

বিসিবি প্রেসিডেন্টস কাপে যে কজন ক্রিকেটার আলো নিজের দিকে কেড়ে নিয়েছেন তাদের মধ্যে পেসার সুমন খান অন্যতম। নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবিএ তে অধ্যয়নের মাঝপথেই ক্রিকেটার হওয়ার নেশা জেকে বসে। সেই স্বপ্ন পূরণে বাবার ছুঁড়ে দেওয়া কঠিন চ্যালেঞ্জ নিয়েই নর্থ সাউথ অধ্যায়ের ইতি টেনে ভর্তি হন বিকেএসপির ডিগ্রিতে।
সেই পথ চলার শুরু থেকে নানা বাধা বিপত্তি, নিজের সাথে লড়াই, পেসার হান্ট থেকে বাদ পড়া সব মিলিয়ে বেশ সংগ্রামী একটা অধ্যায় মানিকগঞ্জের এই পেসারের। বিসিবির হাই পারফরম্যান্স (এইচপি) ইউনিটে সুযোগ পেয়েছেন আগেই, আছেন এবারের ক্যাম্পেও। তবে মাঝে বিসিবি প্রেসিডেন্টস কাপে পেসারদের সাফল্যের ভীড়ে নিজেকে তুলে ধরেছেন ভিন্ন আঙ্গিকে। ফাইনালে তার ৩৮ রানে ৫ উইকেট দলের শিরোপা জয়ে বড় অবদান রাখে।
কেবল ফাইনাল নয় সুযোগ পাওয়া তিন ম্যাচেই ছিলেন ধারাবাহিকভাবে সফল। তিন ম্যাচে ১৩.৪৪ গড়ে ৯ উইকেট নিয়ে আছেন টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারির তালিকায় তিন নম্বরে। এমন একটি টুর্নামেন্ট শেষে বিশ্রামের সুযোগ নেই অবশ্য এই পেসারের। আজ (২৭ অক্টোবর) থেকে পুনরায় শুরু হওয়া এইচপি ক্যাম্পের অনুশীলনে যোগ দিতে হয়েছে সুমন খান সহ ২৬ ক্রিকেটারকে।
কোচ টবি রেডফোর্ডের অধীনে প্রথম দিনের অনুশীলন শেষে সুমন খান জানিয়েছেন এইচপি ক্যাম্পের গুরুত্ব। বিশেষ করে তার মত বয়সভিত্তিকে না খেলে আসা ক্রিকেটারদের জন্য বড় সুযোগ বলেও মানছেন এই পেসার।
তিনি বলেন, ‘এইচপি একটা ভালো প্ল্যাটফর্ম, বিশেষ করে আমি এখানে এসেছি, আমার কোন বয়সভিত্তিক খেলার অভিজ্ঞতা ছিলনা। আল্লাহর অশেষ রহমত বিসিবি একটা সুযোগ করে দিয়েছে এখানে থেকে নিজেকে প্রস্তুত করার জন্য। নিজের স্কিল উন্নতি, ফিটনেস উন্নতি করার জন্য।’
‘সেক্ষেত্রে বলবো এইচপি একটা ভালো জায়গা নিজেকে প্রস্তুত করার অন্যতম মাধ্যম। এইচপি তরুণ বা আপকামিং প্লেয়ার যারা তাদের জন্য রাস্তা বা সিঁড়ি যেটাকে বলে এখান থেকে আসলে প্রস্তুত করা। আসলে জাতীয় দলে যাওয়ার আগে যদি এখান থেকে পারফরম্যান্স, মানসিকতা বা টেকটিক্যালি নিজেকে প্রস্তুত করা যায় সে ক্ষেত্রে জাতীয় দলে টিকে থাকার সম্ভাবনা বেশি থাকে। এটা এমন এক প্ল্যাটফর্ম যেখানে খেলোয়াড় গড়ে তোলার মাধ্যম।’
এদিকে বিসিবি প্রেসিডেন্টস কাপ শেষে মুশফিকুর রহিম ও তার দলের অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের প্রশংসা পেয়েছেন তরুণ এই পেসার। যা তাকে সামনে এগোতে অনুপ্রাণিত করছে বলে জানান সুমন খান, ‘রিয়াদ ভাই সব সময় প্রশংসা করেছে। ম্যাচ শেষে ভালো করার পর রিয়াদ ভাই এসে বলল যে ভালো লাইন লেন্থে বল করেছো। এটা আমার জন্য দরকার ছিল, উনিই আমাকে অ্যাপ্রেসিয়েট করল, বলল ওয়েল ডান।’
‘ম্যাচ শেষে মুশফিক ভাইয়ের সাথে যখন হ্যান্ডশেক করছিলাম তখন উনিও বলল যে খুব ভালো বল হয়েছে, দরকার ছিল এটা তোমার জন্য। বড় ভাইদের কাছ থেকে যখন এরকম কিছু পাওয়া হয়, ভালো বলে তখন স্বাভাবিক নিজের কাছে ভালো লাগে। এটা মাত্র শুরু, এখন বড় ভাইরা যত প্রশংসা করবে সামনে দিকে এগোনোর জন্য তত ভালো কাজ হবে। মুশফিক ভাই, রিয়াদ ভাইদের সাথে খেলা হয়েছে এখান থেকে অনেক অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি। ভবিষ্যতে এই অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে চেষ্টা করবো। ‘
নর্থ সাউথ ছেড়ে বিকেএসপিতে যাওয়া এই পেসার জানালেন এখন ক্রিকেটোই তার ধ্যান, জ্ঞান, পুরো মনযোগ ২২ গজেই। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আসলে যেদিন থেকে নর্থ সাউথ বা পড়াশোনা ছেড়ে ক্রিকেটে চলে আসি সেদিন থেকে আমার সব মনযোগ ক্রিকেটেই। ক্রিকেট নিয়েই এগিয়ে যাবো, আশা আছে টপ লেভেল খেলার। ইন শা আল্লাহ একদিন খেলবো।’
এদিকে প্রেসিডেন্টস কাপে ভালো করার পর ভালো করার দায়িত্ব বেড়েছে উল্লেখ করে ২০ বছর বয়সী এই তরুণ যোগ করেন, ‘আসলে সবার প্রত্যাশা বেড়ে গেছে এখন, আমার দায়িত্বও বেড়ে গেল। পারফর্ম করাতে সবাই হয়তো ভাবছে সামনে আরও ভালো করতে হবে, তাহলে সুযোগ আসবে। এ জন্য আমার নিজের উপরও দায়িত্ব এসেছে যে এখন ভালো করছি সামনে আরও ভালো করার চেষ্টা থাকবে। এই ধারাবাহিকতাটাই যেন ধরে রাখতে পারি সে চেষ্টায় আছি।’