

গত বছর করোনা প্রভাবে দেশের সব ধরণের ক্রিকেট স্থগিত হয়। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়া শুরু করলে লম্বা বিরতির পর ক্রিকেটও ফিরতে শুরু করে। কিন্তু আবারও করোনার প্রকোপ বাড়াতে ঘরোয়া ক্রিকেট শুরুর আশার পালে হাওয়া কমলো। মাত্র দুই রাউন্ড শেষে স্থগিত জাতীয় ক্রিকেট লিগ (এনসিএল)। তবে সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় প্রথম, দ্বিতীয় বিভাগের ক্রিকেটাররা। এক বছরের বেশি সময় কেটে গেছে ওই পর্যায়ে ক্রিকেট নেই, ক্রিকেটারদের হাহাকার বাড়ছে। তাদের হয়ে আক্ষেপের গল্প শোনালেন পেসার কামরুল ইসলাম রাব্বি।
প্রায় এক বছর খেলা না থাকায় জাতীয় দল, প্রিমিয়ার লিগ, প্রথম শ্রেণির চুক্তিবদ্ধ ক্রিকেটাররাও আর্থিক সংকটে পড়ার অবস্থায়। সেখানে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় বিভাগের ক্রিকেটারদের অবস্থা আরও করুণ। ইতোমধ্যে অনেকেই পাশাপাশি অন্য কাজেও মনোনিবেশ করেছেন। জীবিকার তাগিদে নিরুপায় হয়েই এমন কিছু বলে জানান কামরুল ইসলাম রাব্বি।
করোনা পরিস্থিতি দূরে ঠেলে মার্চে জাতীয় লিগ দিয়ে এক বছরের বেশি সময় পর ঘরোয়া ক্রিকেটের যাত্রা শুরু হয়। জাতীয় লিগের সাথে ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগ (ডিপিএল) থেকে শুরু করে অন্যান্য নিয়মিত ঘরোয়া টুর্নামেন্টের সূচিও প্রস্তুত ছিল। আশার আলো দেখতে পেয়েছিল প্রথম, দ্বিতীয় বিভাগের ক্রিকেটাররাও, অচিরেই ফেরার কথা ছিল সেসব টুর্নামেন্টও। তবে করোনা প্রকোপ মারাত্মকভাবে বেড়ে গেলে জাতীয় লিগ স্থগিতের পাশাপাশি অন্যান্য টুর্নামেন্টগুলোও শঙ্কার মুখে।
আগামীকাল (১৪ এপ্রিল) থেকে এক সপ্তাহের জন্য দেশে ঘোষণা হয়েছে সর্বাত্মক লকডাউন। এই পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে ঠেকে এখনো অনিশ্চিত। ফলে আরেক দফা শঙ্কা নিয়ে অপেক্ষা ঘরোয়া লিগের ক্রিকেটারদের। এর বাইরের প্রথম বিভাগ, দ্বিতীয় বিভাগের ক্রিকেটারদের জন্য সময়টা আরও কঠিন।
আজ (১৩ এপ্রিল) মিরপুরে সাংবাদিকদের কামরুল ইসলাম রাব্বি বলেন, ‘অত্যন্ত দুঃখজনক একটা ব্যাপার, খেলোয়াড়দের জন্য হতাশার একটা জায়গা। প্রথম শ্রেণি থেকে প্রথম বিভাগ, দ্বিতীয় বিভাগ ও তৃতীয় বিভাগের সব ক্রিকেটার বেশ কঠিন সময় পার করছে। জাতীয় লিগটা শুরু হয়েছিল, বিসিবিকে ধন্যবাদ তারা পদক্ষেপ নিয়েছিল। কিন্তু দুইটা রাউন্ড শেষ হওয়ার পরই দেশের করোনা পরিস্থিতি খারাপ হয়ে যায়।’
‘খেলোয়াড়দের আর্থিক অবস্থা এখন আসলেই খুব ভালোনা। আমরা যতটুকু খোঁজ নিয়েছি সবারই অবস্থা খুবই খারাপ। এর থেকে খারাপ আসলে হতে পারেনা। মাঝে বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপ হওয়াতে কিছু খেলোয়াড় হয়তো কিছুটা টিকে আছে। বেশিরভাগ খেলোয়াড় বিপদে আছে। যারা বিপিএল, প্রিমিয়ার লিগ খেলেনা তারাই কিন্তু বিপদে। যারা এসব খেলে তাদেরও দেখবেন মাসিক ব্যয় ১ থেকে দেড় লাখ টাকা। আপনি যদি বসে বসে এক বছর পার করেন তাহলে কিন্তু প্রায় ১৬-১৭ লাখ টাকা চলে যায়। এটা বিশাল একটা ধাক্কা।’
২৯ বছর বয়সী কামরুল ইসলাম রাব্বি জাতীয় দলের হয়ে খেলেছেন, ঘরোয়া ক্রিকেটের নিয়মিত মুখ, প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটের চুক্তিবদ্ধ ক্রিকেটার। ফলে করোনার এই ভয়াল থাবাতেও অস্বিত্ব টিকে আছে মোটামুটিভাবে। কিন্ত তার মূল চিন্তাটা প্রথম শ্রেণির চুক্তিবদ্ধ নন এমন এবং প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় বিভাগের ক্রিকেটারদের নিয়ে। আর্থিক সংকটে অনেকেই ক্রিকেটের পাশাপাশি অন্য কাজে সময় পার করছেন বলেও জানান এই পেসার।
রাব্বি বলেন, ‘আমরা যারা প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে চুক্তিবদ্ধ তারা নাহয় কাভার করতে পারছি। কিন্তু যারা চুক্তিবদ্ধ নন তাদের অবস্থা আরও খারাপ। আপনি দেখেন আমরা ৯০ জন প্লেয়ার বেতন পাচ্ছি (প্রথম শ্রেণির চুক্তিতে), জাতীয় দলের কিছু প্লেয়ার আছে। এর বাইরে কিন্তু বেশিরভাগই বেতন পায় না। অনুশীলন করতে গেলেও প্রথম বিভাগ, দ্বিতীয় বিভাগের ক্রিকেটারদের যে খরচ হয় সেটাও কিন্তু কঠিন। মাঠে আসা যাওয়া, আপনার গাড়ি হলে তেল কেনা, বাইকের তেল, রিকশা হলে ভাড়া এগুলোও কিন্তু কঠিন অবস্থায় পৌঁছে গেছে।’
‘আমাদের কাছে অনেক ফোন আসে। বরিশালের সিনিয়র ক্রিকেটার হিসেবে ওখানকার অনেক খেলোয়াড়ই আমাকে ফোন দেয় ভাই কবে খেলা? প্রতিদিনই একই প্রশ্ন কবে খেলা? আজকে কতদিন হল প্রথম বিভাগ নাই? প্রথম বিভাগের পেমেন্ট বছরে ৬-৮ লাখ টাকা। আজকে কতদিন খেলা নাই, এখনো কি তার কাছে এই টাকা থাকার কথা? দ্বিতীয় বিভাগ, তৃতীয় বিভাগ…ঢাকায় যারা অনুশীলন করে গ্রাম গঞ্জ থেকে এসে তাদের কি অবস্থা?’
‘এই অবস্থা আপনি চিন্তাও করতে পারবেন না। আসলে অনেকেই বলতে পারেনা, অনেকেই কিন্তু অন্য কাজ করছে পাশাপাশি। কারণ কিছু করার নাই, অন্য কাজ করা ছাড়া। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ইন শা আল্লাহ সব ঠিক হয়ে যাবে।’
বাস্তবতা জানেন বলেই দেশের ক্রিকেট নিয়ন্ত্রক সংস্থার কোন অবহেলা দেখেন না ডানহাতি এই পেসার। তবে তার আর্জি পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেই যেন সবধরণের ক্রিকেট দ্রুত শুরু করা হয়।
তিনি বলেন, ‘কিছুতো করার নাই, বিসিবিরও কিছু করার নাই। করোনা একটা মহামারী ভাইরাস। আমার অনুরোধটা হল করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেই যেন দ্রুত খেলাগুলো শুরু হয়। আমার মনে হয় লকডাউন শেষে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আবারও খেলাটা শুরু করা উচিত।’