

আগেরদিন লিটন দাসকে সঙ্গ দিয়ে দলের বিপর্যয় কাটিয়েছেন ১৭ মাস পর টেস্ট খেলতে নামা মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। আজ দ্বিতীয় দিন তাসকিন আহমেদকে নিয়ে রেকর্ড জুটিতে দলকে এনে দেন বড় সংগ্রহই। দিনের শেষ সেশনে ব্যাট করতে নামা জিম্বাবুয়েও জবাবটা ভালোই দিচ্ছে।
মাহমুদউল্লাহর ক্যারিয়ার সেরা হার না মানা ১৫০ রানের সাথে তাসকিনের ৭৫ রানের ইনিংসে বাংলাদেশের সংগ্রহ ৪৬৮। যে পথে ৯ম উইকেটে রেকর্ড ১৯১ রানের জুটি দুজনের।
জবাবে ১ উইকেটে ১১৪ রান নিয়ে দিন শেষে করেছে জিম্বাবুয়ে। স্বাগতিকরা এখনো পিছিয়ে আছে ৩৫৪ রানে। অধিনায়ক ব্রেন্ডন টেইলর ৩৭ ও তাকুজওয়ানাশে কাইতানো অপরাজিত ৩৩ রানে।
জিম্বাবুয়ে দুই ওপেনারকে খুব একটা অস্বস্তিতে পড়তে হয়নি বাংলাদেশী বোলারদের সামনে। দুই পেসার তাসকিন আহমেদ ও এবাদত হোসেনের সাথে ৯ম ওভারে আক্রমণে আসা সাকিব আল হাসানকেও সামলেছেন দারুণভাবে।
ইনিংসের ২১তম ওভারে আক্রমণে আসেন আরেক স্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজ। অবশ্য তাতেও খুব একটা ভোগানো যায়নি মিল্টন শুম্বা ও তাকুজওয়ানাশে কাইতানোকে। ২২তম ওভারেই জুটির ফিফটি ছুঁয়েছে দুজনে।
তবে নিজের দ্বিতীয় স্পেল করতে এসেই ৬১ রানের উদ্বোধনী জুটি ভাঙেন সাকিব। এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলে ৮৩ বলে ৪১ রান করা বাঁহাতি ব্যাটসম্যান শুম্বাকে সাজঘরের পথ দেখান।
শুম্বা ফিরলেও নতুন ব্যাটসম্যান অধিনায়ক ব্রেন্ডন টেইলর ক্রিজে এসেই সহজাত ব্যাটিং করেন। সাকিব-মিরাজদের বাউন্ডারি হাঁকিয়েছেন কোনো প্রকার জড়তায় পড়া ছাড়াই।
টেইলরকে পেয়ে কিছুটা খোলস ছেড়ে বের হন কাইতানোও। সাকিবকে আগে থেকেই পড়তে পেরে খেলেছেন সুইপ, মিরাজকে জোনে পেয়ে কাভার দিয়ে মেরেছেন বাউন্ডারি। তাসকিনের করা দিনের শেষ ওভারে টেইলর হাঁকিয়েছেন ৩ বাউন্ডারি।
৪১ ওভার ব্যাট করে ১ উইকেট হারিয়ে ১১৪ রান তুলে দিন শেষ করে জিম্ববাবুয়ে। টেইলর ৪৬ বলে ৩৭ ও কাইতানো ১১৭ বলে ৩৩ রানে অপরাজিত আছেন।
এর আগে ৮ উইকেটে ২৯৪ রান নিয়ে দিন শুরু করে বাংলাদেশ। ৫৪ রানে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও ১৪ রান নিয়ে ক্রিজে আসেন। প্রথমদিন শেষ বিকেলে দুজনের গড়া ২৪ রানের অবিচ্ছেদ্য জুটি টিকেছিল লাঞ্চের আগ পর্যন্ত। ততক্ষণে ক্যারিয়ারের পঞ্চম টেস্ট সেঞ্চুরির দেখা পেয়ে যান মাহমুদউল্লাহ।
সব ধরণের স্বীকৃত ক্রিকেট মিলিয়েই প্রথম ফিফটির দেখা পান তাসকিনও। মাহমুদউল্লাহকে যেভাবে সঙ্গ দিয়ে রান তুলেছেন তাতে তাসকিনকে মনেই হয়নি ১০ নম্বরে নামা ব্যাটসম্যান। ১১২ রান নিয়ে মাহমুদউল্লাহ ও ৫২ রান নিয়ে লাঞ্চে যান তাসকিন। বাংলাদেশের সংগ্রহ ছিল ৮ উইকেটে ৪০৪ রান।
ফিফটির আগে (ব্যক্তিগত ৩২ রানে স্লিপে ক্যাচ মিস করে শুম্বা) জীবন পাওয়া তাসকিনকে ফেরানো যেত লাঞ্চের পর আরও এক দফা জীবন পান। রান আউটের সহজ সুযোগ মিস করেছিল ডিওন মেয়ার্স। আর তাতে দুজনে মিলে যোগ করেন আরও ৫৭ রান। সবমিলিয়ে দুজনে রেকর্ড ১৯১ রানের জুটি গড়েন।
৭৫ রান করা তাসকিনকে ফিরিয়ে জুটি ভাঙেন পার্ট টাইম স্পিনার মিল্টন শুম্বা। তাদের এই জুটি সব মিলিয়ে টেস্ট ইতিহাসে ৯ম উইকেটে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রানের জুটি। বাংলাদেশের হয়ে ৯ম উইকেটে সর্বোচ্চ রানের (টেস্ট ইতিহাসের ৩য়) আগের জুটি ছিল ২০১২ সালে খুলনায় মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও আবুল হাসান রাজুর ১৮৪।
তাসকিনের বিদায়ের পর বাংলাদেশ ইনিংসও গুটিয়ে যায় দ্রুত। এবাদত হোসেনকে খালি হাতে ফেরান জিম্বাবুয়ের সেরা বোলার ব্লেসিং মুজারাবানি। তার আগেই ক্যারিয়ারে প্রথম বার ১৫০ ছুঁয়েছেন মাহমুদউল্লাহ। ২৭৮ বলে ১৭ চার ১ ছক্কায় ইনিংসটি সাজান। অলআউট হওয়ার আগে বাংলাদেশের স্কোরবোর্ডে ৪৬৮।
৯৪ রান খরচায় মুজারাবানির নেওয়া ৪ উইকেট স্বাগতিকদের হয়ে সর্বোচ্চ উইকেট। দুইটি করে নেন ডোনাল্ড টিরিপানো ও ভিক্টর নিয়াউচি। একটি করে শিকার রিচার্ড এনগারাভা ও মিল্টন শুম্বার। বাংলাদেশ ইনিংস শেষেই চা বিরতিতে যায় দুই দল।
সংক্ষিপ্ত স্কোর (২য় দিন শেষে):
বাংলাদেশ ১ম ইনিংসে ৪৬৮/১০ (১২৬), সাইফ ০, সাদমান ২৩, শান্ত ২, মুমিনুল ৭০, মুশফিক ১১, সাকিব ৩, লিটন ৯৫, মাহমুদউল্লাহ ১৫০*, মিরাজ ০, তাসকিন ৭৫, এবাদত ০; মুজারাবানি ২৯-৪-৯৪-৪, এনগারাভা ২৩-৫-৮৩-১, টিরিপানো ২৩-৫-৫৮-২, নিয়াউচি ১৭-১-৯২-২।
জিম্বাবুয়ে ১ম ইনিংসে ১১৪/১ (৪১), শুম্বা ৪১, কাইতানো ৩৩*, টেইলর ৩৭*; সাকিব ১৩-২-৪৩-১
বাংলাদেশ ১ম ইনিংসে ৩৫৪ রানে এগিয়ে।