

চট্টগ্রাম টেস্টের তৃতীয় দিন রাজত্ব করেছে দুই দলের স্পিনাররা। তবে শেষ বিকেলে সাগরিকার মন্থর উইকেটেও শ্যানন গ্যাব্রিয়েল দারুণ চ্যালেঞ্জ ছুঁড়েছেন টাইগার ব্যাটসম্যানদের। নিজের শক্তির জায়গা বিবেচনায় রেখে ফিল্ড সেটাপে তুলে নেন সাদমান ইসলামের উইকেটও। এর বাইরে পুরো দিনের গল্পেই জড়িয়ে আছেন স্পিনাররা।
৮ উইকেট হাতে রেখে ৩৫৫ রানে পিছিয়ে থেকে দিন শুরু করা ওয়েস্ট ইন্ডিজ গুটিয়ে যায় ২৫৯ রানে। আজ ক্যারিবিয়ানদের হারানো ৮ উইকেটের সবকটিই নিয়েছে বাংলাদেশের স্পিনাররা। ব্যাট হাতে সেঞ্চুরি হাঁকানো মেহেদী হাসান মিরাজ অফ স্পিন ভেল্কিতে নিলেন চার উইকেট।
১৭১ রানের লিড নিয়ে দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করা বাংলাদেশ তৃতীয় দিন শেষ করেছে ৩ উইকেটে ৪৭ রান তুলে। রাখিম কর্নওয়ালের স্পিন ঘূর্ণিতে দলীয় ১ রানেই দুই উইকেট হারায় টাইগাররা। পেসার শ্যানন গ্যাব্রিয়েল ফাঁদ পেতে উইকেট তুলে নিলে ৩ উইকেটে ৩৩ রানে পরিণত হয় মুমিনুল হকের দল। অধিনায়ক মুমিনুল ৩১ ও মুশফিক ১০ রানে অপরাজিত থেকে দিন পার করেছেন।
৩ উইকেট হারিয়ে দিনের প্রথম সেশন শেষ করা ওয়েস্ট ইন্ডিজ ঘুরে দাঁড়িয়েছিল চা বিরতির আগের সেশনেই। জশুয়া ডা সিলভা ও জার্মেইন ব্ল্যাকউডের জমে যাওয়া জুটিতে পুরো দিনই কাটিয়ে দেওয়ার আভাস ছিল। কিন্তু চা বিরতির ঠিক আগে শুরু হওয়া উইকেট পতনে চা বিরতির পর তিন ওভারেই গুটিয়ে যায় ক্যারিবিয়ায়নরা। ৬ রানের ব্যবধানে শেষ ৫ উইকেট হারিয়ে ২৫৯ রানে অলআউট হয়।
প্রথম সেশনেই টাইগার স্পিন ভেল্কিতে তিন উইকেট হারিয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তবে টাইগার স্পিনারদের দাপটের পরও ওয়ানডে মেজাজে রান তুলেছেন ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েট, কাইল মায়ের্স, জার্মেইন ব্ল্যাকউডরা।
আগেরদিন ২ উইকেটে ৭৫ রানে দিন শেষ করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। আজ প্রথম সেশনে ১১৪ রান যোগ করতে গিয়ে হারিয়েছে আরও তিন উইকেট। তবে উইকেটে স্পিন দেখে ক্যারিবিয়ানরা হয়তো রান তোলাতেই দিয়েছিল বাড়তি মনযোগ। যে পথে তাইজুল, নাইম, মিরাজরা নিয়েছেন কঠিন পরীক্ষাও।
তাইজুলের করা দিনের প্রথম বলেই ক্রুমাহ বোনার (১৭ ) প্রথম স্লিপে দাঁড়ানো নাজমুল হোসেন শান্তের ক্যাচে পরিণত হন, ভাঙে অধিনায়কের সাথে ৫১ রানের জুটি। বোনারের বিদায়ের পর আরেক অভিষিক্ত কাইল মায়ের্সকে নিয়ে ৫৫ রানের জুটি ব্র্যাথওয়েটের। দলের রান বাড়ানোর কাজটা দুজনে করেছেন দ্রুততার সাথেই।
৫৪ বলে ক্যারিয়ারের ২০তম ফিফটি ছোঁয়া ব্র্যাথওয়েট বোকা বনে যান নাইম হাসানের পরিষ্কার অফ স্পিনকে আর্মার ভেবে ছেড়ে দিতে গিয়ে। বোল্ড হওয়ার আগে ১১১ বলে ১২ চারে খেলেন ৭৬ রানের ইনিংসটি।
ওয়ানডে মেজাজে খেলছিলেন মায়ের্সও। তবে তার শেষ পরিণতিও হয় মিরাজের অফ স্পিনে। ৫০ তম ওভারে কিছুটা হাওয়ায় ভাসিয়ে দেওয়া মিরাজের শেষ বলটি জায়গায় দাঁড়িয়ে ডিফেন্ড করতে চান কিন্তু ফাঁদে পড়েন এলবিডব্লিউর। ৬৫ বলে ৭ চারে সাজানো অভিষেক ইনিংসটি থামে ৪০ রানে।
১৫৪ রানে ৫ উইকেট হারানো ক্যারিবিয়ায়নদের টেনে নেন জশুয়া ডা সিলভা ও জার্মেইন ব্ল্যাকউড। দুজনের ৯৯ রানের জুটিতে আশার আলো খুঁজে পায়া ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তবে চা বিরতির কিছুক্ষণ আগে নাইম-মিরাজের ঘূর্ণিতে আবারও পথ হারায় সফরকারীরা। ৪ বলের ব্যবধানে দুজনেই ফিরেছেন চা বিরতির আগে। ১৪১ বলে ৩ চার ১ ছক্কায় ৪২ রান করে নাইমের শিকার জশুয়া, ১৪৬ বলে ৯ চারে ৬৮ রান করে মিরাজের শিকার ব্ল্যাকউড।
চা বিরতির পর দলীয় সংগ্রহে কোন রান না যোগ করে মিরাজের বলে ফিরেছেন নতুন ব্যাটসম্যান কেমার রোচ। ৫ উইকেটে ২৫৩ থেকে ৮ উইকেটে ২৫৩ তে পরিণত হওয়া ওয়েস্ট ইন্ডিজ এরপর টিকেছে ১৫ বল, দলীয় সংগ্রহ থামে ২৫৯ রানে। মিরাজের চতুর্থ শিকার রাখিম কর্নওয়াল (২) ও তাইজুলের দ্বিতীয় শিকার জোমেল ওয়ারিক্যান (৪)।
নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে দ্বিতীয় ওভারেই কর্নুয়ালের ঘূর্ণিতে মুখ থুবড়ে পড়ে তামিম ইকবাল ও নাজমুল হসেন শান্ত। এই দুই বাঁহাতিই ফিরেছেন খালি হাতে। চতুর্থ বলে কর্নওয়ালের গুড লেংথে পড়া বল খেলতে গিয়ে মিস করেছেন তামিম, আম্পায়ার কল আউট। রিভিউ নিয়েও সাজঘরেই ফিরতে হল টাইগার ওপেনারকে।
এক বল বিরতি দিয়ে আবারও উইকেট শিকার কর্নওয়ায়লের। এবার নতুন ব্যাটসম্যান শান্ত, লেংথে পড়া বল অফ স্টাম্পের বাইরে থেকে উইকেট রক্ষকের কাছেই যাচ্ছিল। তবে তার আগেই শান্তের ব্যাট ছুঁয়ে ফেলায় স্লিপে দাঁড়ানো ব্ল্যাকউডের তালুতেই হয় ঠিকানা।
এক পাশে কর্নওয়ালের ঘূর্ণি চললেও অন্য পাশে পেসারদের জন্য সহায়ক নয় এমন উইকেটেও লড়াইয়ের চেষ্টা পেসার শ্যানন গ্যাব্রিয়েলের। সাদমান ইসলাম ও মুমিনুল হককে টানা করে গেছেন শর্ট বল। কখনো শরীর তাক করে তো কখনো অফ স্টাম্পের বাইরে। দুজনের জন্যই লেগ সাইডে দেওয়া শর্ট বল বিবেচনায় শর্ট লেগ, ও লেগ স্লিপে রেখেছেন ফিল্ডার। মুমিনুল-সাদমান দুজনেই সামলে নেওয়ার চেষ্টা করছিলেন।
তবে ১৫ তম ওভারে গ্যাব্রিয়েলের করা চতুর্থ ওভারের প্রথম বলেই ফাঁদে পা দেন সাদমান। লেগ সাইডে দেওয়া শর্ট বলে খোচা লাগিয়ে ধরা পড়েন উইকেটের পেছনে। ৪২ বলে ৫ রানেই থামে প্রথম ইনিংসে ৫৯ রান করা সাদমান। এরপর বাংলাদেশ ব্যাট করে আরও ৫.৫ ওভার। মুশফিকুর রহিমকে নিয়ে বাকি সময়টুকু অনায়েসেই পাড়ি দেন মুমিনুল হক।
View this post on Instagram