

হারারে টেস্টে ব্যাটে-বলে দুই দফা ঝলক দেখিয়েও নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে জিম্বাবুয়ে। টপ-মিডল অর্ডারের ধসের পরও লিটন দাস, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, তাসকিন আহমেদের বীরত্বে ৪৬৮ রানের সংগ্রহ বাংলাদেশের। এরপর ব্যাট হাতে ভালোই জবাব দিচ্ছিল জিম্বাবুয়ে, ব্রেন্ডন টেইলর ও অভিষিক্ত তাকুজওয়ানাশে কাইতানোর ব্যাটে কঠিন সময়ই পার করছিল টাইগার বোলাররা। তবে সাকিব আল হাসান-মেহেদী হাসান মিরাজের ঘূর্ণিতে জয়ের স্বপ্নই উঁকি দিচ্ছে বাংলাদেশ শিবিরে।
বাংলাদেশের ৪৬৮ রানের জবাবে সাকিবের ৪ ও মিরাজের ৫ উইকেট শিকারে ২৭৬ রানেই গুটিয়ে গেল জিম্বাবুয়ে। অধিনায়ক টেইলরের ৮১ ও কাইতানোর ৮৭ রান ছাড়া সেভাবে দাঁড়াতেই পারেনি কেউ।
১৯২ রানে এগিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করা বাংলাদেশ দিন শেষ করেছে বিনা উইকেটে ৪৫ রান তুলে। ইতোমধ্যে সফরকারীদের লিড ২৩৭ রানের।
প্রথম ইনিংসে দৃষ্টিকটুভাবে বোল্ড হওয়া সাইফ হাসান দ্বিতীয় ইনিংসে খেলার চেষ্টা করছেন বলের মেধা বিচার করে। ১৭ ওভার ব্যাট করে সাদমান ইসলামের সাথে ৪৫ রানের উদ্বোধনী জুটিতে অবিচ্ছেদ্য আছেন। ৫২ বলে ৩ চারে সাইফ ২০ ও সমান বল খেলে ২ চারে সাদমান অপরাজিত ২২ রানে।
৫ উইকেটে ২৪৪ রান নিয়ে চা বিরতিতে যায় জিম্বাবুয়ে। তাকুজওয়ানাশে কাইতানো ৮২ ও রেগিস চাকাবভা ১০ রানে অপরাজিত ছিলেন। চা বিরতির পর জিম্বাবুয়ের ইনিংস টিকে কেবল ১৬.৫ ওভার।
চা বিরতির পর বাংলাদেশী বোলারদের ভালোই সামলাচ্ছিলেন কাইতানো ও রেগিস চাকাবভা। দুজনে মিলে জুটিতে ৩২ রান যোগও করে ফেলেন। তবে সেঞ্চুরির দ্বারপ্রান্তে গিয়ে টানা তিন সেশনের বেশি ব্যাট করা কাইতানোর মনসংযোগে বিচ্যুতি ঘটে। মিরাজের বলে খানিক আলসেমি মোড়ানো শটে ক্যাচ দেন উইকেটের পেছনে লিটন দাসকে।
তৃতীয় জিম্ববাবুয়ে ব্যাটসম্যান হিসেবে অভিষেকে সেঞ্চুরির সুযোগ থাকলেও তা মিস করেন। তার আগেই অবশ্য ধৈর্যের খেলা টেস্টে নিজের সামর্থ্যের ছাপ রেখেছেন। ৩১১ বলে ৯ চারে সাজান ৮৭ রানের ইনিংসটি।
নিজের পরের টানা ৩ ওভারে মিরাজ তুলে নেন ডোনাল্ড টিরিপানো (২), ভিক্টর নিয়াউচিকে (০) ও ব্লেসিং মুজারবানিকে (০)। মুজারাবানিকে অফ স্টাম্পের বাইরে ফেলা বলে বিশাল এক টার্নে বোল্ড করে পূর্ণ করেন নিজের ৫ উইকেট। বিদেশের মাটিতে এটি তার দ্বিতীয় ৫ উইকেট শিকার, সব মিলিয়ে ৮ম।
তার টানা ৪ শিকারে ৫ উইকেটে ২৬১ থেকে ৯ উইকেটে ২৬৯ রানে পরিণত হয় জিম্ববাবুয়ে। এরপর সাকিবের চতুর্থ শিকার হয়ে রিচার্ড এনগারাভা (০) স্লিপে নাজমুল হোসেন শান্তকে ক্যাচ দিলে ২৭৬ রানেই গুটিয়ে যায় স্বাগতিকরা। ১৫ রানে শেষ ৫ উইকেট ও ৪১ রানে শেষ ৮ উইকেট হারিয়েছে ব্রেন্ডন টেইলরের দল। ততক্ষণে অবশ্য ফলো অন এড়িয়েছে জিম্বাবুয়ে।
রেগিস চাকাবভা অপরাজিত ছিলেন ৭১ বলে ৩১ রানে। বাংলাদেশের হয়ে ৫ উইকেট শিকারে মিরাজের খরচ ৮২ রান। সমান রান খরচায় সাকিবের শিকার ৪ উইকেট। তাসকিন একমাত্র উইকেটটি নেন ৪৬ রান খরচায়।
দিনের প্রথম সেশন অবশ্য জিম্বাবুয়েরই ছিল। ১ উইকেটে ১১৪ রান নিয়ে দিনদিন শুরু করা জিম্ববাবুয়ে লাঞ্চে যায় ২ উইকেটে ২০৯ রান তুলে। সেঞ্চুরির কাছাকাছি গিয়েও তাড়াহুড়ো করে উইকেট বিলিয়ে আসে অধিনায়ক ব্রেন্ডন টেইলর, মিরাজের প্রথম শিকার হয়ে থামেন ৮১ রানে।
অবশ্য অন্য প্রান্তে অবিচল ছিলেন কাইতানো, লাঞ্চে যান ৬৩ রানে অপরাজিত থেকে। লাঞ্চের পরের সেশনেই সাকিব-তাসকিনের তোপে ৩ উইকেট হারায় স্বাগতিকরা। সেশনে রান তুলতে পেরেছিল মাত্র ৩৫, অবশ্য তখনো ৮২ রানে ব্যাট করছিলেন কাইতানো।
সংক্ষিপ্ত স্কোর (৩য় দিন শেষে):
বাংলাদেশ ১ম ইনিংসে ৪৬৮/১০ (১২৬), সাইফ ০, সাদমান ২৩, শান্ত ২, মুমিনুল ৭০, মুশফিক ১১, সাকিব ৩, লিটন ৯৫, মাহমুদউল্লাহ ১৫০*, মিরাজ ০, তাসকিন ৭৫, এবাদত ০; মুজারাবানি ২৯-৪-৯৪-৪, এনগারাভা ২৩-৫-৮৩-১, টিরিপানো ২৩-৫-৫৮-২, নিয়াউচি ১৭-১-৯২-২।
জিম্বাবুয়ে ১ম ইনিংসে ২৭৬/১০ (১১১.৫), শুম্বা ৪১, কাইতানো ৮৭, টেইলর ৮১, মায়ের্স ২৭, মারুমা ০, কায়া ০, চাকাবভা ৩১*, টিরিপানো ২, নিয়াউচি ০, মুজারাবানি ২, এনগারাভা ০; তাসকিন ২৪-১০-৪৬-১, সাকিব ৩৪.৫-১০-৮২-৪, মিরাজ ৩১-৫-৮২-৫
বাংলাদেশ ২য় ইনিংসে ৪৫/০ (১৭), সাদমান ২২*, সাইফ ২০*
বাংলাদেশ ১ম ইনিংসে ২৩৭ রানে এগিয়ে।