

শ্রীলঙ্কা-বাংলাদেশ চলমান টেস্ট সিরিজে যে তিনটি জিনিস প্রায় রোজই দেখা গিয়েছে সেগুলো হল বৃষ্টি কিংবা আলোক স্বল্পতায় খেলা বন্ধ হওয়া, পাল্লেকেলের উইকেটে বোলারদের জন্য কিছুই না থাকা ও তাসকিন আহমেদের বলে ক্যাচ মিস হওয়া। প্রথম টেস্টের পর দ্বিতীয় টেস্টেও ক্যান্ডির পাল্লেকেলে আভাস দিয়েছে ম্যাড়ম্যাড়ে ফ্ল্যাট উইকেটের। অমন উইকেটেও আগুন ঝরাচ্ছেন তাসকিন, উইকেট বঞ্চিত হচ্ছেন সতীর্থদের সহজ ক্যাচ মিসে।
আলোক স্বল্পতায় ২৪.১ ওভার বাকি থাকতেই দ্বিতীয় দিনের খেলা শেষ হওয়ার আগে শ্রীলঙ্কার সংগ্রহ ৬ উইকেটে ৪৬৯ রান। ৩৮২ রানে ৬ উইকেট হারানো স্বাগতিকদের পথে রেখেছে উইকেট রক্ষক নিরোশান ডিকওয়েলা ও রমেশ মেন্ডিসের অবিচ্ছেদ্য ৮৭ রানের জুটি। ইতোমধ্যে দ্রুতগতিতে ফিফটি তুলে ৬৪ রানে ডিকওয়েলা ও ২২ রানে অপরাজিত আছেন মেন্ডিস।
তাসকিনের বলে ক্যাচ মিস হওয়া নতুন কিছু নয়। ক্যাচ মিসের মহড়া না চললে নিউজিল্যান্ড সফরে অন্তত পাঁচটি উইকেট বেশি থাকতো তাসকিনের নামের পাশে। গতকাল (২৯ এপ্রিল) প্রথম দিন লঙ্কানদের উইকেট পড়েছে মাত্র একটি, ১ উইকেটে ২৯১ রানে দিন শেষ করেছিল স্বাগতিকরা। ১১৮ রান করে আউট হওয়া অধিনায়ক দিমুথ করুনারত্নে ফিরতে পারতেন ২৮ রানে, তাসকিনের বলে সহজ ক্যাচ ছেড়েছেন স্লিপে দাঁড়ানো শান্ত।
ক্যান্ডির মরা পিচে গতি, আগ্রাসণ, বাউন্সে লঙ্কান ব্যাটসম্যানদের যা একটু পরীক্ষা নেয়ার সেটা এই তাসকিনই নিচ্ছেন। সাম্প্রতিক সময়ে নিজেকে বদলে ফেলার মিশনে পরিশ্রমে ঘাটতি রাখেননি এতটুকুও। তারই ফল পাচ্ছেন সর্বশেষ নিউজিল্যান্ড সফর থেকে।
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম টেস্টে রান বন্যা বইয়ে দেয়া পাল্লেকেলের উইকেটে দলের পক্ষে সর্বোচ্চ তিন উইকেট তার। এবার দ্বিতীয় টেস্টেও দারুণ শুরু পাওয়া লঙ্কানদের লাগাম টেনে ধরার কাজটাও করেছেন এই পেসার। চলতি ম্যাচেও এখনো পর্যন্ত সর্বোচ্চ ৩ উইকেট তার ঝুলিতে।
আগেরদিনের দারুণ শুরুকে আজ টেনে নিতে পারেনি লঙ্কানরা। দিনের প্রথম সেশনে শ্রীলঙ্কা হারিয়েছে ৩ উইকেট, রান তুলেছে ৪৩। তাসকিনের জোড়া আঘাতে ফিরেছে ১৩১ রানে অপরাজিত থেকে দিন শুরু করা লাহিরু থিরিমান্নে ও অ্যাঞ্জেলা ম্যাথুস। থিরিমান্নে ও ওশাদা ফার্নান্দো আগেরদিন ৮২ রানের জুটিতে অবিচ্ছেদ্য ছিলেন, আজ দুজনে যোগ করতে পারেন ২২ রান। তাসকিনের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে থিরিমান্নে থামেন ২৯৮ বলে ১৪০ রান করে।
ওভারের চতুর্থ বলেই নতুন ব্যাটসম্যান অ্যাঞ্জেলা ম্যাথুসকে খালি হাতে ফেরাতে পারতেন তাসকিন। তার অফ স্টাম্পের বাইরের ফুলার লেংথের বল ডিফেন্স করতে গিয়ে আউটসাইড এজ হয়ে লিটনের হাতে ক্যাচ দেন ম্যাথুস। কিন্তু জোরালো কোনো আবেদন করেনি বাংলাদেশ। পরে টিভি রিপ্লেতে যা স্পষ্ট দেখা যায় এইজ হয়েছিল ম্যাথুসের।
দিনের ১৯তম ও নিজের ৭ম ওভার করতে এসে আবারও উইকেট শিকার তাসকিনের। উইকেটের পেছনে লিটনের হাতে ক্যাচ দেন ম্যাথুসও । ফলে তার বিপক্ষে কট বিহাইন্ডের আগের আবেদন না করার খেসারত খুব বেশি দিতে হয়নি বাংলাদেশকে। ৫ রানেই সাজঘরে ফিরতে হয় এই অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যানকে। লাঞ্চের ৪ ওভার আগে তাইজুলের বলে ফিরেছেন ধনঞ্জয়া ডি সিলভাও। আগের টেস্টে সেঞ্চুরি হাঁকানো ধনঞ্জয়া টিকেননি ৯ বলের বেশি, ২ রান করে ক্যাচ দেন শান্তকে।
১৫ রানের ব্যবধানে ৩উইকেট হারানো শ্রীলঙ্কা শেষ পর্যন্ত লাঞ্চে যায় ৪ উইকেটে ৩৩৪ রান নিয়ে। ১৭২ বলে ৭ চারে ৬৫ রানে ওশাদা ফার্নান্দো ও কোন রান না করে অপরাজিত থাকা পাথুম নিসাঙ্কা। লাঞ্চের পর দুজনে জুটি টেনে নেন ৫৪ রান পর্যন্ত।
তবে এবারও জুটি ভাঙার দায়িত্বটা নিজের কাঁধে নেন তাসকিন। সেশনে নিজের প্রথম ওভার করতে এসেই ফিরিয়েছেন পাথুম নিসাঙ্কাকে। তার করা ১৩৬তম ওভারের ব্যাক অব লেংথের চতুর্থ বলটি নিচু হয়ে বোকা বানায় নিসাঙ্কাকে। বোল্ড হয়ে অনেকটা অবাকই যেন হয়েছেন লঙ্কান এই ব্যাটসম্যান। ৮৪ বলে ৩০ রানে ধরতে হয়েছে সাঝঘরের পথ। ফিরতে পারতেন অবশ্য ব্যক্তিগত ১০ রানে আবু জায়েদ রাহির বলে পয়েন্টে দাঁড়ানো তাইজুল লুফে নিতে পারেননি হাফ চান্সকে।
৫ বলের ব্যবধানে ফিরে যান আরেক সেট ব্যাটসম্যান ওশাদা ফার্নান্দোও। তাইজুলের করা পরের ওভারের দ্বিতীয় বলেই উইকেটের পেছনে লিটন দাসকে ক্যাচ দেন ফার্নান্দো। কাছে গিয়েও ক্যারিয়ারের চতুর্থ ফিফটিকে রূপ দিতে পারেননি সেঞ্চুরিতে, ২২১ বলে ৮১ রানে থামতে হয়েছে। ৬ উইকেটে ৩৮২ রানে পরিণত হয় শ্রীলঙ্কা।
দুজনের বিদায়ের পর অবশ্য নিরোশান ডিকওয়েলা ও রমেশ মেন্ডিসের ব্যাটে পথেই ছিল স্বাগতিকরা। চা বিরতির আগে দুজনে অবিচ্ছেদ্য ছিলেন ৪৩ রানের জুটিতে। চা বিরতির পর তৃতীয় ওভার শেষেই আলোক স্বল্পতায় খেলা বন্ধ থাকে ২২ মিনিট। এরপর শুরু হয়ে তা থেমেছে ৬.৫ ওভার পরেই। এবার আর খেলা শুরু করা যায়নি, দিনের খেলা শেষ বলে ঘোষণা করতে বাধ্য হন আম্পায়ার।
তার আগেই দ্রুত গতিতে রান তোলার কাজটা করেছেন ডিকওয়েলা ও মেন্ডিস। ৪৮ বলে ফিফটি তুলে নিয়ে ডিকওয়েলা অপরাজিত আছনে ৬৪ বলে ৬৪ রানে। তাকে যোগ্য সঙ্গ দেয়া মেন্ডিস অপরাজিত ৫৫ বলে ২২ রানে। ৮৭ রানের অবিচ্ছেদ্য জুটির পথে বেশ কয়েকবারই টাইগার স্পিনারদের সাবলীলভাবে সুইপ খেলেন ডিকওয়েলা, নিয়ন্ত্রণ হারায় তাইজুল, মিরাজরা। তবে মেন্ডিস ফিরতে পারতেন ব্যক্তিগত ১২ রানে, তাসকিনের করা ১৫২ তম ওভারের শেষ বলে স্লিপে সহজ ক্যাচ ছেড়েছেন শান্ত।
সংক্ষিপ্ত স্কোর (২য় দিন শেষে):
শ্রীলঙ্কা ৪৬৯/৬ (১৫৫.৫), করুনারত্নে ১১৮, থিরিমান্নে ১৪০, ওশাদা ৮১, ম্যাথুস ৫, ধনঞ্জয়া ২, নিসাঙ্কা ৩০, ডিকওয়েলা ৬৪*, রমেশ ২২*; তাসকিন ৩২.৫-৭-১১৯-৩, শরিফুল ২৯-৬-৯১-১, তাইজুল ৩৮-৭-৮৩-১।