

২০১০ সালে পাওয়া এক চোট বর্তমান অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়ক (টেস্ট) টিম পেইনের ক্যারিয়ারকেই হুমকিতে ফেলে দেয়। যে ঘটনায় ক্রিকেটের প্রতি ঘৃণা পর্যন্ত জন্মেছিল উইকেট রক্ষক এই ব্যাটসম্যানের। স্পোর্টস সাইকোলজিস্টের শরোণাপন্নের আগে নিয়মিত কান্না করতেন বলেও জানান পেইন।
২০১০ সালে একটি চ্যারিটি ম্যাচ খেলতে গিয়ে আঙ্গুলে চোট পান অজি দলপতি। ডার্ক ন্যানেসের বলে ভাঙা আঙ্গুল নিয়ে লম্বা সময় ধরে ভুগেছেন পেইন। এমনকি অস্ত্রোপচার করতে হয়েছে সাতবার। যে চোটে দুইটি ক্রিকেট মৌসুম হারিয়ে যায় তার জীবন থেকে। মাঠের বাইরে থাকতে থাকতে মানসিকভাবে অবসাদগ্রস্থ হয়ে পড়েন এই ব্যাটসম্যান।
ডার্ক ন্যানেসের প্রায় ১৫০ কিঃমি বেগে করা বলে আঙ্গুল ভাঙার পর ফিরে এসেও ভয় পেতেন জোরে বল করা বোলারদের মুখোমুখি হতে। ২০১৮ সালে বল টেম্পারিং কান্ডে স্টিভ স্মিথ নিষিদ্ধ হওয়ায় অস্ট্রেলিয়ার টেস্ট অধিনায়কত্ব পাওয়া টিম পেইন স্মৃতিচারণ করেন চোটে পড়ার সময়টার।
২০১০ সালে টেস্ট অভিষেক ঐ বছর খেলেছেন ৪ টি টেস্ট। এরপর ঐ চোটে লম্বা সময়ের জন্য মাঠের বাইরে যাওয়া ও দলে পর্যাপ্ত বিকল্প ক্রিকেটার থাকায় ২০১৭ সালের আগে জায়গা মেলেনি। দ্বিতীয় বার টেস্ট দলে ফিরে এক বছরের মাথায় পেয়েছেন অধিনায়কত্ব। তবে মাঝের সময়টায় অনেক যন্ত্রণা সয়েই দেখা পেয়েছেন সোনালী দিনের।
চোট সম্পর্কে বলতে গিয়ে পেইন বলেন, ‘যখন আমি পুনরায় ট্রেনিং ও খেলা শুরু করি খুব একটা খারাপ করছিলাম না। যতক্ষণ পর্যন্ত না জোরে বল করা বোলারদের মুখোমুখি হতে হচ্ছিল। যখনই তারা দৌড় শুরু করতো আমি বলকে আঘাত করার পরিবর্তে ভাবতাম আমার আঙ্গুলে না জানি আবার বল আঘাত করে।’
বাউন্স ব্যাক পডকাস্টে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি আরও যোগ করেন, ‘সেখান থেকে মানসিকভাবে পিছিয়ে যাওয়া শুরু। আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেললাম। কাউকে আমি এসব বলিনি। একটি সত্য হল আমি আসলে আবার আঘাত পাওয়ার ভয়ে ছিলাম, দ্বিতীয়ত আমি আসলে বুঝছিলাম না কী করতে যাচ্ছিলাম।’
এসবের প্রভাব ব্যক্তিগত জীবনেও ভালোভাবে পড়ে উল্লেখ করে অজি কাপ্তান বলেন, ‘আমি ঘুমাতে পারতাম না। আমি খেতে পারতাম না। খেলার আগে আমি খুব নার্ভাস থাকতাম। আমার শক্তিটাও হারিয়ে যেতে বসেছিল। ওভাবে বেঁচে থাকা আমার জন্য খুব ভয়ঙ্কর ছিল। আমি আমার সঙ্গীর কাছেও খুব সাধারণ ছিলাম যে এখন আমার স্ত্রী। আমি সবসময় রেগে থাকতাম।’
‘আমি যা হয়ে উঠেছিলাম তার জন্য বিব্রত বোধ করি। আমি ক্রিকেট অনুশীলন করতে ভালোবাসি। আমি খেলা দেখতেও ভালোবাসি। কিন্তু যখন আমার ঐ বাজে সময়টা আসলো আমি শুধু ঘৃণা করতাম। কারণ আমার বিশ্বাস তৈরি হয় যে আমি ব্যর্থ হব নিশ্চিত। আমার সতীর্থ, আমার সঙ্গী কেউই জানত না আমি কতটা সংগ্রাম করছিলাম। এমনও সময়ে এসেছিল যখন সে (স্ত্রী) কাজে যেত আমি সোফায় বসে বসে কাঁদতাম। এটা অদ্ভুত ছিল, সাথে বেদনাদায়ক।’
পরবর্তীতে একজন মনোবিদ তাকে মানসিকভাবে স্বস্তি এনে দেন বলেও যোগ করেন অজি দলপতি, ‘আমি তার সাথে প্রথমবার যখন দেখা করি তখন ২০ মিনিটের মত সময় কাটাই। আর সেই সাক্ষাতের পর তার কক্ষ থেকে বের হয়ে তাৎক্ষনিকভাবে ভালো অনুভব করতে শুরু করি। আমার মনে হচ্ছিল আমার মধ্যে অন্য এক আমি ঢুকে পড়েছে।’