

গেলবছর আজকের (১৪ জুলাই) দিনে প্রথমবারের মত বিশ্বকাপ শিরোপা জিতে নেয় ইংল্যান্ড। কাগজে কলমে হয়তো বিজয়ী দলের নাম ইংল্যান্ড কিন্তু লর্ডসে ইংল্যান্ড-নিউজিল্যান্ড ম্যাচটি সেদিন মূলত বিধাতা ক্রিকেটকেই জিতিয়ে দিয়েছিল।
মাত্র ২৪১ রানের পুঁজি নিউজিল্যান্ডের, তবে বিশ্বকাপ ফাইনাল বলেই এই লক্ষ্য তাড়াতেও নানা নাটকীয়তার জন্ম। না, এউইন মরগানের দল সেদিন লক্ষ্য তাড়া করতে পারেনি, আবার নিউজিল্যান্ডের চেয়ে কমও করেনি। সুপার ওভারে গড়ালো ম্যাচ, আর সেখানেও সমানে সমানে শেষ হল।
অগত্যা সবচেয়ে বেশি বাউন্ডারি হাঁকানো দল হিসেবে ইংল্যান্ডের নামের পাশে যোগ হল শিরোপা বিজয়ী। কিন্তু এরপর অনেক সময় পেরিয়ে গেলেও চায়ের আড্ডায় তর্ক হয় সেদিন লর্ডসে আসলে কারা জিতেছিল এ নিয়ে। মূল ম্যাচতো বটেই, সুপার ওভারেও সমান সংখ্যক রান করার পরও একটা দল পরাজিত দলে থাকবে এটাই আসলে মেনে নিতে কষ্ট ক্রিকেট ভক্তদের। সেদিন নিজ দেশ মাঠে প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করলেও দম বন্ধ করা অনুভূতি হয়েছে কোটি কোটি দর্শকের।
রোমাঞ্চে মোড়ানো, উত্তেজনা ছড়ানো কিংবা নখ কামড়ানো যাই বলা হোক না কেন আসলে কোন বিশেষণেই হয়তো লর্ডসের ফাইনালকে ব্যাখ্যা করা সম্ভব নয়। আর যারা সেদিন মাঠে খেলেছেন তাদের অনুভূতিটাই বা কেমন ছিল অনুধাবন করা না গেলেও অনুমান করা সম্ভব। যার নেতৃত্বে ইংল্যান্ডের ৪০ বছরের বেশি সময়ের আক্ষেপ ঘুচলো সেই এউইন মরগান বলছেন তার কাছে মনে হয়েছিল ‘মরে গিয়ে সমাধি হচ্ছে।’
মূল ইনিংসের শেষ দুই ওভারে ইংল্যান্ডের প্রয়োজন ১২ বলে ২৪! জিমি নিশামের করা ৪৯ তম ওভারের চতুর্থ বলে বেন স্টোকস ছক্কা হাঁকানোর পরেও ঐ ওভার থেকে আসেনি ৯ রানের বেশি। সাথে হারাতে হয় দুই উইকেট। ৮ উইকেট হারানো ইংল্যান্ডের শেষ ওভারে প্রয়োজন ১৫ রান। সেট ও একমাত্র স্বীকৃত ব্যাটসম্যান স্টোকস নিতে পারেন ১৪ রান। ম্যাচ টাই! শুরু অন্যরকম এক রোমাঞ্চকর যাত্রার।
Agony in 2015 ➡️ Ecstasy in 2019#OnThisDay last year Morgan’s men created history 🏆 pic.twitter.com/ZLXmwMbZYF
— England Cricket (@englandcricket) July 14, 2020
কিন্তু ৪৯ তম ওভারে নিশামকে হাঁকানো ঐ ছক্কা ক্যাচ হবে ভেবে অধিনায়ক মরগান নিজকে মৃত ভাবা শুরু করেন। ‘ইএসপিএনক্রিকইনফো’ কে ইংলিশ দলপতি বলেন, ‘আমার কাছে শঙ্কা জাগার মত মুহূর্ত এসেছিল একটি। এটি সম্ভবত দ্বিতীয়বার দেখেছি আমি। জিমি নিশাম বেন স্টোকসকে একটা স্লোয়ার দিল, সে লং অনে উড়িয়ে মারলো। আমার মনে আছে বলটি বাতাসে ছিল…’
‘আর অনেক উঁচুতে উঠে গিয়েছিল যেভাবে আসলে সে পারফেক্ট শটে বাউন্ডারি সীমানা পার করে তেমন ছিলনা। আমি ভাবতে শুরু করি, এটা, এটাই শেষ, বেন (স্টোকস) আউট। আমাদের আরও ১৫ রানের বেশি দরকার। তখনই মনে হচ্ছিল আমরা মরে গিয়েছি ও আমাদের সমাধি করা হচ্ছে।’
সব ছাপিয়ে বিশ্বকাপের ঐতিহাসিক ফাইনলাকে ইংলিশ এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যানও বলছেন ক্রিকেটের চেয়ে বড় কিছু। ২৩৬ ওয়ানডেতে ৭৩৬৮ রানের মালিক মরগান বলেন, ‘প্রকৃতপক্ষে ফাইনলাটি ক্রিকেটের চেয়েও বড় কিছু ছিল। এটি ব্রিটিশ ইতিহাসে অন্যতম সেরা খেলাধুলার দিনে পরিণত হয়েছে। এটা অনেক লম্বা সময় ধরে থাকবে। আর এ কারণেই সম্ভবত বেশি তৃপ্তিদায়ক।’