের শেষ ৩ বলে উইকেট নিয়ে অভিষেকেই হ্যাটট্রিক অজি পেসার নাথান এলিসের। টি-টোয়েন্টিতে অভিষেকেই এটিই প্রথম হ্যাটট্রিক।
লক্ষ্য তাড়ায় নেমে সাবধানী শুরু অস্ট্রেলিয়ার। উইকেট হাতে রেখে শেষদিকে প্রয়োজনীয় রান পুষিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনাতেই হাঁটে সফরকারীরা। পাওয়ার প্লেতে মাত্র ২০ রান তুললেও অবশ্য হারিয়েছে কেবল অধিনায়ক ম্যাথু ওয়েডকে।
অনভিজ্ঞ ব্যাটিং লাইনআপকে ব্যাট হাতে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে চান বলে সিরিজ শুরুর আগে জানিয়েছেন ওয়েড। তবে আজ ওপেনিংয়ে উঠে এসেও হয়েছেন ব্যর্থ (৫ বলে ১)। নাসুম আহমেদের করা ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে হাল্কা টার্ন করা শর্ট বলে ক্যাচ দেন শর্ট ফাইন লেগে।
এরপর সিরিজে প্রথম খেলতে নামা বেন ম্যাকডারমেট ও ধারাবাহিক পারফর্ম করা মিচেল মার্শের ৬৩ রানের জুটিতে চড়ে পথেই থাকে অজিরা। মুস্তাফিজের করা ১৩তম ওভারে জুটি ভাঙার সুবর্ণ সুযোগ পায় বাংলাদেশ।
ফাইন লেগে ম্যাকডারমেটের (তখন ব্যক্তিগত ৩২ ও জুটির ৬০ রান) ক্যাচ মিস করে শরিফুল। তবে ২ ছক্কায় ৪১ বলে ৩৫ রান করা ম্যাকডারমেটকে পরের ওভারেই বোল্ড করেন সাকিব।
তাতে ম্যাচে ফেরে বাংলাদেশ, শেষ ৬ ওভারে ৫৪ রান প্রয়োজন পড়ে অজিদের। ১৫তম ওভারে শরিফুলের স্লোয়ারে মিড অনে ক্যাচ তুলে দেন ময়সেস হেনরিকস (৩ বলে ২)।
আগের দুই ম্যাচে সমান ৪৫ রান করে আউট হওয়া মার্শ আজ ফিফটি তুলে নেন ৪৫ বলে। ফিফটির পর অবশ্য টিকেননি বেশিক্ষণ। শরিফুলের করা ১৮তম ওভারে লং অফে নাইম শেখকে ক্যাচ দেন ৪৭ বলে ৬ চার ১ ছক্কায় ৫১ রান করে। ঐ ওভারে উইকেট হারালেও, দুই চার হাঁকিয়ে অ্যালেক্স ক্যারি ও ড্যান ক্রিশ্চিয়ান সমীকরণ দাঁড় করান ১২ বলে ২৩!
১৯তম ওভারে মুস্তাফিজ খরচ করেছেন মাত্র ১ রান। কাটার-স্লোয়ারে অনেকটা ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি অবস্থা ক্রিজে থাকা ক্যারি-ক্রিশ্চিয়ানের। ৪ ওভারের স্পেলে উইকেট না পেলেও মুস্তাফিজ খরচ করেন মাত্র ৯ রান। শেষ ওভারে অজিদের প্রয়োজন ২২ রান।
শেখ মেহেদীকে প্রথম বলে ক্যারি ছক্কা হাঁকায়, পরের দুই বলে সিঙ্গেল। তবে তৃতীয় বলটি নো হওয়ায় বাড়ে শঙ্কা, ফ্রি হিটে ক্যারি ১ রানের বেশি নিতে পারেনি। পরের ২ বলে কেবল ১ রান। বাংলাদেশ পায় ১০ রানের জয়। ১৫ বলে ক্যারির অপরাজিত ২০ রান কেবল হারের ব্যবধানই কমায়।
প্রথম দুই ম্যাচের মত বাংলাদেশের ওপেনিং জুটি আরেক দফা ব্যর্থ। দলীয় ৩ রানেই বিদায় নেন সৌম্য সরকার ও নাইম শেখ। সিরিজে প্রথম খেলতে নামা অ্যাশটন টার্নারের স্পিন দিয়ে বোলিং শুরু করে অস্ট্রেলিয়া।
ভুগতেও হয় সৌম্য-নাইমকে। ওভারের শেষ বলেতো ক্যাচই তুলে দেন সৌম্য, তবে স্কয়ার লেগে কিছুটা কঠিন ক্যাচ লুফে নিতে পারেননি অ্যালেক্স ক্যারি।
জশ হ্যাজেলউডের করা পরের ওভারেও বেশ ভুগেছেন সৌম্য, বেশ কয়েকবারই ভুল করেছেন বলের লেংথ পড়তে। শেষ বল মোকাবেলা করা নাইম খোঁচা দিয়ে ক্যাচ দেন উইকেটের পেছনে (২ বলে ১)।
পরের ওভারের প্রথম বলে অস্বস্তিতে ভোগা সৌম্যকে (১১ বলে ২) এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেন অ্যাডাম জাম্পা। রিভিউ নিয়েও বাঁচতে পারেননি এই বাঁহাতি।
৩ রানে ২ উইকেট হারানো বাংলাদেশকে পথ দেখায় সাকিব আল হাসান ও অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের ৪৪ রানের জুটি। হ্যাজেলউডের দ্বিতীয় ওভারে ফিরতে পারতেন রিয়াদও (ব্যক্তিগত ৫ রানে)।
শর্ট ফাইন লেগে কঠিন ক্যাচ তালুবন্দী করতে পারেননি ড্যানিয়েল ক্রিশ্চিয়ান। পাওয়ার প্লেতে বাংলাদেশের রান ২ উইকেতে ২৮।
সময়ের সাথে সাথে দুজনে হাত খোলেন। তবে জাম্পার করা ৯ম ওভারে জায়গা বানিয়ে খেলতে চান সাকিব। ব্যাটে-বলে ঠিকঠাক সংযোগ না হওয়ায় ধরা পড়েন লং অফে অ্যাশটন আগারের হাতে (১৭ বলে ৪ চারে ২৬ রান)।
আগের ম্যাচের জয়ের নায়ক আফিফ হোসেন (১৩ বলে ১৯) ক্রিজে এসে সাবলীল শুরু পান। তবে ফিরতে হয় অতিমাত্রায় তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে রান আউটে।
২ ওভারের প্রথম স্পেলে ৬ রান দেওয়া হ্যাজেলউড দ্বিতীয় স্পেল করতে এসেই ফেরান শামীম হোসেনকে (৮ বলে ৩)। তার বিদায়ে ৫ উইকেটে ৮১ রানে পরিণত হয় বাংলাদেশ।
দারুণ এক ছক্কায় ৫ বলে ১১ রান করে রান আউট হন নুরুল হাসান সোহানও। এক পাশ আগলে রাখা রিয়াদ নাথান এলিসের করা ইনিংসের শেষ ওভারের তৃতীয় বলে চার মেরে ফিফটি ছুঁয়েছেন।
৫২ বলে ফিফটি তুলে অবশ্য বোল্ড হয়েছেন পরের বলে। ৫২ রানের ইনিংসে ছিল ৪ চারে। রিয়াদের পর টানা দুই বলে এলিস তুলে নেন মুস্তাফিজু রহমান (০) ও শেখ মেহেদীকে (১১ বলে ৬)।
আর তাতেই পূর্ণ হয় হ্যাটট্রিক। প্রথম ৩ ওভারে ২৯ রান দিয়ে কোনো উইকেট না পাওয়া এলিসের ইনিংস শেষে ফিগার ৪-০-৩৪-৩! ৯ উইকেটে বাংলাদেশের স্কোরবোর্ডে ১২৭।