

সাকিব আল হাসানের নিষেধাজ্ঞায় পড়ার কারণে ভারত সফরের ঠিক আগ মুহূর্তে টেস্ট অধিনায়কত্বের গুরু দায়িত্ব পড়ে মুমিনুল হকের কাঁধে। ভারতের মাটিতে ভারতের বিপক্ষে দুঃস্বপ্নের মত এক সিরিজ কেটেছে মুমিনুল বাহিনীর। দুই ম্যাচেই ইনিংস ব্যবধানে হেরে পাকিস্তান সফরে গিয়েও রাওয়ালপিন্ডি টেস্টে ফল একই। অধিনায়ক হিসেবে প্রথম তিন ম্যাচেই ইনিংস ব্যবধানে হার।
অবশেষে ঘরের মাঠে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে একমাত্র টেস্টে এলো কাঙ্ক্ষিত জয়। প্রতিপক্ষ বিবেচনায় অনেকটা প্রত্যাশিত ফল হলেও, টানা তিন ম্যাচে অধিনায়ক হিসেবে হার মেনে নেওয়া মুমিনুলের জন্য অবশ্যই স্বস্তির হওয়ার কথা। ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে মুমিনুল বলেছেন আগের তিন ম্যাচ হারের পর হতাশ হলেই স্বস্তির প্রসঙ্গ আসতো, আগের তিন ম্যাচে হারের পরও ছিলেন নির্ভার।
ঘরোয়া ক্রিকেটে অধিনায়কত্বে অভ্যস্ত মুমিনুল নিজের ধ্যান ধারণায় এনেছেন পরিবর্তন। মুমিনুল হক এমনিতে শান্ত-শিষ্ট, অনেকটা নরম প্রকৃতির। তবে অধিনায়কত্ব করতে গেলে মাঠের ক্রিকেটারদের সামলাতে মাঝে মাঝে হতে হয় কঠোর। নরম মানুষ মুমিনুল প্রথমদিকে শান্ত থাকলেও সাফল্যের ক্ষুধায় আচরণেও এনেছেন আগ্রাসী ভাব।
অধিনায়কত্বে আগ্রাসন আনা প্রসঙ্গে মুমিনুল বলেন, ‘আমার ক্যাপ্টেন্সি শুরু হয়েছিল বিসিএল, এনসিএল দিয়ে। ওই জায়গায় প্রথম প্রথম এরকমই (নরম) ছিলাম। পরে দেখলাম যে না, জিনিসটা চেঞ্জ করতে হবে। যারা মাঠে থাকে তারা জানে (কেমন হয়েছে এখনকার আচরণ)। একটু আগ্রাসী, রূঢ় থাকতে হয়। রূঢ় না আক্রমণাত্মক থাকতে হয় আরকি। সবাইকেই ঝাড়ি মারি (হাসি।)’
পরিসংখ্যান বলছে অধিনায়কত্বের শুরুটা বেশ বাজেই হয়েছে মুমিনুলের, সাথে নিজের পারফরম্যান্সেও ছিলনা ছন্দ। স্বাভাবিকভাবেই চাপে থাকার কথা বাংলাদেশ অধিনায়কের, তবে বরাবরের মত সাফ জানিয়ে দিলেন চাপে পিষ্ট হননা কখনো। অতীত নয়, ভবিষ্যত নিয়েই ভাবেন মুমিনুল, ‘আমি জানি না আমাকে দেখে কখনও চাপে আছি বলে মনে হয়েছে কিনা। তবে আমার নিজের কাছে মনে হয় না। আমি সবসময় যে জিনিসটা আশা করি যে, যেটা আমি চেষ্টা করি যে সবসময় আশাটা বড় রাখতে। আমি কোনো সময় চাপের মধ্যে ছিলাম না। দেখুন শুরুর দিকে একটু খারাপ হলে আমি বিষয়টিকে সেভাবে দেখি না। কারণ এটা হতেই পারে।’

‘আপনার যখন ভালো হবে তখন আস্তে আস্তে ভালো হতে থাকবে। আমার কাছে উন্নতি করাটাও গুরুত্বপূর্ণ। আগামী যে পাকিস্তান সিরিজ আছে সেখানে আমি কেমন এবং দল হিসেবে ক্রিকেটাররা কেমন করছে সেটার দিকে তাকিয়ে আছি। আজকের দিনটি তো চলে গেছে, সেটা তো আর আসবে না। এর আগে যে তিনটি ম্যাচ হেরেছি সেখান থেকে আমি কি শিক্ষা নিতে পেরেছি অধিনায়ক এবং ক্রিকেটার হিসেবে সেটাই গুরুত্বপূর্ণ।’
৪০ টেস্টের ক্যারিয়ারে ইতোমধ্যে সেঞ্চুরি ৯ টি, দুর্দান্ত গড়ে ক্যারিয়ার শুরু করা মুমিনুল মাঝে কাটিয়েছেন খুব খারাপ সময়। তবে ঈঙ্গিত দিয়েছেন ফর্মে ফেরার। যদিও দেশের বাইরে বরাবরই বড্ড বিবর্ণ মুমিনুলের পরিসংখ্যান। ঘরের মাঠে ৫৭.৪১ গড়ের বিপরীতে বাইরে মাত্র ২২.৩০! দেশের মাটিতে ৯ সেঞ্চুরি থাকলেও বাইরে নেই একটিও। দল হিসেবেও টাইগারদের পারফরম্যান্স অনেকটা মুমিনুলের মত।
অধিনায়ক মুমিনুল বলছেন দেশের বাইরে দল হিসেবে ভালো খেলার পরিকল্পনা ইতোমধ্যে নেওয়া শুরু করেছেন তবে নিজের পারফরম্যান্স নিয়ে ভেবে প্রভাবিত হতে চাননা। সংবাদ সম্মেলনে মুমিনুল বলেন, ‘আমি সবসময় যে জিনিসটা চেষ্টা করছি যে দেশেও যেমন টেস্ট জিততে চাই তেমন আমি স্বপ্ন দেখি বিদেশেও ভালো ক্রিকেট খেলবো। সেই হিসেবে চিন্তা করলে আমাকে পেস বোলারদের বোলিং করাতে হবে, তারা বোলিং না করলে শিখবে না। আর এই কারণে হয়তো উইকেটটা সেভাবে তৈরি করা।’
‘আমি বিদেশের মাটিতে সেঞ্চুরি নিয়ে খুব বেশি চিন্তা করি না। কারণ এটা পুরোপুরি মানসিক ব্যাপার। এটা নিয়ে আমি খুব বেশি কথাও বলবো না। আমি চাই না যেন খারাপভাবে আমার মাথায় এটা প্রভাব ফেলুক।’