২০১৯ বিশ্বকাপে ব্যাট হাতে সাকিব আল হাসানের চোখ ধাঁধানো পারফরম্যান্স। এরপর নিষেধাজ্ঞায় কেটে গেছে এক বছর, ফিরে এসে ব্যাট হাতে বিবর্ণ, অচেনা সাকিব। লম্বা একটা সময় নিজের ছায়া হয়ে থাকা টাইগার অলরাউন্ডার রানে ফিরলেন দলের অতি প্রয়োজনের সময়, ঠান্ডা মাথায় জেতালেন ম্যাচ। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ৯৬ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলা সাকিব জানালেন সমস্যাটা কোথায় ছিল।
নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে সাকিব ঘরোয়া লিগে ফেরেন গত বছর বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপে। যেখানে ৯ ম্যাচে ১২.২২ গড়ে তার রান সাকূল্যে ১১০। এরপর জানুয়ারিতে ঘরের মাঠে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে অবশ্য ছন্দেই ছিলেন। তিন ম্যাচে ১ ফিফটিতে রান করেছেন ১১৩, ছিল অপরাজিত ৪৩ রানের ইনিংসও।
ক্যারিবিয়ায়নদের বিপক্ষে চট্টগ্রাম টেস্টে এক ইনিংসে ব্যাট করার পর চোটে পড়ে সিরিজ থেকেই ছিটকে যান। তবে ঐ ইনিংসেও করেছেন ৬৮ রান।
কিন্তু এরপরই ব্যাট হাতে মলিন পারফরম্যান্স সঙ্গী। পারিবারিক কারণে যাননি নিউজিল্যান্ড সফরে, আইপিএল খেলতে ছুটি নেন শ্রীলঙ্কা সফরের টেস্ট সিরিজ থেকে।
আইপিএলে গিয়েও ব্যাট যেন তার কথা শুনছিলনা। তিন ম্যাচে করতে পেরেছেন মাত্র ২৬ রান। করোনা প্রভাবে আইপিএল স্থগিত হওয়ার আগে কোলকাতা নাইট রাইডার্সের একাদশেও জায়গা হারান।
ঘরের মাঠে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজে রান মাত্র ২৩! এরপরেই শুরু হয় ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগ (ডিপিএল)। মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের হয়ে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের এই টুর্নামেন্টে ৮ ম্যাচে করতে পেরেছেন ১২০ রান।
জিম্বাবুয়ে সফরে গিয়ে টেস্টের আগে দুইদিনের প্রস্তুতি ম্যাচে অবশ্য রান পেয়েছেন। খেলেছেন ঝড়ো ৭৪ রানের ইনিংস। কিন্তু মূল ম্যাচে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে এক ইনিংস ব্যাট করে রান মাত্র ৩।
ওয়ানডে সিরিজ শুরুর আগে একমাত্র প্রস্তুতি ম্যাচে ৩৭ রান করলেও প্রথম ওয়ানডেতে থেমেছেন ১৯ রানে। ব্যাট হাতে টানা এই ব্যর্থতার সময়টায় বল হাতে সাকিব ছিলেন নিজের চেনা রূপেই। প্রতি সিরিজ, টুর্নামেন্টেই উইকেট নিয়েছেন নিজস্ব ঢঙে।
ব্যাট হাতেও সাকিবের বাজে সময় পার হওয়া ইনিংসের দেখা মিলেছে হারারেতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে। খাদের কিনারা থেকে টেনে তুলে ৯৬ রানের অপরাজিত ইনিংসে দলকে এনে দেন ৩ উইকেটের জয়।
গতকাল (১৮ জুলাই) ম্যাচ শেষে সাকিব সংবাদ সম্মেলনে জানান এই পুরো সময়টায় টেকনিক্যাল সমস্যা নয় ভুগেছেন মানসিকভাবে। ম্যাচের আগেই কিছু পরিবর্তন এনেছেন, সাথে নিজেকে ফিরে পাওয়ার পরিশ্রম তো ছিলই।
তিনি বলেন, ‘পরিশ্রম তো করতেই হয়, তবে মাইন্ডসেটটাও অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আমার মনে হয় আমি অনেক বেশি চিন্তা করছিলাম, যা এই ম্যাচের আগে পরিবর্তন করেছি। কিছু জিনিস এই ম্যাচের আগে আমাকে মনোযোগ ধরে রাখতে সহায়তা করেছে। চেষ্টা করব এই মনোযোগ যেন ধরে রাখতে পারি।’
‘এতদিন খেলার পর এখন যে অবস্থায় আছি, খুব বেশি টেকনিক্যাল সমস্যা হয় না। মানসিক সমস্যাই বেশি হয়। মানসিক গেম যদি নিজের সাথে নিজে জিততে পারি তাহলে মনে হয় আমার জন্য নিয়মিত রান করা সম্ভব।’
আগের ম্যাচে ৫ উইকেট নিয়ে দলের জয়ে রেখেছেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। গতকাল বল হাতে ২ উইকেটের সাথে ব্যাট হাতে অতি প্রয়োজনীয় ৯৬ রানের হার না মানা ইনিংস।
সাকিব বলছেন ব্যাটিং-বোলিং কোনটাই আলাদা করতে চান না, দলের জয়ে অবদান রাখাই তার কাছে মূখ্য, ‘দলের জেতার জন্য বড় অবদান ছিল, সেদিন থেকে খুশি। তবে কোনোটা থেকে কোনোটা কম না। সবসময় দলে অবদান রাখার চেষ্টা করি। দুইদিনই তা করতে পেরে খুবই খুশি।’