

মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে বলা হয়ে থাকে দেশের দূর্ভাগা ক্রিকেটারদের একজন। টাইগারদের বেশিরভাগ গুরুত্বপূর্ণ জয়ে তার অবদান অসামান্য। ফিনিশার হিসেবে বহুবার ক্রিজে থেকে দলকে এনে দিয়েছেন আনন্দের উপলক্ষ্য। তবে দলের কম্বিনেশনের কারণে লোয়ার মিডল অর্ডারে নামতে হয় বলে নামের পাশে নেই বড় তারকাদের মত অনেক বেশি রান। কিন্তু দলের প্রয়োজনে ত্রানকর্তা হয়ে আবির্ভাব হওয়া মাহমুদউল্লাহর ত্যাগ স্বীকারটা ভালো করেই অনুধাবন করেন মাশরাফি বিন মর্তুজা। ভারতের ‘ভেরি ভেরি স্পেশাল’ খ্যাত ভিভিএস লক্ষণের সঙ্গে রিয়াদের তুলনা করেছেন মাশরাফি।
ওয়ানডেতে ১৬৩ ইনিংসে ৩৩.৬৪ গড়ে রিয়াদ রান করেছেন ৪০৭০। তিন নম্বর থেকে ৯ নম্বর পজিশনে পর্যন্ত খেলার অভিজ্ঞতা আছে এই ব্যাটসম্যানের। সর্বোচ ৭১ ইনিংসে ব্যাট করেছেন ৭ নম্বরে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৪৫ ইনিংস ব্যাট করেছেন ৬ নম্বর পজিশনে। এই ছোট্ট পরিসংখ্যান থেকে স্পষ্ট যে পজিশনে তিনি ব্যাট করতে নামেন সেখানে নিজের ইনিংস লম্বা করা কিংবা বড় কিছু করার সুযোগ কমই থাকে। বলের সাথে পাল্লা দিয়ে করতে হয় রান, কখনো সফল হন তো কখনো ব্যর্থ।
দলের বিপদে যেকোন সময় মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের ব্যাটই হাসে, তাই রিয়াদকে ভারতীয় সাবেক তারকা ব্যাটসম্যান ভিভিএস লক্ষণের সাথে তুলনা করেছেন সদ্য বিদায়ী অধিনায়ক মাশরাফি। নতুন ওয়ানডে অধিনায়ক তামিম ইকবালের সাথে ফেসবুক লাইভে আড্ডা দিতে গিয়ে গতকাল (৪ মে) মাশরাফি বলেন,
‘রিয়াদের কথা ভেবে দেখ। অনেকটা ভিভিএস লক্ষণের মত। প্রয়োজন হচ্ছেনা, রান করছেনা। কিন্তু যখন দলের প্রয়োজন সেই একজন, আমার কাছে সবসময় মনে হয় সে জ্বলে উঠছে।’
উত্তরে তামিম বলেন, ‘আপনি কোন না কোনভাবে সবাইকে সেভ করছেন। সেটা আমি হই, সাকিব, মুশফিক বা রিয়াদ ভাই যেই হোক না কেন। কোন বিপদ আসছে আমাদের উপর, আপনি সামলে নিয়েছেন কিন্তু রিয়াদ ভাইয়ের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে আপনি আলাদা একটা আস্থা রাখতেন। এটা আমি সবসময় দেখেছি।’
‘কালকে যখন রিয়াদ ভাইয়ের সাথে আমি লাইভ করছি তাকে আমি বললাম আমরা যে ৭০-৮০ করি লোকে সেটা ভালোভাবে নেয়। কিন্তু রিয়াদ ভাই যে ২৫-৩০ রানের গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস খেলে সেগুলোর জন্য অতটা প্রশংসা পায়না। তবে আমরা জানি, আপনি (মাশরাফি) জানেন কতটা গুরুত্বপূর্ণ ইনিংসগুলো।’
রিয়াদের উপর মাশরাফির বাড়তি আস্থা ও সমবেদনার জায়গাটা কেন তার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে দেশের অন্যতম সফল অধিনায়ক টেনে আনেন বাস্তবতা, ‘আমি কেন রিয়াদের উপর আস্থা রাখি সেটা তোকে খুলে বলি। রিয়াদ এমন একটা প্লেয়ার যে সে যদি ৪,৫ নাম্বারে ব্যাটিং করার সুযোগ পেত ওর পরিসংখ্যানও কিন্তু আজকে অন্যরকম হত। দলের সুবিধার জন্য তাকে ৬, ৭ নম্বরে ব্যাটিং করাতে হচ্ছে। কেবল এই একটা কারণে সে তার ক্যারিয়ারের অনেক রান নষ্ট করেছে।’
‘রিয়াদ অনেকবার মন খারাপ করেছে। আমি তার সাথে কথা বলতাম, সে হাসিমুখে মেনে নিয়েছে। তো এ কারণে রিয়াদের জন্য আমার অনেক খারাপ লাগে। আজকে ওর নামের পাশে হয়তোবা ৭-৮ হাজার রান করে থাকতো যদি সে উপরের দিকে খেলার সুযোগ পেত। মূলত সে এমন একটা পজিশনে খেলে যেখানে বল, রান সমান রাখতে হবে। অথবা তাকে এমন করতে হবে ২০ বলে ৩৫ বা ২৫ বলে ৪০ নিতে হবে। এটাতো প্রত্যেকদিন একটা মানুষ পারবেনা। তো ওখানে যেদিনই সে ব্যর্থ হয় তাকে সমালোচনা শুনতে হয়।’
দেশের ক্রিকেটে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের ত্যাগের কথা তুলে ধরে মাশরাফি আরও যোগ করেন, ‘এ সমালোচনাগুলো যখন সে শোনে তখন ওর মনের ভেতরে এটা আসা স্বাভাবিক যে আমিতো চার নম্বর পজিশন ডিজার্ভ করি, আমি সিনিয়র ক্রিকেটার চারে খেলবো। ও কিন্তু কখনোই এটা বলেনা। সুতরাং এসব কারণে আমি মনে করি রিয়াদ সবচেয়ে বেশি ত্যাগ স্বীকার করে আসছে বাংলাদেশ দলের জন্য।’