

করোনা সংক্রমণের বড় একটা প্রভাব পড়েছে ক্রীড়াঙ্গনেও। বিশ্বের অন্যান্য খেলাধুলার মত সব ধরণের ক্রিকেট স্থগিত হয়েছে বাংলাদেশেও। বিশেষ করে সারা বছর অপেক্ষায় থাকা দেশের ঘরোয়া লিগের সবচেয়ে জমজমাট আসর ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ বন্ধ হয়ে যায় মাত্র এক রাউন্ড পরই। বৈশ্বিক এই সংকট মোকাবেলার পাশাপাশি আর্থিক দিকটাও কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলছে ক্রিকেটারদের। বিশেষ করে প্রিমিয়ার লিগই বছরের একমাত্র বড় আয় যেসব ক্রিকেটারের তারা আছেন বড় দুশ্চিন্তায়।
১২ ক্লাবে ২০০ এর বেশি ক্রিকেটার নাম লিখিয়েছেন এবারের ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে। যাদের মধ্যে বোর্ডের কেন্দ্রীয় চুক্তি ও প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে চুক্তিবদ্ধ ক্রিকেটারের সংখ্যা ১০০ এর কম। বাকি শতাধিক ক্রিকেটার সারা বছর অপেক্ষায় থাকেন ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের জন্য। তাদের আয়ের মূল উৎস যে প্রিমিয়ার লিগ!
করোনা পরিস্থিতি প্রতিদিনই হচ্ছে অবনতি, বিশ্বজুড়ে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ার পাশাপাশি বাড়ছে মৃতের সংখ্যাও। সরকারি হিসেব অনুসারে এখনো পর্যন্ত বাংলাদেশে আক্রান্ত হয়েছে ৪৮ জন, প্রাণ হারিয়েছে ৫ জন। পরিস্থিতি বিবেচনায় এবারের প্রিমিয়ার লিগ মাঠে গড়ানোর সম্ভাবনা দিন দিন কমছেই। আদৌতেই লিগ মাঠে না গড়ালে বড় অঙ্কের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়বেন ক্রিকেটাররা নিশ্চিতই।
প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ রানে মালিক ও ব্রাদার্স ইউনিয়নের হয়ে নাম লেখানো তুষার ইমরান জনপ্রিয় ক্রিকেট ওয়েবসাইট ‘ইএসপিএন ক্রিকইনফো’কে বলেন, ‘সবকিছুই এখন যদি কিন্তুর উপর ঝুলছে। লিগ না হলে আমাদের বেশিরভাগ ক্রিকেটারকেই নিয়মিত আয় ছাড়া ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিবে।’
প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে চুক্তিবদ্ধ তুষার অবশ্য আশাবাদী এ ক্ষেত্রে এগিয়ে আসবে বিসিবি, ‘আমরা আশা করবো বিসিবি এগিয়ে আসবে আমাদের মধ্যে যারা কেন্দ্রীয় বা প্রথম শ্রেণির চুক্তিতে নেই তাদের সহযোগীতায়। এপ্রিলের মাঝামাঝি পর্যন্ত অপেক্ষায় আছি। এরপরেও লিগ শুরু করা সম্ভব কিন্তু সবার জন্যই আসলে এটা চিন্তার।’
এদিকে দেশের ক্রিকেটে অন্যতম দূর্ভাগা ক্রিকেটার ভাবা হয় লেগ স্পিনার জুবায়ের হোসেন লিখনকে। এমনিতেই লেগ স্পিনার হিসেবে দল পেতে বেশ লড়াই করতে হয়, ঝুঁকি নিতে চায়না দলগুলো। ক্লাবের সাথে যুক্ত হলেও একাদশে খেলার সুযোগ হয় একদমই কম। এবার নাম লিখিয়েছিলেন পারটেক্সে, ছিল খেলার নিশ্চয়তাও। কিন্তু করোনা প্রভাবে লিখনের সবকিছুই এলোমেলো।
জনপ্রিয় এক বাংলা অনলাইন গণমাধ্যমকে আক্ষেপভরা কণ্ঠে জুবায়ের বলেন, ‘গেল কয়েক বছর তো ঠিকভাবে দলই পাইনি। পেলেও ধরতে গেলে ফ্রিই খেলতে হয়। এবার পারটেক্সে (স্পোর্টিং ক্লাব) যোগ দিয়েছিলাম। খেলার সুযোগ হতো। কিন্তু এর আগেই করোনা ভাইরাসের কারণে লিগ বন্ধ হয়ে গেল। নিজেকে প্রমাণের সুযোগও পেলাম না। তার উপর আর্থিক দিক তো আছেই। আমরা যারা জাতীয় দল থেকে বাইরে চলে গেছি, তাদের জন্য বিসিবি যদি কিছু ব্যবস্থা করতো! প্রথম শ্রেণির চুক্তিতে যদি আমাদের রাখা হতো, তাহলে অন্তত একটা দুশ্চিন্তা কমতো।’