

বাংলাদেশি ক্রিকেটার ও সাপোর্ট স্টাফদের নিয়ে কাজ করার লক্ষ্যেই আবুধাবি টি-টেন লিগের গত আসরের যুক্ত হয় বাংলাদেশি মালিকানাধীন ফ্র্যাঞ্চাইজি বাংলা টাইগার্স। আসরে প্রধান কোচ, সহকারী কোচ, টিম ম্যানেজার সহ সাপোর্টে স্টাফে আধিপত্য ছিল বাংলাদেশিদেরই। বেশ কিছু বাংলাদেশি ক্রিকেটারকে দলে ভিড়িয়েও শেষ মুহূর্তে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবির) অনাপত্তিপত্র না পাওয়ায় বিদেশি নির্ভর দল নিয়ে তৃতীয় স্থান লাভ করে দলটি।
তবে আসন্ন আসরেই সব চিত্র যেন পাল্টে গেল। সাপোর্ট স্টাফ থেকে শুরু করে টিম ম্যানেজমেন্টে পুরোদস্তুর পরিবর্তন। দলটির মালিকানায় এফএমসি গ্রুপ থাকলেও সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন বিসিবির সাবেক পরিচালক ও চট্টগ্রাম বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক সিরাজ উদ্দিন মোহাম্মদ আলমগীর। কিন্তু গতকাল (২৩ ডিসেম্বর) শেষ হওয়া প্লেয়ার্স ড্রাফট কিংবা দলটির অন্য কোন আয়োজনেও দেখা মিলেনি গুণী এই সংগঠকের।
এর আগে দলটির প্রধান কোচ হিসেবেও আফতাব আহমেদের পরিবর্তে ঘোষিত হয় ইংলিশ পল ফারব্রেসের নাম। গত আসরে আফতাবের সহকারী হিসেবে কাজ করা নাজিম উদ্দিন, টিম ম্যানেজার নাফিস ইকবাল, পরিচালক নাজমুল আবেদিন ফাহিম ও টিম ম্যানেজমেন্টের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ইয়াসির আরাফাতও নেই বাংলা টাইগার্সের সাথে।
মূলত গত আসরের বকেয়া পাওনা এখনো বুঝে না পাওয়াতেই তাদের সরে আসার সিদ্ধান্ত। অন্যদিকে সংগঠক হিসেবে মালিক পক্ষের এমন আচরণে বিব্রতবোধ করা সিরাজ উদ্দিন মোহাম্মদ আলমগীরও এবার সরে দাড়িয়েছেন বাংলা টাইগার্স থেকে।
নিজেদের সরে আসার বিষয়টি ‘ক্রিকেট৯৭’ কে নিশ্চিত করেন সিরাজ উদ্দিন মোহাম্মদ আলমগীর, আফতাব আহমেদ, নাফিস ইকবাল ও নাজিম উদ্দিন।
সিরাজ উদ্দিন মোহাম্মদ আলমগীর বলেন, ‘আমি বাংলা টাইগার্সের সাথে আর নাই। আমি তো সংগঠক। আমি দীর্ঘদিন বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার সাথে জড়িত, ক্রিকেট বোর্ডের সাথে জড়িত ছিলাম। এত বছর ধরে আমি পরিষ্কারভাবে ক্যারিয়ারটা পার করেছি। এসব ঝামেলার সাথে সম্পৃক্ত হতে চাইনা। মানুষ কাজ করবে তাদের পারিশ্রমিক না দেওয়া আসলে স্বস্তিদায়ক না। এটা আমার জন্য খুবই বিব্রতকর।’
‘এটা কারও জন্যই স্বস্তির না। সংগঠক হিসেবে আমার জন্য তো কোনভাবেই না। আমার বয়সভিত্তিকে দল আছে, জাতীয় লিগে দল আছে এরাই (আফতাব, নাফিস, নাজিম উদ্দিন) আমাদের সাথে কাজ করে। আমিতো এদের নিয়ে কাজ করতে হবে বিভিন্ন পর্যায়ে। আমি খুবই বিব্রত বিষয়টা নিয়ে। আশা করি সমাধান হয়ে যাবে, আমি বিশ্বাস করি। আমি অনুরোধ রাখবো বাংলা টাইগার্সের মালিকের কাছে যেন এটা সমাধান করে ফেলে।’
দলটির গত আসরের কোচ আফতাব আহমেদ বলেন দীর্ঘ দিন অপেক্ষা করেও বকেয়া বুঝে না পেয়ে হতাশ হয়েই সরে এসেছেন। আসন্ন আসর সামনে রেখে অবশ্য যোগাযোগ করা হয় আফতাব, নাফিসদের সাথে। কয়েকদিন কাজ করার পরেও গত আসরের বকেয়া বুঝে না পাওয়ায় সরে আসার সিদ্ধান্ত নেন তারা।
আফতাব বলেন, ‘এক বছর ধরেই উনারা আমাদেরকে আজকে, কালকে এভাবে একটা ডেট দিয়ে যাচ্ছে কিন্তু ক্লিয়ার করেনি। দিনশেষে আমাদের একটা জিনিস খেয়াল রাখতে হবে আমাদের পেশা এটা। যদি এ জিনিসটা না মানে সেক্ষত্রে তাদের সাথে পরবর্তীতে কাজ চালিয়ে যাওয়া কঠিন। যেহেতু এটা আমাদের পেশা। বকেয়া থাকায় আমরা সরে আসছি।’
‘আমাদের সাথে এবারও যোগাযোগ করেছে, প্রথম দিকে ছোট খাটো প্লেয়ার নেওয়া নিয়ে কথা হয়েছে সপ্তাহ খানেকের মত। কিন্তু এই যোগাযোগটাও অনেক বিরতির পরে। ঐ (২০১৯) নভেম্বরের পর আর কোন যোগাযোগই ছিলনা। ৮-১০ মাস পর এসে একটু যোগাযোগ করেছে। আমরা দেখলাম জিনিসটা এ বছরও গতবারের মত হবে, তখনি আসলে সরে আসা। আমাদের কথাতে ফাহিম স্যার এসেছিল। পুরো বিষয়টা এখন বিব্রতকর হয়ে যাওয়াতে আমরা ভেবেছি বের হয়ে যাওয়াই ভালো।’
দলটির গত আসরের টিম ম্যানেজার নাফিস ইকবাল জানিয়েছেন এবারের আসরে কাজ শুরু করার পর বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপে জেমকন খুলনার টিম ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে কিছুটা ভোগান্তিতে পড়তে হয় বলে সরে এসেছেন। তবে দুই জায়গায় কাজ করতে গিয়ে সেরাটা দিতে না পারার সম্ভাবনার সাথে বকেয়া পাওয়া ইস্যুটাও যে সরে আসার পেছনে কাজ করেছে তা অস্বীকার করেননি।
তিনি বলেন, ‘আমরা বার বার যোগাযোগ করি, উনার অফিস থেকে একটাই কথা বলা হয় যে কোভিডের কারণে উনাদের নানা সমস্যা। আমরা বুঝার চেষ্টা করি কারণ আমাদেরও সমস্যা হয়েছে, উনাদেরও হতে পারে। এখন যেহেতু দেখছি উনারা আবার নতুন করে দল করেছে…।’
‘আমাকে, আফতাবকে আবারও দলের সাথে যুক্ত করেছিল ইয়াসিন ভাই (দলটির মালিকপক্ষ)। আমরা ৫-৬ দিন কাজ করি তারপর চাপের কারণে আমি সরে আসি। জেমকন খুলনার জন্য ঐ সময় কাজ করছিলাম। দুইটা একসাথে করলে আমার কাছে মনে হয় কাজের মান খারাপ হবে। আমিই বলেছি যে দুই জায়গায় কাজ করলে হয় আপনাকে ঠকাব নাহয় ওদের ঠকাবো।’
‘এ কারণেই কাজ করতে চাচ্ছিলাম না। সাথে আগের বিষয়গুলোত ছিলই যেহেতু আমরা পেশাদার, আগের বকেয়া ছিল সবমিলিয়ে তাই কাজ করতে আগ্রহী ছিলাম না। এটাই উনাদের জানাই এবং সুন্দর আলোচনা করেই সরে আসি।’
নাফিস অবশ্য জানিয়েছেন গত আসর শুরুর আগ থেকে টুর্নামেন্ট শেষ হওয়া পর্যন্ত চুক্তির একটা অংশ তারা ঠিক সময়েই বুঝে পেয়েছেন। এমনকি দলের জয়ী ম্যাচগুলোতে পেয়েছেন উইনিং বোনাস সহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধাও। কিন্তু টুর্নামেন্ট শেষে দেশে ফেরার পরই তৈরি হয় দূরত্ব। আর এই দূরত্বের পেছনের কারণ জানা নেই তারও।
তিনি যোগ করেন, ‘তারা কিন্তু প্লেয়ার পেমেন্ট সব ঠিকই করেছে। আমরা তৃতীয় হয়েছিলাম এই ম্যানেজমেন্ট নিয়ে। নতুন একটা ফ্র্যাঞ্চাইজি, এনওসি জটিলতায় প্লেয়ার পরিবর্তন করতে হয়েছিল। এসবের পরও আমরা তৃতীয় হয়েছি। জেতার পর যে উইনিং বোনাস বা অন্যান্য যা ছিল সবই তারা দিয়েছে দুবাইতেই।’
‘কিন্তু ওখান থেকে আসার পরই আমি জানিনা কি হয়েছিল কি কারণে একটা দূরত্ব তৈরি হয়। আমি আসলে কোন কারণ খুঁজে পাইনা দূরত্ব সৃষ্টির। যদি এমন হত আপনারা দল করছেন না তখন ঠিক আছে বুঝতাম সমস্যায় আছে। কিন্তু আপনারা দল করছেন, আমরা পেশাদার, কষ্ট করেছি বকেয়াটা পরিশোধ হয়ে গেলে ভালো হয়।’
দলটির সহকারী কোচের দায়িত্ব পালন করা নাজিম উদ্দিনেরও একই বক্তব্য, ‘আমাদের চুক্তির ৪০ শতাংশ এখনো বাকি। সপ্তাহ খানেক আগে আমাদের সাথে যোগাযোগ হয় মালিকপক্ষের। তারা আশ্বাস দিয়েছে বকেয়া পরিশোধ করে দিবে। তবে এখনো পর্যন্ত পাই নি। যে ৬০ শতাংশ পেয়েছি সেটা গতবার টুর্নামেন্ট শুরুর আগে দেশে থাকতেই পেয়েছি।’