

৪৭৭ রানের পাহাড়সম লক্ষ্য ছুঁড়ে দিয়ে চতুর্থ দিনই ৩ উইকেট তুলে নিয়ে জয়ের পথ খানিক এগিয়ে রেখেছিল বাংলাদেশ। হারারে স্পোর্টস ক্লাবে আজ (১১ জুলাই) পঞ্চম দিন চা বিরতির আগেই স্বাগতিকদের গুটিয়ে দিয়ে ২২০ রানের জয় তুলে নিল টাইগাররা।
২২০ রানের এই জয় বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জয়। এর আগে দেশের বাইরে সবচেয়ে বড় জয় ছিল জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ২০১৩ সালে একই ভেন্যুতে, সেবার ১৪৩ রানে জিতেছিল টাইগাররা।
ম্যাচে দুই ইনিংস মিলিয়ে মেহেদী হাসান মিরাজের উইকেট ৯ টি, খরচ করেছেন ১৪৮ রান। যা বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশী কোনো বোলারের সেরা বোলিং ফিগার। আগের সেরা পেসার রবিউল ইসলাম শিবলুর, ২০১৩ সালে একই প্রতিপক্ষের বিপক্ষে একই ভেন্যুতে। ৫৭ ওভার বল করে শিবলু ৯ উইকেট নেন ১৫৫ রান খরচায়।
সর্বশেষ ১০ টেস্টে বাংলাদেশের এটি দ্বিতীয় জয়। বাকি জয়টিও জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেই, গত বছর ফেব্রুয়ারিতে মিরপুরে। এর বাইরে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ৭ ম্যাচ সহ বাকি ৮ ম্যাচে অর্জন বলতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে একটি ড্র। হারতে হয়েছে বাকি ম্যাচগুলোতে।
১৭ মাস পর টেস্ট দলে ফেরা মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ এই ম্যাচের মাঝপথেই টেস্ট ক্যারিয়ারকে বিদায় বলে দিলেন। অথচ প্রথম ইনিংসে দলের বিপর্যয়ে ১৫০ রানের হার না মানা ইনিংসে ক্যারিয়ারকে নতুন মোড় দেওয়ার আভাসই দিয়েছিলেন।
নিজের ৫০তম ও শেষ টেস্টে নিজে সেঞ্চুরি হাঁকালেন, দল পেল জয়। বিদায়টা মাহমুদউল্লাহর জন্য দারুণ সব উপলক্ষ্যে মোড়ানোই ছিল। তবে হুট করে তার অবসরের ঘোষণায় অন্দরমহলে খারাপ কিছুর বার্তাই দেয়।
৪৭৭ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে জিম্বাবুয়ে আগেরদিন ৩ উইকেট হারিয়ে ১৪০ রান তোলে। আজ লাঞ্চের আগেই তাসকিন আহমেদ ও মেহেদী হাসান মিরাজের তোপে হারিয়েছে আরও ৪ উইকেট।
১৬৯ রানে ৭ উইকেট হারানো জিম্বাবুয়ে লাঞ্চে যায় ৭ উইকেটে ১৭৬ রান তুলে। ডোনাল্ড টিরিপানো ২৭ ও ভিক্টর নিয়াউচি ২ রানে অপরাজিত ছিলেন।
লাঞ্চের পর দুজনে অবিচ্ছেদ্য ছিলেন আরও ৮ ওভার। তবে তাসকিনের চতুর্থ শিকার হয়ে নিয়াউচি আউট হলে ভাঙে ২৯ রানের জুটি। ৫৪ বলে ১০ রান করে নিয়াউচি ক্যাচ দেন সাকিবকে।
এরপর ব্লেসিং মুজারাবানিকে নিয়ে টিরিপানো ক্রিজে কাটিয়েছেন লম্বা সময়। তুলে নিয়েছেন ফিফটিও, অথচ ফিরতে পারতেন দিনের শুরুতেই। আগেরদিন নাইট ওয়াচম্যান হিসেবে নামা টিরিপানো ব্যক্তিগত ১৮ রানে জীবন পান মিরাজের বলে সাকিব স্লিপে ক্যাচ ছাড়লে।
মুজারাবানি-টিরিপানো ৯ম উইকেট জুটিতে ৪১ রান তুলেও ফেলে। তবে পেসার এবাদত হোসেন আলাদা করেছেন দুজনকে। ইনিংসের ৯০তম ওভারের প্রথম বলে টিরিপানোকে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিতে বাধ্য করেন।
ক্যারিয়ারের তৃতীয় টেস্ট ফিফটিকে ৫২ রানের বেশি টেনে নিতে পারেননি। ১৪৪ বলে ৬ চারে সাজিয়েছেন ইনিংসটি।
তবে শেষ উইকেট জুটিতে মুজারাবানি ও রিচার্ড এনগারাভাও বাংলাদেশের বোলারদের অপেক্ষা বাড়িয়েছে। শেষ পর্যন্ত চা বিরতির খানিক আগে এনগারাভাকে (১০) বোল্ড করে জিম্বাবুয়ের কফিনে শেষ পেরেক ঠুকেন মিরাজ।
২৫৬ রানে অলআউট হয়েছে স্বাগতিকরা, ৫১ বলে ৪ চারে মুজারাবানি অপরাজিত ছিলেন ৩০ রানে। বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ ৪ টি করে উইকেট মিরাজ ও তাসকিনের। একটি করে উইকেট ভাগাভাগি করেন সাকিব ও এবাদত।
সংক্ষিপ্ত স্কোরঃ
বাংলাদেশ ১ম ইনিংসে ৪৬৮/১০ (১২৬), সাইফ ০, সাদমান ২৩, শান্ত ২, মুমিনুল ৭০, মুশফিক ১১, সাকিব ৩, লিটন ৯৫, মাহমুদউল্লাহ ১৫০*, মিরাজ ০, তাসকিন ৭৫, এবাদত ০; মুজারাবানি ২৯-৪-৯৪-৪, এনগারাভা ২৩-৫-৮৩-১, টিরিপানো ২৩-৫-৫৮-২, নিয়াউচি ১৭-১-৯২-২।
জিম্বাবুয়ে ১ম ইনিংসে ২৭৬/১০ (১১১.৫), শুম্বা ৪১, কাইতানো ৮৭, টেইলর ৮১, মায়ের্স ২৭, মারুমা ০, কায়া ০, চাকাবভা ৩১*, টিরিপানো ২, নিয়াউচি ০, মুজারাবানি ২, এনগারাভা ০; তাসকিন ২৪-১০-৪৬-১, সাকিব ৩৪.৫-১০-৮২-৪, মিরাজ ৩১-৫-৮২-৫
বাংলাদেশ ২য় ইনিংসে ২৮৪/১ (৬৭.৪ ওভারে ইনিংস ঘোষণা), সাদমান ১১৫*, সাইফ ৪৩, শান্ত ১১৭*; এনগারাভা ৯-০-৩৬-১
জিম্বাবুয়ে ২য় ইনিংসে ২৭৬/১০ (১১১.৫), শুম্বা ১১, কাইতানো ৭, টেইলর ৯২, মায়ের্স ২৬, টিরিপানো ৫২, মারুমা ০, কায়া ০, চাকাবভা ১, নিয়াউচি ১০, মুজারাবানি ৩০*, এনগারাভা ১০; সাকিব ২৫-৯-৪৪-১, মিরাজ ৩০.৪-১০-৬৬-৪, তাসকিন ২৪-৪-৮২-৪, এবাদত ১১-২-৩৯-১
বাংলাদেশ ২২০ রানে জয়ী
ম্যাচসেরাঃ মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ (বাংলাদেশ)।