‘এখানেই সন্তুষ্ট হয়ে পড়ে থাকা যাবেনা’

ছক্কা মেরেও আউট ইরফান শুক্কুর
Vinkmag ad

ইরফান শুক্কুর প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটই খেলেন ১০ বছর ধরে, ঘরোয়া ক্রিকেটের নিয়মিত পারফর্মারও। অবশ্য বয়স ভিত্তিক হিসেবে করলে ক্রিকেট ক্যারিয়ারটা আরও দীর্ঘ। ধারাবাহিক পারফর্ম করলেও সব আলো নিজের দিকে ফেরানোর মত নজর কাড়তে পারেননি। অবশেষে বিসিবি প্রেসিডেন্টস কাপ বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যানের কাছে সেই মঞ্চ হয়েই এলো। করোনা পরবর্তী মাঠে ফিরে বেশিরভাগ ব্যাটসম্যান যখন সংগ্রাম করছে ইরফান সেখানে দেখিয়েছেন ধারাবাহিকতার নজির।

মূলত টপ অর্ডার, মিডল অর্ডারে খেললেও দলের কম্বিনেশনের কারণে নাজমুল একাদশের হয়ে ব্যাট করেছেন ৭ নম্বরে। কঠিন সব পরিস্থিতিতে নেমে ৫ ম্যাচে ৭১.৩৩ গড়ে রান করেছেন ২১৪। যা মুশফিকুর রহিমের (২১৯) পর টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত সংগ্রহ। ফাইনালে তার ৭৫ রানের ইনিংসের পর দল হারলেও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চট্টগ্রামের এই ব্যাটসম্যান।

ফাইনাল শেষে আজই (২৬ অক্টোবর) ফিরে গেছেন চট্টগ্রামে। সেখান থেকে মুঠোফোনে ‘ক্রিকেট৯৭’ কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন নিজের অনুভূতি, লক্ষ্য, পরিশ্রমসহ নানা বিষয়। পাঠকদের জন্য নিচে তুলে ধরা হল-

ক্রিকেট৯৭: ঘরোয়া ক্রিকেটে নিয়মিত পারফর্ম করেছেন কিন্তু একটা নির্দিষ্ট মৌসুম ছিলনা যেখানে পুরো নজর টা থাকবে আপনার দিকে। এই টুর্নামেন্ট শেষে চিত্রটা ভিন্ন। পাদপ্রদীপের আলো আপনার দিকে। এই ব্যাপার টা কীভাবে দেখছেন?

ইরফান শুক্কুর: অনেক ভালো লাগছে। সবাই আলোচনা করছে, এটা নিঃসন্দেহে ভালো লাগার বিষয়। কিন্তু এখানেই সন্তুষ্ট হয়ে পড়ে থাকা যাবেনা। আবারও ট্রেনিং শুরু করতে হবে, ক্রিকেটে ফিরতে হবে। সবার প্রশংসা আমাকে অনুপ্রাণিত করছে, দুই-চারদিন এটার রেশ তো থাকবেই। তবে সবমিলিয়ে সামনে আরও অনেক পথ বাকি, সেদিকেই মনযোগী হতে চাই।

ক্রিকেট৯৭: বয়সভিত্তিকে যাদের সাথে খেলেছেন তাদের অনেকেই জাতীয় দলে। আলোচনায় আসতে একটু দেরিই হল কিনা?

ইরফান শুক্কুর: হ্যাঁ, আমার সাথের অনেকেই জাতীয় দলকে প্রতিনিধিত্ব করছে। একটু তো খারাপ লাগতোই। কিন্তু আমার নিজেরও কিছু ঘাটতি ছিল, মাঝে ইনজুরিতে ছিলাম। আর পরিশ্রমের বিকল্প নেই এই জিনিসটা সেভাবে বুঝতে পারতাম না। মূলত সৌরভ (মুমিনুল হক) ভাই আমাকে বেশি অনুপ্রাণিত করেছে। পরিশ্রম করতে হবে, ফিটনেস থেকে শুরু করে সবকিছুতে শৃঙ্খলার বিকল্প নেই এসব উনি আমাকে সবসময় বলতেন। এরপরই আসলে ফিটনেস, স্কিল থেকে জীনযাপনে অন্যান্য বিষয়েও যতটা সম্ভব শৃঙ্খলা আনতে চেষ্টা করেছি।

ক্রিকেট৯৭: করোনা পরবর্তী মাঠে ফিরে বেশিরভাগ ব্যাটসম্যান যখন সংগ্রাম করছিল তখন আপনি ধারাবাহিকভাবে রান করেছেন। কোন রহস্য?

ইরফান শুক্কুর: আসলে তেমন কোন রহস্য না (হাসি)। লকডাউনের সময়টায় নিজেকে অন্যভাবে সাজিয়েছি। জিমের জন্য যা যা প্রয়োজন সব কিনেছি, বাসায় মোটামুটি ছোটখাটো একটা ওয়ার্ক স্টেশন বা জিমনেশিয়ামের মত বানিয়ে ফেলি। পুরো সময়টায় নিজের ডায়েট থেকে শুরু করে নিউট্রিশন সবকিছুই পরিকল্পনার মধ্যে এনেছি। মানে যখন যেটা করা দরকার সেটাতে মনযোগ দিয়েছি।

ক্রিকেট৯৭: এমনিতে টপ অর্ডার, মিডল অর্ডারে ব্যাট করেন। এখানে ৭ নম্বরে খেলতে হয়েছে, আবার সফলও হয়েছেন। চ্যালেঞ্জটা কীভাবে মোকাবেলা করলেন?

ইরফান শুক্কুর: আসলে ৭ নম্বর পজিশনে ব্যাট করেছি সাথে প্রতিটি ম্যাচেই আমাকে ভিন্ন ভিন্ন পরিস্থিতিতে খেলতে হয়েছে। বিশেষ করে এই পজিশনে ব্যক্তিগত কোন চাওয়ার সুযোগ ছিলনা। দলকে যতটা সাহায্য করতে পারি, দলের জয়ে অবদান রাখতেই চেষ্টা করেছি। আর আলাদা কোন পরিবর্তন আনিনি ব্যাটিংয়ে, শুধু নিজের শক্তির জায়গায় ফোকাস করেছি, স্বাভাবিক খেলাটা খেলেছি।

 

View this post on Instagram

 

Who impressed you the most? #bcbpresidentscup #Cricket

A post shared by cricket97 (@cricket97bd) on

ক্রিকেট৯৭: মুশফিকুর রহিমের সাথে একই দলে খেলেছেন, দুজনেই আবার টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের তালিকায় শীর্ষ দুইয়ে। অভিজ্ঞতাটা কেমন?

ইরফান শুক্কুর: আসলে উনিতো বড় মাপের ক্রিকেটার, আলাদা করে বলার কিছু নেই। উনি কথা কম বলে কিন্তু যতটুকু বলে শৃঙ্খলার দিকেই বাড়তি জোর দেয়। উনি বলেছে ক্যারেক্টার শো করতে, মানে শুধু ক্যারেক্টার অ্যাক্ট না, নিজেকে মেলে ধরতে। উনার প্রতিটি কাজেই ডিসিপ্লিন থাকে, দেখা যাচ্ছে প্র্যাকটিসে গেলে তাকে দেখে যে কেউই অনুপ্রাণিত হবে। সবচেয়ে পরিশ্রমি ক্রিকেটারদের একজন, তার কাছ থেকে এসব আয়ত্ব করার চেষ্টা করেছি।

ক্রিকেট৯৭: ঘরোয়া লিগের পারফর্মার হলেও সাধারণ দর্শকরা আপনার খেলা ওভাবে আগে দেখেনি। এই টুর্নামেন্টে দর্শকমহলেও ইরফান শুক্কুর আলোচনায়। ব্যাপারটা উপভোগ করছেন নিশ্চয়ই?

ইরফান শুক্কুর: হ্যাঁ, উপভোগ্যতো অবশ্যই। ভালো খেললে মানুষ প্রশংসা করে এটা বাড়তি অনুপ্রেরণা দেয়। কিন্তু ঐ যে বললাম মনযোগটা আসলে ক্রিকেটেই রাখতে চাই, কিছুদিন পর আবার ট্রেনিং শুরু হবে, ক্রিকেট খেলতে হবে।

ক্রিকেট৯৭: ভাবনায় কি এবার জাতীয় দল? আর তেমনটি হলে ঠিক কোন ফরম্যাটের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে চান?

ইরফান শুক্কুর: প্রত্যেকটা ক্রিকেটারই তিন ফরম্যাটে খেলার স্বপ্ন দেখে। সাম্প্রতিক পারফরম্যান্সে আমি হয়তো সংক্ষিপ্ত ফরম্যাট ওয়ানডে বা টি-টোয়েন্টির জন্য বিবেচিত হতে পারি। কিন্তু আল্টিমেটলি সব ফরম্যাটেই খেলার স্বপ্ন দেখি, লাল বলের জন্যও নিজেকে প্রস্তুত করতে চাই।

ক্রিকেট৯৭: কোচ, নির্বাচক এমনকি বোর্ড সভাপতিও আলাদা করে প্রশংসা করেছেন। এটা কীভাবে নিচ্ছেন?

ইরফান শুক্কুর: বোর্ড সভাপতি আমার নাম আলাদা করে বলা, প্রশংসা করা এটা অন্যরকম অনুভূতি। আমি অনেক বেশি উত্তেজিত এসবে, কিন্তু এখনই সব শেষ নয়। অনেক পথ বাকি, তাদের নজরে আসাটা ইতিবাচক। আমি আমার স্বপ্নের পথে এগুলোকে একেকটা সিঁড়ি হিসেবে ভাবছি।

ক্রিকেট৯৭: সর্বশেষ বিপিএলে আন্দ্রে রাসেল, শোয়েব মালিকদের মত বিদেশি ক্রিকেটারদের সাথে খেলেছেন। তাদের সাথে ড্রেসিং রুম ভাগাভাগির অভিজ্ঞতা কেমন?

ইরফান শুক্কুর: আন্দ্রে রাসেল, শোয়েব মালিকরা তো টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটেরই কিংবদন্তী। তাদের চিন্তা চেতনা সম্পূর্ণ আলাদা, তারা কখনো হাল ছাড়তে নারাজ। যত কঠিন পরিস্থিতিই হোক তাদের ভাবনা থাকে যে কোনভাবে ম্যাচ বের করে আনা। মানে নেভার গিভ আপ মানসিকতা। অনেক কিছু শিখতে পারি আমাদের মত তরুণরা, যা আমাদের বুস্ট আপ করে সবদিক দিয়ে।

নাজমুল হাসান তারেক

Read Previous

পিসিবির কেন্দ্রীয় চুক্তিতে ১৮৭ ক্রিকেটার

Read Next

ভারতের টি-টোয়েন্টি দলে বরুণ, তিন ফরম্যাটেই নেই রোহিত শর্মা

Total
0
Share