

২০০৩ বিশ্বকাপে জিম্বাবুয়ের ক্রিকেটার অ্যান্ডি ফ্লাওয়ার ও হেনরি ওলোঙ্গার কালো আর্মব্যান্ড নিয়ে খেলতে নামার কথা অনেকেরই মনে থাকার কথা। মূলত তাদের প্রধানমন্ত্রী রবার্ট মুগাবের গণতন্ত্র বিরোধী কার্যক্রমের প্রতিবাদ ছিল এটি। এই ঘটনার পর হুমকিও পেয়েছেন তারা, ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন জিম্বাবুয়ে। স্থায়ীভাবে ইংল্যান্ডে বসবাস করতে শুরু করা ওলোঙ্গা-ফ্লাওয়ার এমসিসির আজীবন সদস্য হিসেবেও ঘোষিত হন।
কিন্তু ঐ ঘটনার পর এই ইস্যুতে খুব বেশি প্রচারণা চালাননি বলে আফসোস করছেন অ্যান্ডি ফ্লাওয়ার। নিজেদের মাটিতে প্রথম বিশ্বকাপ ম্যাচ আয়োজনের সময়ই সাবেক এই উইকেট রক্ষক ব্যাটসম্যান সতীর্থ ওলোঙ্গাকে নিয়ে কালো আর্মব্যান্ড পরে মাঠে নামেন। এরপর দেওয়া এক বিবৃতিতেও বলেন, ‘আমাদের প্রিয় জিম্বাবুয়ের গণতন্ত্র শেষ হয়ে যাওয়ায় শোক প্রকাশ করছি।’
তাদের সেই প্রতিবাদ বেশ ভালোভাবে বিশ্ব মানবাধিকার সংস্থার নজর কাড়ে। যে ঘটনার কারণে এলোমেলো হয়ে গেল ফ্লাওয়ার-ওলোঙ্গার জীবন সে ইস্যু নিয়ে পরে খুব বেশি সক্রিয় ছিলেন না তারা। যা এখন আফসোসের কারণ হচ্ছে সাবেক জিম্বাবুইয়ান তারকা ব্যাটসম্যানের কাছে।
ক্রিকেট পডকাস্টে নেইল ম্যানথর্পকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে অ্যান্ডি ফ্লাওয়ার বলেন, ‘ঐ ঘটনার প্রভাবকে আরও বিস্তৃতভাবে ছড়িয়ে না দিতে পারায় আফসোস করি। যদি আমরা আরও বুদ্ধিমান হতাম আর আমার অন্তর্নিহিত না হত। প্রেসের উপর অবিশ্বাস না থাকলে, তবে আমি মিডিয়া থেকে লজ্জা পেয়েছি। আসলে কীভাবে আমি এটি ব্যবহার করবো বুঝে উঠতে পারিনি। পেছনে ফিরে তাকালে মনে হয় আমরা যদি মিডিয়ার ব্যবহারটা সেভাবে করতে পারতাম তাহলে বৈশ্বিকভাবে একটা প্রভাব ফেলতে পারতাম।’
‘কিন্তু আমরা একটা বিবৃতি দিতে চেয়েছি। কালো আর্মব্যান্ড পরে নেমেছি এবং দেশের গণতন্ত্র, মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে সেটা তুলে ধরতে চেয়েছি। গণমাধ্যমকে আমরা যেভাবে বিষয়টি নজরে এনে দিয়েছি তাতে কিছুটা প্রভাব হয়তো পড়েছে কিন্তু বড় আকারে একটা শোরগোল ফেলতে পারিনি।’
জিম্বাবুয়ে থেকে বিতাড়িত হয়ে ইংল্যান্ডে এসে কাউন্টি ক্রিকেট খেলেছেন ২০০৬ সাল পর্যন্ত। তবে গণতন্ত্র শেষ হওয়া নিয়ে যে প্রতিবাদে নেমেছিলেন সে ব্যাপারে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন বলে দুঃখ বোধ হয় ৫২ বছর বয়সী ফ্লাওয়ারের।
তিনি বলেন, ‘ইংল্যান্ডে এসে আমার মনযোগ সরে গিয়েছে ব্যাপারটি থেকে যা আমাকে পোড়ায়। দেশে ছেড়ে আমি ও হেনরি ইংল্যান্ডে আসি। আর দুজনেই আমাদের জীবন ও ক্যারিয়ার নিয়ে এগোতে চেয়েছিলাম।’
‘আমরা আয়ের পথ খুঁজেছি, জীবন চালাতে যা প্রয়োজন ছিল। সুতরাং আমি আমার খেলোয়াড়ি ক্যারিয়ারে মনোনিবেশ করি। হেনরি জীবনকে নতুন করে সাজাতে সংগীত ক্যারিয়ারে মনযোগ দিতে চায়। আর সেভাবে প্রতিবাদমূলক কার্যক্রম চালাতে পেরেছি বলে মনে পড়েনা। আমার ছোট্ট একটা পরিবার ছিল। প্রচার-প্রচারণার জন্য সময় কিংবা শক্তি কোনটাই ছিল বল মনে হয়না।’
জিম্বাবুয়ের হয়ে ৬৩ টেস্ট ও ২১৩ ওয়ানডে খেলা অ্যান্ডি ফ্লাওয়ারের জন্মেছে অপরাধবোধও, ‘সুতরাং আমার কিছুটা আক্ষেপ ও অপরাধবোধ আছে। জিম্বাবুয়েতে এমন অনেক মানুষ রয়ে গেছে যারা প্রকৃত সাহসী। তারা দেশের মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে নিরলসভাবে কাজ করে। যা বিরুদ্ধ শক্তির সাথে লড়াই, দেশকে আরও উন্নত করার লড়াই, দাতব্য সংস্থা হিসেবে কাজ করে। আমরা যেটা করেছি সেটা তাদের তুলনায় খুবই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা। তারাই প্রকৃত নায়ক।’