

অশনি সংকেত যেন ভর করছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের উপর। গত কয়েক মাসে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ এবং নিউজিল্যান্ড সফরে ভরাডুবির পর এবার কাঠগড়ায় রয়েছেন দলের প্রধান কোচ রাসেল ডোমিঙ্গো। আশানুরূপ ফলাফল না পাওয়ায় কোচের উপরও আস্থা রাখতে পারছে না বোর্ডও।
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের হাই প্রোফাইল ডিরেক্টররা এক বৈঠকে বসে গেম ডেভেলপমেন্টের চেয়ারম্যান খালেদ মাহমুদ সুজনকে শ্রীলঙ্কা সিরিজের জন্য বোর্ডের মুখ্য প্রতিনিধি নির্বাচিত করে। তার উদ্দেশ্য থাকবে ডোমিঙ্গোর কার্যক্রম সচক্ষে দেখা ও পর্যালোচনার করা।
বিসিবির ক্রিকেট অপারেশন্সের চেয়ারম্যান আকরাম খান ক্রিকবাজকে জানিয়েছেন, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে হোম সিরিজের পর তারা বিদেশি কোচদের পারফরম্যান্স নিয়ে আলোচনায় বসবে।
‘শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে হোম সিরিজের পর আমরা এক বৈঠকে বসার আশা করছি। সেখানে আমরা কোচদের সবকিছু নিয়ে আলোচনা করবো। আমরা অবশ্যই প্রধান কোচ (ডোমিঙ্গো) এবং অন্যদের পারফরম্যান্স মূল্যায়ন করবো,’ আকরাম বলেন।
বিসিবির সূত্রমতে, ডোমিঙ্গোর কার্যক্রম বেশ কিছুদিন ধরে তাদের নজরে আছে। ২০১৯ সালে ২ বছরের জন্য চুক্তিবদ্ধ হওয়া এ কোচের স্থায়িত্ব শেষ হবে এ বছরের আগস্টে। মিটিংয়ের পরই জানা যাবে কোচের মেয়াদ বাড়ানো হবে, নাকি ছাটাই করা হবে।
বিসিবির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন, পরবর্তী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপকে কেন্দ্র করে তারা একজন হাই প্রোফাইল কোচ খোঁজার প্রক্রিয়ায় রয়েছেন। কিছু সদস্য ওটিস গিবসনের পক্ষ নিয়ে তাকে নিযুক্ত করার চিন্তাভাবনা করছে।
দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনাই ছিল ডোমিঙ্গোকে নিযুক্ত করার মূল উদ্দেশ্য। সেদিক দিয়ে ভালো ক্রিকেটের চর্চা এবং টেস্ট ক্রিকেটকে বেশি করে গুরুত্ব দেওয়ার উদ্দেশ্যেই ডোমিঙ্গোর প্রতি আগ্রহী হয় বোর্ড। তবে আশানুরূপ ফলাফল বোর্ড পায়নি এখনও। তার অধীনে ৭ টেস্ট খেলে মাত্র ১টিতে জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। এছাড়া সব ফরম্যাট মিলিয়ে ১৩ ম্যাচে জয় এবং ১৭ ম্যাচে পরাজয় বরণ করেছে।
তবে বিসিবির কিছু অফিসিয়াল মনে করেন, করোনার প্রভাবে লম্বা সময় আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে বিরত ছিল বাংলাদেশ। সেক্ষেত্রে এখনই ডোমিঙ্গোর পারফরম্যান্সকে মূল্যায়ন করাটা অপরিপক্ক হবে বলে তাদের ধারণা। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের সবগুলো ম্যাচ বাংলাদেশ জয়লাভ করেছিল। তবে ২টি টেস্ট হেরে যায় তারা। একইসাথে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হয় বাংলাদেশ।
সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিম এবং মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের মত বড় ক্রিকেটারদের রিপ্লেসমেন্ট এখনও খুঁজে পাননি ডোমিঙ্গো। তরুণ ক্রিকেটারদের পর্যাপ্ত সুযোগ দিলেও তাদের সামর্থ্যের উপর ভরসা রাখতে পারছেন না তিনি।
নিউজিল্যান্ড সফরে ক্রিকেটারদের সাথে মিটিংয়ে বসেছিলেন ডোমিঙ্গো। কয়েকজন ক্রিকেটারকে ‘স্বার্থপর’ বলেছিলেন তিনি। এছাড়াও ক্রিকবাজ সূত্রমতে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের সাথে বৈরী সম্পর্ক চলছে তার। বিশেষ করে রিয়াদকে টেস্ট কার্যক্রম থেকে বাদ দেওয়ার পরই এমন অবস্থা যাচ্ছে।
শ্রীলঙ্কা সিরিজের পর খালেদ মাহমুদ সুজনের রিপোর্টের উপর ভিত্তি করে মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত হবে ডোমিঙ্গোকে রাখা হবে কি হবে না। যদিও সুজন জানিয়েছেন তার কাজ হবে শ্রীলঙ্কা সিরিজে কোচরা কীভাবে দল পরিচালনা করছেন এবং ড্রেসিং রুমের পরিবেশ কেমন, তা পর্যালোচনা করা।
‘আমি মনে করি ভালো কোচ হিসেবে আমরা ডোমিঙ্গোকে নিযুক্ত করেছিলাম। কাছাকাছি থেকে আমি তাকে আরও ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করতে চাই। খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্স অবশ্যই কোচের উপর নির্ভর করছে না। কোচ শুধু আপনাকে পরিকল্পনা করে দিবে এবং অনুশীলন করে দিবে। কিন্তু খেলোয়াড়দের নিজে থেকে ভালো খেলতে হবে।’
‘আমি জানিনা বাংলাদেশ দলের কি হয়েছে। এখন যেহেতু দলের সাথে আছি, তাই আমি দেখতে চাই কি হয়। দলের যেকোন সমস্যা নিরসনে আমি সর্বাত্মক চেষ্টা করবো। আমার লক্ষ্য থাকবে দলের জন্য একটি ভালো পরিবেশ তৈরি করা, যাতে করে খেলোয়াড়রা ভালো খেলে এবং দলকে জয় এনে দিতে পারে,’ বলেন সুজন।