শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচে গাজী গ্রুপকে হারাল আবাহনী

শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচে গাজী গ্রুপকে হারাল আবাহনী
Vinkmag ad

রোমাঞ্চ ছড়ানো ম্যাচে গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্সকে ১ উইকেটে হারিয়ে সুপার লিগে টানা দ্বিতীয় জয়ের দেখা পেল আবাহনী। নাজমুল হোসেন শান্তর ফিফটিতে শেষ ওভারের নাটকীয়তায় জয় পেল বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা।

আগের ম্যাচেই মোহামেডানের বিপক্ষে চলতি বঙ্গবন্ধু ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগের (ডিপিএল) সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ পায় আবাহনী। যে পুঁজিতে ভর করে হেসেখেলে বিশাল জয় পেয়েছিল তারা।

তবে আজ (২১ জুন) মিরপুরে গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্সের দেওয়া ১৩১ রানের লক্ষ্য তাড়ায় নেমেই উল্টো চিত্র দেখা গেল আবাহনী ইনিংসে। আগেরদিন ১৯৩ রান করা দলটির হয়ে একাই লড়েছেন নাজমুল হোসেন শান্ত।

টস হেরে ব্যাট করতে নেমে গাজী গ্রুপকে শুরুতে কিছুটা অস্বস্তিতে ফেলেন মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন ও আরাফাত সানি। ইনিংসের তৃতীয় ওভারে সাইফউদ্দিন ফেরান ওপেনার শেখ মেহেদীকে (৮ বলে ৩)। এরপর অবশ্য ধীরে ধীরে হাত খুলেন সৌম্য সরকার ও জাকির হোসেন।

মেহেদীর বিদায়ের পরের বলেই মিড উইকেট দিয়ে বল উড়িয়ে গ্যালারিতে পাঠান সৌম্য। পঞ্চম ওভারে তানজিম হাসান সাকিবকে ফ্লিক শটে হাঁকিয়েছেন আরও এক ছক্কা। ৬ষ্ঠ ওভারে মোসাদ্দেক হোসেনকে টানা দুই চার সৌম্যের, একটি হাঁকান জাকির। পাওয়ার প্লের ৬ ওভারে গাজী গ্রুপের রান ১ উইকেটে ৪৩।

দুজনের ৪৫ রানের জুটি ভাঙেন মোসাদ্দেকই, তাকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে সাকিবের হাতে ক্যাচ দেন সৌম্য। ২৪ বলে সমান দুইটি করে চার, ছক্কায় তার ব্যাট থেকে আসে ৩০ রান। যা গাজী গ্রুপের সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রানের ইনিংস।

এরপর অবশ্য নিয়মিত বিরতিতেই উইকেট হারিয়েছে গাজী গ্রুপ। জাকির হোসেন থামেন ২৫ বলে ২৭ রান করে পেসার সাকিবের বলে। অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ১৭ বলে ১৬ রানের বেশি করতে পারেননি। শেষদিকে মুমিনুল হকের ১২ বলে ৫ চার খেলা ২৫ রানের ইনিংসে ১৯.১ ওভারে অলআউট হওয়ার আগে ১৩০ ছুঁয়েছে দলীয় সংগ্রহ।

আবাহনীর হয়ে ৪ ওভারে ১৮ রান খরচায় ৪ উইকেট নেন সাইফউদ্দিন, তিন উইকেট নিয়েছেন বাঁহাতি পেসার মেহেদী হাসান রানা।

১৩১ রানের জয়ের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই ওপেনার মুনিম শাহরিয়ারকে হারায় আবাহনী। এবারের লিগে ব্যাট হাতে দারুণ ধারাবাহিক মুনিম এদিন অবশ্য ফিরেছেন খালি হাতে। নাসুম আহমেদের বলে ডিপ এক্সট্রা কাভারে তার উড়িয়ে মারা বলকে দারুণ এক ক্যাচে পরিণত করেন সৌম্য।

কব্জির চোট কাটিয়ে ফেরা আরেক ওপেনার লিটন দাস আগের ম্যাচে মত সুবিধা করতে পারেননি এদিনও। ইনিংসের প্রথম বল সহ প্রথম ওভারে হাঁকান দুই চার। কিন্তু ১৭ বলের বেশি টিকতে পারেননি, ৩ চারে ২২ রান করে ফিরেছেন শেখ মেহেদীর বলে। তার আগে জীবন পেয়েছেন দুই দফা।

২৯ রানে ২ উইকেট হারালেও অধিনায়ক মুশফিকুর রহিমকে নিয়ে আবাহনীকে টেনে নিচ্ছিলেন নাজমুল হোসেন শান্ত। দুজনের ৩১ রানের জুটিও ভাঙে পেসার মুকিদুল ইসলামের বলে  মুশফিক  (১২) আউট হলে। একই ওভারে মোসাদ্দেক হোসেনকেও (০) ফেরান মুকিদুল। ৪ রানের ব্যবধানে নাইম শেখকে (২) বোল্ড করেন শেখ মেহেদী। আবাহনী পরিণত হয় ৫ উইকেটে ৬৪ রানে।

সেখান থেকে আফিফ হোসেনকে নিয়ে ৪৭ রানের জুটি শান্তর। যেখানে আফিফের অবদান ১৮ বলে ১৪। শেষ ৩ ওভারে আবাহনীর প্রয়োজন ছিল ২৭ রান। ১৮তম ওভারে মাহমুদউল্লাহকে  ছক্কা হাঁকিয়ে এবারের লিগে শান্ত তুলে নেন নিজের দ্বিতীয় ফিফটি।

তবে একই ওভারে মাহমুদউল্লাহ বিপর্যয়ে ফেলেন আবাহনীকে, শেষ দুই বলে তুলে নেন আফিফ ও মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনকে (০)। শেষ ২ ওভারে প্রয়োজন ছিল ১৮ রান। ১৯তম ওভারে শান্তর উইকেট হারিয়ে আবাহনীর স্কোরবোর্ডে উঠে ৯ রান। মুকিদুল ইসলাম মুগ্ধ’র তৃতীয় শিকার হয়ে শান্ত ফেরেন ৪৯ বলে ৪ চার ২ ছক্কায় ৫৮ রান করে।

শেষ ওভারে হাতে ২ উইকেট নিয়ে প্রয়োজন ৯। প্রথম দুই বলে ৫ রান আসলেও তৃতীয় বলে তাড়াহুড়োয় দুই রান নিতে গিয়ে রান আউট হন মেহেদী হাসান রানা (৬ বলে ৯)। শেষ উইকেট জুটিতে অবশ্য কাজটা ঠিকঠাকভাবেই করেছেন আরাফাত সানি (১*) ও তানজিম হাসান সাকিব (৪*)। ১ উইকেট ও ১ বল হাতে রেখেই জয় নিশ্চিত করে আবাহনী।

এই জয়ে ১৩ ম্যাচে ২০ পয়েন্ট নিয়ে সবার উপরে এখন আবাহনী। মুকিদুলের ৩ উইকেটে সাথে গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্সের শেখ মেহেদী ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ নেন সমান দুইটি কর উইকেট।

সংক্ষিপ্ত স্কোরঃ

গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্স ১৩০/১০ (১৯.১), মেহেদী ৩, সৌম্য ৩০, জাকির ২৭, রাব্বি ১২, মাহমুদউল্লাহ ১৬, আরিফুল ০, মুমিনুল ২৫, আকবর ০, মুগ্ধ ২, নাসুম ৩, তারেক ০*; সাইফউদ্দিন ৪-০-১৮-৪, মোসাদ্দেক ৪-০-২৭-১, সাকিব ২.১-০-১৩-২, রানা ৪-০-৩২-৩

আবাহনী লিমিটেড ১৩১/৯ (১৯.৫), লিটন ২২, মুনিম ০, শান্ত ৫৮, মুশফিক ১২, মোসাদ্দেক ০, নাইম ২, আফিফ ১৪, সাইফউদ্দিন ০, সাকিব ৪*, রানা ৯, সানি ১*; মেহেদী ৪-০-২২-২, নাসুম ৩.৫-০-২৫-১, মুগ্ধ ৪-০-৩৮-৩, মাহমুদউল্লাহ ৪-০-১৯-২

ফলাফলঃ আবাহনী লিমিটেড ১ উইকেটে জয়ী

ম্যাচসেরাঃ নাজমুল হোসেন শান্ত (আবাহনী লিমিটেড)।

৯৭ প্রতিবেদক

Read Previous

সেঞ্চুরি করেও দলকে জেতাতে পারলেন না হাসানুজ্জামান

Read Next

কষ্ট হলেও বলেই ফেললেন পিটারসেন

Total
11
Share