

একজন পেস বোলিং অলরাউন্ডারের খোঁজে মরিয়া ছিল টিম বাংলাদেশ। বেশ কয়েকজনই অমিত সম্ভাবনা নিয়ে এসেও দৃশ্যপটের বাইরে চলে গেছেন দ্রুতই। তবে সেখানে অনেকটা বিপরীত অবস্থান তরুণ অলরাউন্ডার সাইফউদ্দিনের।
অভিষেকের পর থেকেই নির্বাচকদের আস্থার প্রতিদান দিয়েছেন নিয়মিত, দেখেছেন মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ দুটোই। বাজে পারফরম্যান্সে বাদ পড়লেও ফিরে এসেছেন দুর্দান্তভাবে। পিঠের পুরোনো চোটে লম্বা সময় দলের বাইরে থাকার পরও ফিরে এসে দেখিয়েছেন দাপট।
ইংল্যান্ড বিশ্বকাপে ৭ ম্যাচে বল হাতে উইকেট নিয়েছেন ১৪ টি যা মুস্তাফিজুর রহমানের পর বাংলাদেশিদের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। তবে টুর্নামেন্টে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচে চোটের কারণে বিশ্রামে থাকায় বেশ সমালোচনা হয়েছে তাকে নিয়ে।
বিশেষ করে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয় ইচ্ছে করেই বড় দলের বিপক্ষে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছেন তরুণ এই অলরাউন্ডার। যদিও একই টুর্নামেন্টে ইংল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা, ভারত, পাকিস্তানের মত দলের বিপক্ষেও খেলেন সাইফউদ্দিন।
নিজের নিবেদন নিয়ে সংবাদ মাধ্যমে ওঠা প্রশ্নে বেশ কষ্ট পেয়েছেন বলে জানালেন সাইফউদ্দিন। বিশ্বকাপের প্রায় এক বছর পরে এসে জনপ্রিয় ক্রিকেট ওয়েবসাইট ‘ক্রিকবাজকে’ টাইগার অলরাউন্ডার জানান ঐ সময়টায় নিজেকে কতটা অসহায় মনে হয়েছিল।
সাইফউদ্দিন বলেন, ‘এটা আমার জন্য হৃদয় বিদারক ছিল যখন গণমাধ্যমে বলা হয়েছে আমি বড় দলের বিপক্ষে খেলতে ভয় পাই বলে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলিনি। মিডিয়ার এমন খবরে আমি অসহায় বোধ করছিলাম নিজের রুমে। মিরাজ (মেহেদী হাসান) এসে আমাকে সমর্থন দিয়েছে।’
শুধুমাত্র ব্যথা কমানোর লক্ষ্যেই নিজেকে সরিয়ে নেওয়া এই অলরাউন্ডার জানান বিশ্বকাপের আগে আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালেও ব্যথা নিয়ে খেলেছেন। ২৩ বছর বয়সী এই পেস বোলিং অলরাউন্ডার এ প্রসঙ্গে বিস্তারিত জানান।
‘বিশ্বকাপের আগে আমরা আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজ খেলতে যাই যেটা মাশরাফি ভাইয়ের অধীনে আমরা জিতেছি। ওটা আমাদের প্রথম কোন ত্রিদেশীয় সিরিজ জয়ও।’
‘ঐ সিরিজে রুবেল ভাইয়ের (রুবেল হোসেন) রুম ছিল আমার পাশেই। কোন এক কারণে তার রুমে গিয়ে দেখি তিনি মেঝেতে বিশ্রাম নিচ্ছেন। আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম এমনটা করার কারণ কি? তিনি বললেন যেহেতু টুর্নামেন্টটা দীর্ঘ তাই পিঠে যেন সমস্যা না হয়। আমি ভাবলাম রুবেল ভাই যেহেতু এটা নিয়ে সিরিয়াস আমারও উচিৎ মেঝেতে ঘুমানো। আমরা সবাই জানি আয়ারল্যান্ডে কেমন ঠান্ডা।’
‘ঘুম থেকে উঠে আমি কিছু অস্বস্তি বোধ করছিলাম। আমার পিঠের পুরোনো ব্যথা কখনো আসছে কখনো যাচ্ছে এমন অবস্থা। আমি আমাদের ফিজিও কে বলি সে বলল তেমন কিছুনা আবহাওয়া বদলের কারণেই হচ্ছে, কিছুদিনের মধ্যে ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু দুইটি ওয়ানডে খেলার পর তৃতীয়টির আগেই অনুশীলনে আমার ব্যথা অনুভূত হতে শুরু করে। আমি কোচকে বলি আমার কি করা উচিৎ? পরে আমি তৃতীয় ম্যাচটি খেলিনি।’
‘চতুর্থ ম্যাচ বৃষ্টির কারণে বাতিল হয় আর ফাইনালে চোটের কারণে খেলেননি সাকিব ভাই। আমি ভাবছিলাম যদি আমিও না খেলি চোটের কারণে লোকজন কী ভাববে? সুতরাং ম্যাচ খেলতে ও পাঁচ ওভার বল করার সিদ্ধান্ত নিই। আমরা ম্যাচটা জিতেছি, চ্যাম্পিয়ন হয়েছি এবং হোটেলে যাওয়ার পথে আমি ফিজিওর জন্য লবিতে অপেক্ষা করছিলাম। আমি ফিজিও ও স্টিভ রোডসকে (কোচ) জানাই আমার ব্যথার তীব্রতা বেড়েছে, কী করতে পারি? রোডস বলল আমি তার অন্যতম একজন খেলোয়ার আমাকে বিশ্বকাপে রাখতে চান।’
দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচেও ইনজেকশন নিয়ে খেলেছেন উল্লেখ করে সাইফ উদ্দিন যোগ করেন, ‘আমরা যখন লন্ডনে খেলতে যাই তখনো ফিজিওকে বলি আমার পক্ষে সম্ভব নয়। টিম ম্যানেজমেন্টের সিদ্ধান্তে আমাকে প্রায় দুই লাখ টাকা দামের ইনজেকশন দেওয়া হয়। এরপর কিছুটা ভালো অনুভব করি এবং দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ম্যাচটি খেলি। ৭-৮ ওভার করার পর আবার ব্যথা শুরু হয়। এরপর আরও দুটি ম্যাচ আমি মনের জোরে খেলে যাই।’
‘তবে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচের পর আমরা ৪-৫ ঘন্টার বাস জার্নি করি। যখন পৌঁছাই তখন আমি আর আমাকে ধরে রাখতে পারছিলাম না। আমার পক্ষে সোজা হয়ে দাড়ানোই কষ্টকর ছিল। আমি তখন বলেছিলাম আমার অনেক কষ্ট হচ্ছে, আমি এটা নিতে পারছিনা। লোকে দুই দুইয়ে চার হিসাব করে একটা ধারণায় চলে আসে। যেহেতু আমি প্রস্তুতি ম্যাচে ধোনির সেঞ্চুরির সময় বল করিনি ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলা সম্ভব হচ্ছেনা তখন তারা সত্যটা না জেনেই বলা শুরু করে আমি বড় দলের বিপক্ষে ভয় পাচ্ছি।’