

বাংলাদেশ মানেই যেন স্পিনারদের লীলাভূমি। মোহাম্মদ রফিক, এনামুল হক মনি হয়ে আব্দুর রাজ্জাক, সাকিব আল হাসানের পর এখনকার তাইজুল ইসলাম, নাইম হাসানরাতো তারই উদাহরণ। তবে জাতীয় দলে প্রতিনিধিত্ব করা এসব স্পিনার আগমনের পথটা যারা মসৃণ করেছেন তাদের মধ্যে রামচাঁদ গোয়ালা ও ওয়াহিদুল গণি অন্যতম।
রামচাঁদ গোয়ালাকে বলা হয় দেশের স্বীকৃত প্রথম স্পিনার। টানা ১৫ মৌসুম খেলেছেন আবাহনীর মত ঐতিহ্যবাহী ক্লাবে। ৫৩ বছর বয়সেও ঢাকার ক্রিকেটে নিজেকে উজাড় করে দিতেন ২২ গজে।
অন্যদিকে ওয়াহিদুল গণিকে দেশের সেরা লেগ স্পিনার বলতে এখনো দ্বিধা করেনা ক্রিকেট বিশ্লেষকরা। টানা ২০ মৌসুম খেলেছেন আরেক ঐতিহ্যবাহী ক্লাব মোহামেডানে। জাতীয় দলের হয়ে মাত্র একটি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন। তবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি না থাকা জাতীয় পর্যায়ে খেলেছেন প্রচুর ম্যাচ। বয়সে রামচাঁদ গোয়ালার সাথে পার্থক্য প্রায় ২০ বছর। ক্লাব ক্রিকেটে দুজনে এক দলে খেলেননি কখনো, কিন্তু দেশের হয়ে বিভিন্ন ক্যাম্পে একসাথে কাটিয়েছেন ভালো সময়ই।
খেলোয়াড়ি জীবনের ইতি টেনে রামচাঁদ গোয়ালা বাকি জীবন কাটিয়েছেন নিজ শহর ময়মনসিংহে। অন্যদিকে ওয়াহিদুল গণি নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন অন্যতম সেরা কোচদের একজন হিসেবে। মোহাম্মদ আশরাফুল, শাহরীয়ার নাফীস থেকে হালের আমিনুল ইসলাম বিপ্লব, যুব দলের রাকিবুল হাসানের মত ক্রিকেটার তার হাত ধরেই উঠে এসেছে।
আজ (১৯ জুন) ৮১ বছর বয়সে পরলোক গমন করেন রামচাঁদ গোয়ালা। রফিক, রাজ্জাক, সাকিবদের জন্য পথ প্রদর্শক হিসেবে নিজেকে নিংড়ে দেওয়া তারকা এই স্পিনারকে কাছ থেকে দেখেছেন ওয়াহিদুল গণি। বর্তমানে বিসিবির গেম ডেভেলেপমেন্ট বিভাগের এই কোচ ‘ক্রিকেট৯৭’ এর সাথে আলাপে স্মৃতিচারণ করেছেন রামচাঁদ গোয়ালাকে নিয়ে-
‘গোয়ালা দা লম্বা সময় আবাহনীর হয়ে খেলেছেন। ক্লাব ক্রিকেটে উনার সাথে একই দলে খেলার সুযোগ হয়নি। আমি দীর্ঘদিন খেলেছি মোহামেডানের হয়। ক্লাবে একসাথে না হলেও বিভিন্ন ক্যাম্পে আমরা একসাথে সময় কাটিয়েছি। উনাকে দেখে যে কেউই অনুপ্রাণিত হবে। বয়সটা উনার কাছে কখনোই বাধা হয়ে আসেনি। বয়সেও উনি আমাদের অনেক সিনিয়র ছিলেন। কিন্তু যেভাবে দাপটের সাথে খেলেছেন তাতে বয়সটা পাত্তা পেতনা তার কাছে।’
‘অসাধারণ বোলার ছিল। সবচেয়ে বড় বিষয় মনোবল এত শক্ত ছিল। তা না হলে ৫০ বছরের বেশি বয়স পর্যন্ত ক্রিকেট খেলা অসম্ভব। আবাহনীর মত ক্লাবে টপ লেভেলের ক্রিকেট খেলা সত্যি অসাধ্য বলা চলে। তাও এমন একটা সময়ে যখন আন্তর্জাতিক আঙিনায় দেশের কোন ইতিবাচক ফল নেই। ক্রিকেটের প্রতি তার নিবেদন, ভালোবাসাটা নিখাদ ছিল বলেই এসব সম্ভব হয়েছে।’
‘যে বয়সে অনেকে বিদায় বলে সে বয়সে উনি যেন নিজেকে মেলে ধরেছেন। বলে নিয়ন্ত্রণ ছিল দারুণ, ফ্লাইট টাও ভালো ছিল। উনি আবাহনী, আমি মোহামেডানে খেলতাম কিন্তু যোগাযোগটা সবসময়ই ছিল। জাতীয় দলের ক্যাম্প বা অন্য কোথাও ঠিকই একসাথে কাজ করা হত। নিজেদের মধ্যে বোলিং নিয়ে প্রচুর আলোচনা হত। অনেক সিনিয়র হওয়া সত্বেও আমাদের অনেক সাহায্য করতেন। বিভিন্ন পরামর্শ দিতেন। সবসময় আমাদের উৎসাহ দিতেন। বয়স হওয়ার পরও উনি যেভাবে খেলে গেছেন তা আমাদেরও উৎসাহী করতো, অনুপ্রেরণা দিত।’
‘তার সময়ের অন্যতম সেরা বোলার ছিলেন, আবাহনীকে বহু ম্যাচ জিতিয়েছে। কিন্তু সব কিছুর উর্ধ্বে যেটা সেটা হল খুবই ভালো মানুষ ছিলেন। আমাদেরকে অনেক সাহায্য করতেন। যেকোন কিছুতে বিনয়ী হওয়াটা ছিল তার অন্যতম গুণ। কখনো কারও সাথে খারাপ ব্যবহার করেননি। ক্রিকেট ছেড়ে দেওয়ার পরেও যখনই দেখা হয়েছে তখনই হাসিমুখে কথা বলেছেন। বিভিন্ন সময়ে উনি ঢাকায় আসলে বা আমরা ময়মনসিংহে গেলে তার সাথে দেখা হত। মানুষ হিসেবে খুবই ভালো লোক ছিলেন। তার মৃত্যু দেশের এক নক্ষত্রের বিদায় বলা যায়।’