

দুই দলের সবশেষ ৬ দেখায় চারটিতেই জিতেছে বাংলাদেশ যুব দল। বিশেষ করে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধ কন্ডিশনে তাদের বিপক্ষে গতবছর ৪-১ ব্যবধানে সিরিজ জয়ের স্মৃতি এখনো টাটকাই বলা যায়। ইতিহাস গড়ে প্রথমবার যুব বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলার পথে সেমিফাইনালে প্রতিপক্ষ হিসেবে কিউই যুবাদেরই পায় আকবর আলির দল। পচেফস্ট্রুমের সেনউইজ পার্কে ফাইনালের টিকিট পেতে বাংলাদেশকে ২১২ রানের বেশি লক্ষ্য দিতে পারেনি নিউজিল্যান্ড। মাহমুদুল হাসানের সেঞ্চুরিতে ৬ উইকেটের জয়ে ইতিহাস গড়লো বাংলাদেশের যুবারা।
সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স বিবেচনায় যুব বিশ্বকাপের এবারের আসরে ফেভারিট হয়েই দেশ ছাড়ে আকবর আলির দল। গ্রুপ পর্বে জিম্বাবুয়ে ও স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে দাপুটে জয় পেলেও পাকিস্তানের বিপক্ষে বৃষ্টিতে পরিত্যাক্ত হওয়া ম্যাচে বেশ বাজে ব্যাটিং করে বাংলাদেশ। যা শঙ্কা জাগায় টুর্নামেন্টের বাকি পথ পাড়ি দেওয়ার প্রতিবন্ধকতা নিয়ে। কিন্তু গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়েই কোয়ার্টার ফাইনালে যাওয়া বাংলাদেশ ভুল প্রমাণ করে ধারণা।
দক্ষিণ আফ্রিকাকে নিজেদের মাটিতে হেসেখেলে হারিয়ে বিদায় করে দেয় টুর্নামেন্ট থেকে। ১২ আসরে অংশ নিয়ে মাত্র দ্বিতীয়বারের মত সেমির টিকিট পায় আকবর আলির দল। এর আগে ২০১৬ সালে মেহেদী হাসান মিরাজের নেতৃত্বে তৃতীয় স্থানে থেকে টুর্নামেন্ট শেষ করেছিল টাইগার যুবারা। নিউজিল্যান্ডকে হারাতে পারলেই ইতিহাস, প্রথমবারের মত ফাইনাল, ৯ ফেব্রুয়ারি মুখোমুখি হবে আগেই ফাইনাল নিশ্চিত করা ভারতের।
এমন ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের দেওয়া ২১২ রানের লক্ষ্য তাড়ায় শুরুটা অবশ্য ভালো হয়নি বাংলাদেশের। ৩২ রান তুলতেই সাজঘরে ফেরে দুই ওপেনার তানজিদ হাসান তামিম (৩) ও পারভেজ হোসেন ইমন (১৪)। এরপর দলের হাল ধরা ৬৮ রানের জুটি গড়েন মাহমুদুল হাসান জয় ও তৌহিদ হৃদয়। ৪৭ বলে ৪ চারে ৪০ রান করে তৌহিদ হৃদয় আদিত্য আশোকের বলে স্টাম্পিং হলে ভাঙে জুটি। হৃদয় ফিরে গেলেও আগের ম্যাচের জয়ের নায়ক শাহাদাত হোসেনকে নিয়ে ১০১ রানের জুটিতে দলকে ৬ উইকেটের বড় জয় এনে দেন মাহমুদুল হাসান।
কিউই বোলারদের দর্শক বানিয়ে মাঠের চারপাশে শট খেলেন মাহমুদুল। ১২৬ বলে যুব ওয়ানডে ক্যারিয়ারে নিজের চতুর্থ সেঞ্চুরি তুলে নেওয়ার পথে মাহমুদুল খেলেন ১৩ চার। ৪৩ তম ওভারের পঞ্চম বলে টেশকফকে চার মেরে সেঞ্চুরিতে পৌঁছানো মাহমুদুল পরের বলেই ফেরেন ফিরতি ক্যাচ দিয়ে। অবশ্য এরপর শাহাদাত-আকবরের ব্যাটে খুব বেশি সমস্যায় পড়তে হয়নি টাইগার যুবাদের। ৩৫ বল হাতে রেখেই লক্ষ্যে পৌঁছায় বাংলাদেশ। শাহাদাত অপরাজিত থাকেন ৪০ রানে, আকবর ৫ রানে। কিউ যুবাদের পক্ষে একটি করে উইকেট নেন ক্রিস্টিয়ান ক্লার্ক, ডেভিড হ্যানকক ও আদিত্য আশোক।
এর আগে টসে জিতে নিউজিল্যান্ডকে ব্যাটিংয়ে পাঠায় বাংলাদেশ কাপ্তান। ইনিংসের ২য় ও নিজের করা প্রথম ওভারেই অধিনায়কের মুখে হাসি ফোটান শামীম হোসেন। ওপেনার রাই মারিউকে (১) তানজিদ হাসান তামিমের ক্যাচ বানিয়ে ফেরান শামীম। ওলি হোয়াইট ও ফারগাস লেলম্যান মিলে শুরুর ধাক্কা সামলানোর চেষ্টা চালান। ধীরগতিতে রান তুলতে থাকেন এই দুইজন।
১২ তম ওভারের ৪র্থ বলে হোয়াইটকে আকবর আলির ক্যাচ বানিয়ে ফেরান রাকিবুল হাসান। কিউই যুবাদের রান তখন ৩১। ফারগাস লেলম্যানকে নিজের দ্বিতীয় শিকার বানিয়ে ফেরান শামীম হোসেন, দারুণ এক ক্যাচ নেন মাহমুদুল হাসান জয়। অধিনায়ক জেসি ট্যাশকফ বেশীক্ষণ টেকেননি। ১০ রান করে হাসান মুরাদের বলে বোল্ড হন তিনি।
৭৪ রানে ৪ উইকেট হারানো কিউই যুবাদের হয়ে ত্রাতা হিসাবে আবির্ভূত হন নিকোলাস লিডস্টোন ও বেকহ্যাম হুইলার-গ্রিনল। ৫ম উইকেট জুটিতে এই দুজন যোগ করেন ৬৭ রান। ৭৪ বলে ৪৪ রান করা লিডস্টোনকে লেগ বিফোর উইকেটের ফাঁদে ফেলে এই জুটি ভাঙেন শরিফুল ইসলাম।
লিডস্টোন সাজঘরে ফেরার পরের ওভারেই সাজঘরে ফেরেন কুইন সানডে। সানডেকে ফিরিয়ে নিজের দ্বিতীয় উইকেট পান হাসান মুরাদ। ৭ রান করা ক্লার্ককে বোল্ড করে সাজঘরের পথ দেখিয়ে দেন শরিফুল ইসলাম। নিজের করা ৯ম ওভারের ৩য় বলে ফেরান জয় ফিল্ডকে। হুইলার-গ্রিনল শেষ পর্যন্ত ৮৩ বলে ৫ চার ও ২ ছয়ে ৭৫ রান করে অপরাজিত থাকেন। ৮ উইকেটে ২১১ রানে থামে কিউই যুবারা। বাঙ্গালদেশের হয়ে সর্বোচ্চ তিনটি উইকেট নেন শরিফুল ইসলাম, দুটি করে শিকার শামীম হোসেন ও হাসান মুরাদের, একটি নেন রাকিবুল হাসান।