

দ্বিপাক্ষিক সিরিজগুলোতে নিজেদের কন্ডিশনে পছন্দমত উইকেট বানিয়ে সর্বোচ্চ সুবিধা নেয় স্বাগতিক দেশগুলো। কিন্তু টেস্ট ক্রিকেটে দেড় যুগের বেশি পার করেও নাজুক অবস্থায় থাকা বাংলাদেশ চাইলেও ঘরের মাঠে নিজেদের সুবিধামত উইকেট তৈরি করার সাহস দেখাতে পারতনা। ২০১৬ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে এই প্রথায় পরিবর্তন আসে সাবেক টেস্ট অধিনায়ক মুশফিকুর রহিমের হাত ধরে। তার ইচ্ছেতেই প্রথমবারের মত ইংল্যান্ডের বিপক্ষে পুরোপুরি স্পিন নির্ভর উইকেট তৈরি করা হয়।
সাফল্য ধরা দেয় প্রথম সিরিজেই, প্রথম ম্যাচটা চট্টগ্রামে খুব কাছে গিয়ে হারলেও ঢাকায় দ্বিতীয় ম্যাচেই একই ধরণের উইকেটে টেস্টে টাইগারদের প্রথমবারের মত ইংলিশ বধ। ঐ সিরিজে মুশফিক বাজি ধরেছেন আরও একটি, একদম অনভিজ্ঞ মেহেদী হাসান মিরাজকে নামিয়ে দেন জো রুট, মইন আলি, জনি বেয়ারস্টোদের সামলাতে। দুই ম্যাচে ১৯ উইকেট নিয়ে আস্থার প্রতিদান দিয়েছেন দারুণভাবে। ঢাকায় জয়ী ম্যাচেই নিয়েছেন ১২ উইকেট।
এরপর ঘরের মাঠে স্পিনিং উইকেটে পরের বছর অস্ট্রেলিয়াকেও নাকানি চুবানি খাইয়ে হারিয়ে দেয় সাকিব, তাইজুলরা। দেশের ক্রিকেটে এমন বড় একটা পরিবর্তন আনার কৃতিত্ব যে মুশফিককে দিতেই হয়।
গতকাল (২ মে) ইনস্টাগ্রাম লাইভ আড্ডায় তখনকার সহ অধিনায়ক তামিম ধন্যবাদ জানিয়েছেন মুশফিককে, দুজনের আড্ডায় উঠে এসেছে স্পিনিং উইকেট বানানো ও মিরাজকে খেলানোর সিদ্ধান্তগুলো কীভাবে নিয়েছেন কাপ্তান মুশফিক। পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হল মুশফিকের সেই গল্প-
ম্যাচ ফল চান মুশফিক, প্রয়োজনে খেলা শেষ হোক তিনদিনেঃ
‘টেস্ট ক্রিকেটে আমাদের যে ধারাবাহিকতা তা এখনো ঠিক হয়নি সেটা ঘরের মাঠ কিংবা ঘরের বাইরে হোক। একটা চিন্তা আমি অনেকদিন ধরে করতেছিলাম যে আমরা যেভাবে খেলছি বা যেসব উইকেটে খেলি নিজেদের খুব বেশি কিছু করার থাকেনা। আর আমরা যে উইকেটই তৈরি করিনা কেন অভিজ্ঞ দলগুলো এসে সুবিধাটা নিতে পারে।’
‘তো আমি চিন্তা করলাম কেন আমরা নিজেদের মত উইকেট বানাবোনা? এই সুবিধা নিবনা কেন? প্রয়োজনে ৫ দিনের জায়গায় তিন দিনে ম্যাচ শেষ হোক। এমন উইকেট তৈরি করতে হবে যাতে ফল আসবে, প্রথম দিন থেকেই বল ঘুরবে। আর আমাদের যে ভালোমানের স্পিনার আছে সাকিব, তাইজুল, মিরাজ তারা অসাধারণ, তাদের পুরো কৃতিত্ব দিতে হবে। কারণ যতই আমরা ভালো উইকেট বানাই ভালো জায়গায় বল না করলে ব্যাপারটি কঠিন হয়ে যায়।’
‘তো সত্যি কথা বলতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া আসলেই ঝুকিপূর্ণ ছিল, আমাদের মত দেশে এটা করাটা কঠিনই। এক্ষেত্রে আমি যেটা বলি তোকে আমি বলছি ঠিকই। শুরুতে দ্বিধা দ্বন্দ্বে থাকলেও একটু হলেও আমায় সায় দিয়েছিস। আমাকে বলছিস যে দোস্ত আমার মনে হয় এটা ঠিক। সেদিক থেকে আমি তোকে ধন্যবাদ দিতে চাই।’
মুশফিকের সারপ্রাইজ প্যাকেজ ছিল মিরাজঃ
‘ঐটা মিরাজের অভিষেক টেস্ট ছিল, তার আগে আমাদের ওয়ানডে সিরিজ ছিল। সবাই চাচ্ছিল মিরাজকে ওয়ানডেতে খেলাতে। তো আমি ব্যক্তিগতভাবে ভাবছিলাম এটা আমদের জন্য বড় একটা সুযোগ কারণ আমরা স্পিনিং উইকেট করতে যাচ্ছি। আর ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড এই তিনটা দল আসার আগে বেশ হোমওয়ার্ক করে প্রতিপক্ষ নিয়ে, সাথে নিজেদের কাজগুলোও ঠিকঠাক করে।’
‘তো আমি চেয়েছি মিরাজকে ওয়ানডে না খেলিয়ে সরাসরি টেস্ট খেলাতে। যেহেতু তাকে সেভাবে কেউ চেনেনা, জানেনা তো ও ভালো করলে আমাদের বড় একটা সুযোগ তৈরি হবে। আর তাকেও কৃতিত্ব দিতে হয় পুরো সিরিজে অসাধারণ বল করেছে সে আমরাও ম্যাচ জিতেছি।’