
বাংলাদেশ ক্রিকেটে ফিটনেস যাচাইয়ে যোগ হচ্ছে ইয়ো ইয়ো টেস্ট। এতদিন বিপ টেস্টের মাধ্যমে ফিটনেস প্রমাণ করলেও এবার ভারত, পাকিস্তান, ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ডের মত ইয়ো ইয়ো টেস্টের পথে হাঁটছে বিসিবি। মূলত জাতীয় দলের নতুন হেড অফ ফিজিক্যাল পারফরম্যান্স নিকোলাস ট্রেভর লি’র চাওয়াতেই এই পদ্ধতির সংযোজন। আসন্ন বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি লিগের আগে ক্রিকেটারদের ফিটনেস যাছাইয়ে প্রয়োগ হবে ইয়ো ইয়ো টেস্ট।
তার আগে বেশ কয়েকজন ক্রিকেটারদের নিয়ে পর্যবেক্ষণ চালাচ্ছেন ইংলিশ ম্যান নিকোলাস ট্রেভর লি। গতকাল (২ নভেম্বর) তামিম ইকবাল, আবু হায়দার রনি, আল আমিন হোসেন, মুমিনুল হক, সৌম্য সরকার, তাইজুল ইসলামরা ট্রায়ালে অংশ নেন। আজ (৪ নভেম্বর) এই ট্রায়ালে নাম লেখান মোহাম্মদ মিঠুন, ইমরুল কায়েস, নাজমুল হোসেন শান্ত ও মুস্তাফিজুর রহমান।
সকালে মোহাম্মদ মিঠুন ও ইমরুল কায়েসের ইয়ো ইয়ো টেস্ট দিয়ে শুরু। ইয়ো ইয়ো টেস্টে বেঞ্চ মার্ক স্পর্শ করে দীর্ঘক্ষণ একাডেমি মাঠে ব্যাটিং অনুশীলন করেন ইমরুল কায়েস। তার আগেই অবশ্য সেখানটায় প্রায় ঘন্টাখানেকের বেশি অনুশীলন করেন তামিম ইকবাল। তাকে সঙ্গ দিয়েছেন কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিন। ব্যাটিং পজিশন, শটের ভুল ত্রুটি ধরিয়ে দেওয়া সহ ব্যাটিংয়ের ভিডিও করে রাখেন দেশের অন্যতম সেরা এই কোচ।
দিন কয়েক পরই পাকিস্তান সুপার লিগের (পিএসএল) প্লে-অফ খেলতে পাকিস্তানের উদ্দেশ্যে উড়াল দেওয়ার কথা রয়েছে তামিমের। লাহোর কালান্দার্সের হয়ে খেলতে যাওয়া তামিমের সঙ্গী সতীর্থ মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ খেলবেন মুলতান সুলতান্সের হয়ে। বিসিবি প্রেসিডেন্টস কাপে নিজের নামের প্রতি সুবিচার করতে না পারা তামিমের সাফল্যের তাড়না দেখা যাচ্ছে বেশ ভালোভাবে। বিসিবি প্রেসিডেন্টস কাপে খারাপ করলেও টুর্নামেন্ট শেষে নিজ তাগিদে নিয়মিতই একাডেমি মাঠে করছেন ব্যাটিং, ফিটনেস অনুশীলন।
কোচ সালাউদ্দিনের তত্বাবধানে চলা এই অনুশীলনে আজ (৩ নভেম্বর) বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যানকে থ্রোয়ার ছাড়াও বল ছুঁড়েছেন তাইজুল ইসলাম, পেসার আল আমিন হোসেনরা। বোলিং অ্যাকশন বদলানো তাইজুল ইসলামকেও কিছু পরামর্শ দিতে দেখা যায় সালাউদ্দিনকে। ব্যাটিং করা তামিমের পেছনে দাঁড়িয়ে বেশ গভীর ভাবে পর্যবেক্ষণ করেছেন তামিম-তাইজুল দুজনকেই।
তামিমের অনুশীলন শেষে নেটে আসেন ইমরুল কায়েস। ইমরুলকেও বল করেছেন তাইজুল, আল আমিন সাথে ছিল একজন থ্রোয়ার। ঘন্টাখানেক ব্যাটিং অনুশীলন শেষে ইমরুল ফিরলেও একা একা বোলিং অনুশীলন করেছেন চোটে পড়া পেসার শফিউল ইসলাম। একদিন আগেই বিসিবির চিকিৎসক দেবাশীস চৌধুরী জানিয়েছেন মেরুদন্ডের ডিস্কে শফিউলের ব্যথা কখনোই পুরোপুরি ঠিক হবে না। খেলতে হবে এই ব্যথা নিয়েই, তবে সেটি সহনীয় পর্যায়ে রাখার প্রক্রিয়া রাখতে হবে অব্যাহত।
তামিম-ইমরুলরা যখন একাডেমি মাঠের নেটে ব্যাটিং অনুশীলন করছেন ঠিক তার পাশেই চোট কাটিয়ে মাঠে ফেরার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন দুই পেসার ইয়াসিন আরাফাত মিশু ও হাসান মাহমুদ। দুজনেই পুনর্বাসন প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে মেডিকেল টিমের পরামর্শ মেনে রানিং করছিলেন। দুপুর দুইটা নাগাদ ট্রেনার ইফতির অধীনে ইয়ো ইয়ো টেস্টের ট্রায়ালে অংশ নেন নাজমুল হোসেন শান্ত ও মুস্তাফিজুর রহমান।
দুজনেই বেঞ্চমার্ক ১৮ স্পর্শ করে তবেই থেমেছেন। বিশ্বের একেক দেশে ইয়ো ইয়ো টেস্টের মানদন্ড একেক রকম। ভারতে ১৬.১, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কায় ১৭.৪, ইংল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ডে ১৯। দুইদিনের ট্রায়ালে বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের জন্য তা নির্ধারণ করা হয়েছিল ১৭-১৮। অংশ নেওয়া প্রায় সব ক্রিকেটারই উতরে গেছেন এই মানদন্ড।
ঠিক ঐ সময়টায় শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে নিজেদের মধ্যে ভাগ হয়ে দুইদিনের প্রস্তুতি ম্যাচে লড়ছেন হাই পারফরম্যান্স ইউনিটের (এইচপি) ক্রিকেটাররা। সব মিলিয়ে মিরপুর জাতীয় ক্রিকেট একাডেমি ও শের-ই-বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে নিয়মমিত এভাবেই ক্রিকেটারদের পদচারণা হচ্ছে। সরব হচ্ছে বেশিরভাগ ক্রিকেটীয় কার্যক্রম। যা দেশের ক্রিকেটের জন্য দারুণ এক বার্তাও বটে…