

দ্য নিউ নরমালে অফলাইনের চেয়ে অনলাইনের চাহিদাই বেশি। এই চাহিদাকে মাথায় রেখে খেলাধুলার অনন্য এক অনলাইন স্কুল/অ্যাকাডেমি গড়ে তোলা হয়েছে বাংলাদেশে। অনলাইন তো বটেই অফলাইনেও মেন্টরদের কাছ থেকে সরাসরি টিপস নেয়ার সুযোগ রেখেছে খেলাধুলার অনলাইন অ্যাকাডেমি খেলবেই বাংলাদেশ।
খেলবেই বাংলাদেশের ভাবনা প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা জনাব কাজী সাবিরের মাথায় আসে হুট করেই। নিজের ছেলেকে স্কেটিং শেখানোর জন্য স্কেটিং ক্লাসে দিতে চাচ্ছিলেন তিনি। রাজধানীর নিকেতনের বাসিন্দা কাজী সাবির স্কেটিং ক্লাসের জন্য গুগোল করে সন্তোষজনক ফল পাননি, মতিঝিলের ক্রীড়া কমপ্লেক্স এসেছিল সাজেশনে, সাথে জাহাঙ্গীরনগরের আশেপাশে একটি।
ছেলেকে অবশ্য এতদূরে স্কেটিং শিখতে পাঠাতে হয়নি তাকে। পরে জানতে পারেন গুলশান ইয়ুথ ক্লাবে শেখানো হয় স্কেটিং। স্পোর্টস ক্লাব বা অ্যাকাডেমির ক্লাসিফাইড তথ্যের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করতে পারেন তখনই।
ক্রিকেট৯৭ এর সাথে নিজের ব্রেইন চাইল্ড খেলবেই বাংলাদেশ সম্পর্কে জানাতে কাজী সাবির বলেন, ‘আমার মনে হল যদি এরকম প্ল্যাটফর্ম থাকতো যেখানে সব স্পোর্টসের ক্লাবগুলো, অ্যাকাডেমির এলাকাভিত্তিক তথ্য থাকবে, মানুষ ফিল্টার করতে পারবে। কীভাবে ভর্তি হবে, কখন ক্লাস করবে। মূলত সেখান থেকেই খেলবেই বাংলাদেশের কনসেপ্ট টা শুরু। এবং তারপর যেটা মনে হল যে ইউটিউবে খেলার যে টিপস আছে তা বেশিরভাগই ইংলিশে। বাংলাতেও আছে অবশ্য কিছু। তো ভাবছিলাম এরকম কোন প্ল্যাটফর্ম হোক যেখানে বাংলায় খেলার টিপস থাকবে, রাজধানীর বাইরের ছেলেমেয়েরাও যেখান থেকে শিখতে পারবে।’
শুধু ভাবলেই তো চলবে না, সেটার বাস্তবায়নও জরুরি। খেলবেই বাংলাদেশের স্বপ্নের সফল বাস্তবায়নের জন্য শুরুতেই খোলা হয় এক ইউটিউব চ্যানেল। পরবর্তীতে খেলবেই বাংলাদেশের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট লঞ্চ করা হয়। বিভিন্ন স্পোর্টস অ্যাকাডেমির তথ্য ফোন করে যাচাই করা হয়, আনা হয় বেশ কিছু অনলাইন কোর্স।
স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে আসে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জও। মূল চ্যালেঞ্জটা হয়ে দাঁড়ায় মোবাইল সংষ্কৃতি।। গ্যাজেট নির্ভর জেনারেশশের কাছে মাঠের খেলার আগ্রহ জাগিয়ে তোলাটা বড়সড় এক চ্যালেঞ্জই বটে। এছাড়া টার্গেট অডিয়েন্স (যারা খেলছে) এর কাছে পৌঁছানোটাও সহজ কোন কাজ ছিল না খেলবেই বাংলাদেশের সামনে। সেই চ্যালেঞ্জকে অতিক্রম করতে কাজ করে চলেছে প্রতিষ্ঠানটি।
অনেকেই অবশ্য বলতে পারেন, পানিতে না নেমে কি সাতার শেখা যায়? এই প্রশ্নে খেলবেই বাংলাদেশের উত্তর একেবারে স্পষ্ট- ‘খেলোয়াড় তৈরি করছি না, শেখাচ্ছি’। বাংলাদেশে খেলাধুলার অনলাইন প্ল্যাটফর্মের ধারণা নতুন হলেও বাইরের দেশে এটি চলছে। ইংল্যান্ডের সাবেক ক্রিকেটার, বর্তমানে সহকারী কোচ পল কলিংউডের আছে এমন অ্যাকাডেমি। ভারতের সফলতম অধিনায়ক মাহেন্দ্র সিং ধোনিও এমন অ্যাকাডেমি করতে চলেছেন।
খেলবেই বাংলাদেশের মূল লক্ষ্য রাজধানী ঢাকার বাইরে যারা আসলেই খেলা শিখতে চায় তাদেরকে বিশ্বমানের কোচিংয়ের সুযোগ করে দেওয়া। আর সেটা অনলাইনেই সম্ভব। দেশের যেকোন প্রান্ত থেকেই শাহরিয়ার নাফিস, সাইফুল বারি টিটু, এনায়েতউল্লাহ খানদের মতো ব্যক্তিদের কাছ থেকে খেলা শেখার ও খেলা সম্পর্কে জানতে পারবে। দেশসেরা কোচ এখন হাতের মুঠোয়। প্রতিষ্ঠাতার ভাষ্যমতে এই কোচেরাই খেলবেই বাংলাদেশের মূল চালিকাশক্তি।
অনলাইনে কোচদের মেন্টরশিপ গাইডেন্স পাবার পাশাপাশি সুযোগ থাকবে অনফিল্ড মাস্টার ক্লাসের। যেখানে ভালো করতে পারলে ক্লাব ট্রায়ালের সুযোগ আসবে।
এই মুহূর্তে ক্রিকেট, ব্যাডমিন্টন, ফুটবলের অনলাইন কোর্স চালু রেখেছে খেলবেই বাংলাদেশ। সামনে টেবিল টেনিস সহ প্রচলিত সব খেলার অনলাইন কোর্স আনতে চায় খেলবেই বাংলাদেশ।
ঢাকার বাইরে থেকে অনেকেই এখন অব্দি খেলা শিখছেন, অভিভাবকের সাহায্য নিয়ে অ্যাসাইনমেন্ট জমা দিচ্ছেন। এটাই খেলবেই বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি সন্তুষ্টির জায়গা। খেলবেই বাংলাদেশের সাথে সাথে কোচেরাও সন্তুষ্ট, দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ছাত্রদের রিচ করতে পেরে।
খেলবেই বাংলাদেশ নামটার স্বার্থকতা এনেছে এই প্ল্যাটফর্মের বহুমাত্রিকতা। ৬ থেকে ৬০ বছরের যেকেউ এখান থেকে খেলা শিখতে পারবেন। সম্প্রতি ধানমন্ডি ক্রিকেট অ্যাকাডেমির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে খেলবেই বাংলাদেশ। যেখানে ছুটির দিনে ৩৫ এর বেশি বয়সীরা খেলতে পারবেন। শুধু যে খেলোয়াড় হতেই খেলা শিখতে হবে সেটা মনে করেনা খেলবেই বাংলাদেশ। বরং ভালো লাগা ও ভালো থাকার জন্যেও খেলাটা জরুরি, সেখানে যেকোন জায়গার, যেকোন বয়সীদের খেলা শেখাতে আছে খেলবেই বাংলাদেশ।