

সিরিজ শুরুর দুই সপ্তাহ আগে থেকে কত কত আলোচনা, যার বেশিরভাগই ছিল বায়ো-বাবল, অস্ট্রেলিয়ার দেওয়া নানা শর্ত নিয়ে। সব আলোচনা-সমালোচনা পেছনে ফেলে মাঠের ক্রিকেট ফিরতেই বাংলাদেশের দুর্দশার চিত্র সামনে এলো আরও একবার। মিরপুরে প্রথম টি-টোয়েন্টিতে আগে ব্যাট করা বাংলাদেশ দাঁড়াতেই পারেনি অজিদের সামনে।
৮ জন স্বীকৃত ব্যাটসম্যান নিয়ে একাদশ সাজানো বাংলাদেশের শুরুটা হয়েছে বীভৎস। অন্তত আধুনিক ক্রিকেটে ওয়ানডেতেও এতটা মন্থর ব্যাটিং দেখা যায় খুব কমই।
ক্রিজে টিকেও কার্যকর ইনিংস খেলতে পারেননি নাইম শেখ (২৯ বলে ৩০), সাকিব আল হাসান (৩৩ বলে ৩৬, অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ (২০ বলে ২০)। শেষদিকে আফিফ হোসেনের ১৬ বলে ২৫ রানে ৭ উইকেটে ১৩১ রানের পুঁজি পায় স্বাগতিকরা।
টস হেরে ব্যাট করতে নেমে শুরুটাই মন্থর বাংলাদেশের। দুই ওপেনার নাইম শেখ ও সৌম্য সরকারের জুটিতে এসেছে ১৫ রান। পাওয়ার প্লের ৬ ওভারে ১ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ তুলেছে মাত্র ৩৩ রান। যেখানে নাইমের অবদানই ২৭।
মিচেল স্টার্কের অফ স্টাম্পের বাইরে করা ইনিংসের প্রথম বলেই পরাস্ত হন নাইম। তবে ফুলার লেংথে করা পরের বলেই ফ্লিক করে মিড উইকেট দিয়ে দারুণ ছক্কা হাঁকিয়ে জবাব দেন এই বাঁহাতি। স্টার্কের ঐ ওভারে এরপর অবশ্য আর কোনো রান আসেনি। পরের ওভারে জশ হ্যাজেলউডও ভালোই পরীক্ষা নেন নাইম-সৌম্যের।
ইনিংসের তৃতীয় ওভারেই আক্রমণে আসেন লেগ স্পিনার অ্যাডাম জাম্পা। ওভারের শেষ বলে নাইম হাঁকান চার। তবে চতুর্থ ওভারে হ্যাজেলউড অস্বস্তিতে ফেলে সৌম্যকে বোল্ড করেন।
দ্বিতীয় বলে অজি এই পেসারের দেওয়া শর্ট বলে আপার কাট খেলতে গিয়ে শেষ মুহূর্তে বিভ্রান্ত হন সৌম্য। পরের বলে জায়গা বানিয়ে আবারও কাট খেলার চেষ্টা, এবার ব্যাট হয়ে বল ভাঙে স্টাম্প। ৯ বলে ২ রানেই সন্তুষ্ট থাকতে হয় জিম্বাবুয়েতে দারুণ ছন্দে থাকা টাইগার বাঁহাতি ব্যাটসম্যানকে।
সৌম্য বিদায় নিলেও স্টার্কের করা পঞ্চম ওভারে নাইম মিড উইকেট দিয়ে হাঁকান আরও এক ছক্কা। তবে টিকতে পারেননি বেশিক্ষণ জাম্পার করা ৭ম ওভারে আগে থেকে স্থির হয়ে রিভার্স সুইপ খেলতে গিয়ে হয়েছেন বোল্ড। ২৯ বলে সমান ২ চার, ছক্কায় ৩০ রান করে আউট হলে ভাঙে সাকিবের সাথে ২২ রানের জুটি।
১০ ওভারে স্কোরবোর্ডে ২ উইকেটে ৫৮ রানই বলে দেয় কতটা মন্থর খেলেছে বাংলাদেশ। যেখান থেকে আর আহামরি কিছু করে দেখাতে পারেনি টাইগার ব্যাটসম্যানরা।
৩৭ রানে ২ উইকেট হারানো বাংলাদেশকে আশা দেখায় মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও সাকিব আল হাসানের ৩৬ রানের জুটি। জীবন পেয়েও ২০ রানের বেশি করতে পারেননি মাহমুদউল্লাহ।
বাঁহাতি স্পিনার অ্যাশটন আগারের করার ১০ম ওভারে ব্যক্তিগত ৫ রানে জীবন পান অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। অফ স্টাম্পের বাইরের বলে ড্রাইভ খেলতে চেয়েছেন টাইগার দলপতি, প্রথম স্লিপে প্রস্তুত ছিলেন না অ্যাশটন টার্নার।
পরে ফিরেছেন হ্যাজেলউডকে ডাউন দ্য ট্র্যাকে এসে উড়িয়ে মারতে গিয়ে, দারুণ এক ক্যাচ নেন ময়েসেস হেনরিকস। নতুন ব্যাটসম্যান নুরুল হাসান সোহান (৩) আউট হয়েছে বাজে এক শট খেলে, অ্যান্ড্রু টাইয়ের ওভার পিচড ডেলিভারিকে সীমানা ছাড়া করতে গিয়ে মিচেল মার্শকে ক্যাচ দেন ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে।
এক পাশ আগলে রেখে দলকে পথ দেখানোর চেষ্টা করা সাকিব আল হাসানও খুব বেশি কিছু করতে পারেননি। ৩৩ বলে ৩৬ রানের ইনিংস থামে হ্যাজেলউডের নিচু হওয়া বলে বোল্ড হলে। ঐ ওভারেই অবশ্য তাকে সহজ রান আউটের সুযোগ পেয়েও লুফে নেননি হ্যাজেলউড।
১৭তম ওভারে দলীয় ১০০ পেরোনো বাংলাদেশ সাকিবের বিদায়ে পরিণত হয় ৫ উইকেটে ১০৪ রানে। মিচেল স্টার্কে নিখুঁত ইয়র্কারে বোল্ড হয়ে শামীম পাটোয়ারি করতে পারেননি ৪ রানের বেশি।
ইনিংসের শেষ বলে আউট হওয়ার আগে আফিফের ব্যাট থেকে আসে ১৭ বলে ৩ চারে ২৩ রান। আর তাতে ৭ উইকেটে ১৩১ রান পর্যন্ত যেতে পারে টাইগাররা। আফিফকে বোল্ড করে ক্যারিয়ারের ৫০তম আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি উইকেট পূর্ণ করেন স্টার্ক।
অজিদের হয়ে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে এই বাঁহাতি পেসারই প্রথম এই মাইলফলক ছুঁলেন। ৩৩ রানে তার শিকার ২ উইকেট। ২৪ রান খরচায় সর্বোচ্চ ৩ উইকেট অবশ্য হ্যাজেলউডের।