

সিরিজ জুড়েই বৃষ্টির শঙ্কা, তবে প্রথম দুই টি-টোয়েন্টি মাঠে গড়ায় নির্বিঘ্নেই। সফরকারী অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচ দুটো জিতেও নেয় বাংলাদেশ। জিতলেই টাইগারদের সিরিজ নিশ্চিত এমন ম্যাচে আজ (৬ আগস্ট) তৃতীয় টি-টোয়েন্টিতে মিরপুরে ঠিকই বৃষ্টি হানা দেয়। টসের পর ম্যাচ শুরুতেও বিলম্ব, তবে কমেনি কোনো ওভার। টস জিতে আগে ব্যাট করে অজিদের জন্য ১২৮ রানের লক্ষ্য ছুঁড়ে দিল বাংলাদেশ।
৪৫ মিনিট দেরিতে শুরু হওয়া ম্যাচে উইকেট বিবেচনায় টস জিতে ফিল্ডিংই নেওয়ার কথা যেকোনো অধিনায়কের। তবে বোলারদের জন্য ভালো একটা সংগ্রহ এনে দিতে বাংলাদেশ দলপতি মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ নিলেন ব্যাটিং। প্রতিপক্ষ অধিনায়কের অবশ্য তাতে খুব একটা ক্ষতি হয়নি, টস জিতলে নিতেন ফিল্ডিংই।
শেষ পর্যন্ত অধিনায়ক রিয়াদের ফিফটিতে ৯ উইকেটে ১২৭ রানে থামে টাইগাররা। রিয়াদের ৫২ রান ছাড়া দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৬ রান সাকিব আল হাসানের ব্যাটে। ইনিংসের শেষ ৩ বলে উইকেট নিয়ে অভিষেকেই হ্যাটট্রিক অজি পেসার নাথান এলিসের। টি-টোয়েন্টিতে অভিষেকেই এটিই প্রথম হ্যাটট্রিক।
নিজেদের শক্তির মূল জায়গা পেস হলেও বাংলাদেশের কন্ডিশন ও বৃষ্টির পর ডাম্প উইকেট বিবেচনায় এদিন স্পিন দিয়ে বোলিং শুরু করে অস্ট্রেলিয়া। সিরিজে প্রথম খেলতে নামা অ্যাশটন টার্নারের প্রথম ওভারে ভুগতেও হয় দুই টাইগার ওপেনার নাইম শেখ ও সৌম্য সরকারকে। ওভারের শেষ বলেতো ক্যাচই তুলে দেন সৌম্য, তবে স্কয়ার লেগে কিছুটা কঠিন ক্যাচ লুফে নিতে পারেননি অ্যালেক্স ক্যারি।
জশ হ্যাজেলউডের করা পরের ওভারেও বেশ ভুগেছেন সৌম্য, বেশ কয়েকবারই ভুল করেছেন বলের লেংথ পড়তে। শেষ বলে আরেক ওপেনার নাইম তো ক্যাচ দেন উইকেটের পেছনে ম্যাথু ওয়েডকে। অফ স্টাম্পের খানিক বাইরের বলে খোঁচা মেরে ফিরেছেন ২ বলে ১ রান করে।
ইনিংসের তৃতীয় ও নিজের প্রথম বল করতে এসেই অস্বস্তিতে ভোগা সৌম্যকে (১১ বলে ২) এলবিডব্লিউ’র ফাঁদে ফেলেন অ্যাডাম জাম্পা। রিভিউ নিয়েও বাঁচতে পারেননি এই বাঁহাতি। জিম্বাবুয়েতে দারুণ সিরিজ কাটানো সৌম্য টানা ৩ ম্যাচেই হলে ব্যর্থ। পরপর দুই বলে উইকেট হারায় বাংলাদেশ, ৩ রানেই নেই ২ উইকেট।
হ্যাজেলউডের দ্বিতীয় ওভারে ফিরতে পারতেন অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদও (ব্যক্তিগত ৫ রানে)। শর্ট ফাইন লেগে কঠিন ক্যাচ তালুবন্দী করতে পারেননি ড্যানিয়েল ক্রিশ্চিয়ান। সাকিব আল হাসান ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ পাওয়ার প্লেতে আর কোনো উইকেট না হারিয়ে স্কোরবোর্ডে তোলেন ২৮ রান।
সময়ের সাথে সাথে দুজনে হাত খুলে খেলতেও শুরু করেন। ৮ম ওভারে মিচেল মার্শকে হাঁকান ৩ চার। তবে জাম্পার করা ৯ম ওভারের ব্যাকফুটে গিয়ে উড়িয়ে মারতে চান সাকিব। ব্যাটে-বলে ঠিকঠাক সংযোগ না হওয়ায় ধরা পড়েন লং অফে অ্যাশটন আগারের হাতে। খেলেছেন ১৭ বলে ৪ চারে ২৬ রানের ইনিংস। ভাঙে ৪৪ রানের জুটি।
ক্রিজে আসা নতুন ব্যাটসম্যান আফিফ হোসেন ১০ম ওভারে আগারকে স্লগ সুইপে হাঁকান ছক্কা। ১০ ওভারে স্কোরবোর্ডে ৩ উইকেটে ৬০ রান। আফিফ-রিয়াদ রানের গতি বাড়াতে শুরু করলেও রান আউটে কাটা পড়েন আফিফ। কাভারে ঠেলে দ্রুত রান নিতে গিয়ে অ্যালেক্স ক্যারির সরাসরি থ্রোতে উইকেট বিলিয়ে ফেরেন ১৩ বলে ১৯ রান করে।
২ ওভারের প্রথম স্পেলে ৬ রান খরচ করা হ্যাজেলউড দ্বিতীয় স্পেল করতে এসেই ফেরান শামীম হোসেনকে (৮ বলে ৩)। তার বিদায়ে ৫ উইকেটে ৮১ রানে পরিণত হয় বাংলাদেশ।
নুরুল হাসান সোহানকে নিয়ে সাবলীল ব্যাটিংই করছিলেন অধিনায়ক রিয়াদ। ১৫তম ওভারে জাম্পার অফ স্টাম্পের বাইরের বলকে লং অন দিয়ে দারুণ এক ছক্কায় পরিণত করেন সোহান। তবে রিয়াদের অতি তাড়াহুড়োয় ময়সেস হেনরিকসের সরাসরি থ্রোতে সোহানকে রান আউট হতে হয় ৫ বলে ১১ রান করে।
এক পাশ আগলে রাখা অধিনায়ক রিয়াদ নাথান এলিসের করা ইনিংসের শেষ ওভারের তৃতীয় বলে চার মেরে ফিফটি ছুঁয়েছেন। ৫২ বলে ফিফটি তুলে অবশ্য ফিরেছেন পরের বলে বোল্ড হয়ে। ৫২ রানের ইনিংসটি সাজিয়েছেন ৪ চারে।
এলিস এরপর তুলে নেন মুস্তাফিজু রহমান (০) ও শেখ মেহেদীকে (১১ বলে ৬)। আর তাতেই পূর্ণ হয় হ্যাটট্রিক। প্রথম ৩ ওভারে ২৯ রান দিয়ে কোনো উইকেট না পাওয়া এলিসের ইনিংস শেষে ফিগার ৪-০-৩৪-৩! সমান দুইটি করে উইকেট জাম্পা ও হ্যাজেলউডের।