

বয়সভিত্তিক, ঘরোয়া ক্রিকেটে বরাবরই হাসে নাজমুল হোসেন শান্তের ব্যাট। বেশ লম্বা সময় ধরেই আছেন বিসিবির রাডারে, তাকে নিয়ে পরিকল্পনাটাও বহু আগের। তবে তিন ফরম্যাটেই সুযোগ পেয়ে কাজে লাগাতে ব্যর্থ বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান। সংশ্লিষ্টরাও হাল ছাড়ার পাত্র নয়, এমনিতেই দুই ম্যাচ খারাপ করলেই বাদ দেওয়ার সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে আসছে বিসিবি আর শান্তের ক্ষেত্রে বিনিয়োগটা যেন আরও বেশি।
জাতীয় দলে খারাপ করার পর হাই পারফরম্যান্স, ‘এ’ দল, ইমার্জিং দলের হয়ে সুযোগা দেওয়া হয়েছে নিয়মিতই। দুর্দান্ত ফর্মে শান্তও নিজেকে করেছে আত্মবিশ্বাসী। চলতি বিসিএলের তৃতীয় রাউন্ডে ওয়ালটন সেন্ট্রাল জোনের হয়ে খেলেছেন অপরাজিত ২৫৩ রানের ইনিংসও। পাকিস্তানের বিপক্ষে রাওয়ালপিন্ডি টেস্ট দিয়ে একবছরের বেশি সময় পর জায়গা পান টেস্ট দলে।
প্রথম দুই টেস্টে ৪৮ রান করা শান্ত, পাকিস্তানের বিপক্ষে অন্যদের ব্যর্থতার ভিড়ে দুই ইনিংসেই (৪৪ ও ৩৮) ঈঙ্গিত দিয়েছেন ফিরে আসার। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে আজ (২৩ ফেব্রুয়ারি) খেললেন ৭১ রানের ইনিংস। ১৮ রানে সাইফ হাসানের উইকেট পড়ার পর তামিমকে নিয়ে ৭৮ রানের জুটিতে প্রাথমিক বিপর্যয় সামলান শান্ত। সেঞ্চুরির স্বপ্ন জাগিয়েও অবশ্য ফিরেছেন শুমার বলে।
দুই-তিন ম্যাচ খারাপ করার পরই একটা সময় ছুঁড়ে ফেলা হত বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের। নিজেকে মেলে ধরা, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে থিতু হওয়ার খুব একটা সুযোগ পেতনা খেলোয়াড়েরা। সুযোগ দেওয়ার মানসিকতা বদলেছে বিসিবি, আর শান্তকে বলা যায় সেই মানসিকতার প্রথম ফল।শান্ত নিজেও বলছেন এমনটাই।
ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান জানিয়েছেন নিজের বদলে যাওয়া পারফরম্যান্সের কারণ,
‘এর আগে যখন খেলেছি, তখন একটা ভয় কাজ করতো। খারাপ খেললে বাদ পড়ে যেতে পারি এরকম কিছু একটা ছিলো, ২০১৭’তে যখন অভিষেক হয়েছিলো। তবে এখন আমি মানসিকভাবে ওরকম কোনো কিছুই চিন্তা করতেছি না। ভালো খেলে বা খারাপ খেলি, দলে থাকবো কি না থাকবো এটা আমার অংশ না। কিন্তু চেষ্টা করতেছি প্রতি ম্যাচেই ভালো খেলার।’
‘আর একটা ইতিবাচক দিক যে আমাদের কোচিং স্টাফ যারা এখন আছে অনেক বেশি আত্মবিশ্বাস দিচ্ছে। এগুলো নিয়ে চিন্তা করতে বারণ করতেছে। তারা বলতেছে অনেক বেশি সুযোগ পাবা তুমি শুধু খেলায় ফোকাস করো।’
বয়সভিত্তিকেই বিসিবির নজরে পড়া শান্ত নিজেকে ফিরে পেয়েছেন বিসিবির অবদানেই। জাতীয় দলে ব্যর্থ হওয়া ২১ বছর বয়সী এই ক্রিকেটারকে নির্বাচকরা দিয়েছে সুযোগ, বিসিবির অধীনে বিভিন্ন দলের নেতৃত্ব ভারও দেওয়া হয়েছিল তার কাঁধে। বাংলাদেশের ক্রিকেট সংস্কৃতিতে নতুন মাত্রা যোগ করছে সুযোগ দেওয়ার ব্যাপারটি। কোচ রাসেল ডোমিঙ্গোও ইতোমধ্যে জানিয়ে দিয়েছেন এই সংস্কৃতিই প্রতিষ্ঠা করতে চান।
নিজেকে ফিরে পেতে বিসিবির সুযোগ দেওয়ার মানসিকতাকে কৃতিত্ব দিচ্ছেন নাজমুল হোসেন শান্ত,
‘লম্বা সময় ধরে বিসিবির অধীনে ছিলাম। এটা একটা ইতিবাচক দিক, প্রত্যেকটা প্লেয়ারেরই থাকা উচিত। আমি যখন জাতীয় দল থেকে বাদ পড়লাম তখন হাই পারফরম্যান্স দলে ছিলাম, ‘এ’ দলে ছিলাম। এটা একটা ইতিবাচক দিক যে নির্বাচকরা আমাকে ওই জায়াগাটায় সুযোগ দিয়েছে। আমি মনে করি প্রত্যেক খেলোয়াড়েরই এই জায়গাটায় সুযোগ পাওয়া গুরুত্বপূর্ণ। আমি এখন যেটা অনুভব করছি যে মাঠে যখন নামি আগের থেকে বেশি রিল্যাক্স থাকি।’
আজ সংবাদ সম্মেলনে আসার আগেই সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে প্রথম দুই ওয়ানডের দল ঘোষণা করে বিসিবি। ২০১৮ সালে এশিয়া কাপে সুযোগ পেয়ে ব্যর্থ হওয়া শান্ত ফিরেছেন দলে। সংবাদ সম্মেলনে বলেন,
‘ওয়ানডে দলে সুযোগ পাওয়ার কথা এখনই শুনলাম। আলহামদুলিল্লাহ্ যদি ওখানে সুযোগ পাই ভালো করার চেষ্টা করবো।’