

১৩ বছর ধরে যে রেকর্ড নিজের দখলে রেখেছেন রকিবুল হাসান আজ (২ ফেব্রুয়ারি) মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সেই রেকর্ডই ভেঙে দিলেন প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যান বন্ধু তামিম ইকবাল। ২০০৭ সালে খেলা রকিবুলের ৩১৩ রানের অপরাজিত ইনিংসটিকে অতীত করে তামিমের অপরাজিত ৩৩৪ রানই এখন বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংস।
তামিম যখন আস্তে আস্তে রকিবুলের রেকর্ডের দিকে ছুটছেন তখন ফিল্ডার রকিবুলের স্লেজিং করারই কথা কিন্তু উল্টো ব্যাটসম্যান তামিমই রকিবুলকে বেশি স্লেজিং করেছেন।
তামিমের রেকর্ড ট্রিপল সেঞ্চুরি উদযাপন করেছে বিসিবিও। তৃতীয় দিনের খেলা শেষে আগের রেকর্ডের মালিক রকিবুলকে সাথে নিয়ে তামিম কাটেন কেক। পরে দুজনেই কথা বলেন সংবাদ মাধ্যমের সাথে। নিজের একযুগের বেশি সময়ের রেকর্ড ভেঙেছেন প্রতিপক্ষ শিবিরের বন্ধু তামিম। নিজের রেকর্ড অতীত হচ্ছে দেখে কিছুটা খারাপ লাগলেও তামিমের মানের একজন এমন রেকর্ড নিজের দখলে নিয়েছেন বলে প্রকাশ করেছেন উচ্ছ্বাস।
ওয়ালটন সেন্ট্রাল জোনের রকিবুল হাসান তামিমের রেকর্ড গড়া ইনিংস নিয়ে বলেন, ‘প্রথমত আমি অভিনন্দন জানিয়েছি। আপনারা মনে হয় জানেন আমরা একসঙ্গে অনূর্ধ্ব-১৯ খেলেছি। আমাদের একসঙ্গে যাত্রা অনূর্ধ্ব-১৭ থেকে। সেদিক থেকে তামিম আমার অন্যতম সেরা বন্ধু। আমার খুব ভালো লেগেছে। আপনারা সবাই স্বাক্ষী, তামিম আজকে যেভাবে খেলেছে সে এটা ডিজার্ভ করে।’
নিজের রেকর্ড ভাঙতে যাছে তামিম এমন পরিস্থিতিতে স্বাভাবিক খারাপ লাগার কথা অস্বীকার করেননি রকিবুল, ”ক্রিকেটার হিসাবে রেকর্ডের ক্ষেত্রে মনে হয় যে আমার রেকর্ড টা উপরে থাক। সেদিক থেকে চিন্তা করলে একটু ওরকম লেগেছে আমার কাছে। স্পোর্টিং মাইন্ডে বলতে গেলে তামিমের মতো প্লেয়ার যে এটা ভেঙেছে। আমি যেমনটা বললাম ও যে মানের প্লেয়ার, এবং যেধরণের খেলা খেলেছে আপনারা সবাই দেখেছেন। ইটস ট্রেমেন্ডাস।’
নিজের দীর্ঘদিনের রেকর্ড ভাঙার পথে তামিম অন্তত এমন সময়েও স্লেজিং করাটা স্বাভাবিক ঘটনা হত রকিবুলের জন্য। অথচ মজার ছলে রকিবুল জানালেন তামিমই উল্টো তাঁকে করেছে স্লেজিং। এ প্রসঙ্গে ওয়ালটন সেন্ট্রাল জোনের এই ব্যাটসম্যান বলেন, ‘আমি যতটা না ওরে (তামিম) স্লেজিং করেছি ও ব্যাটিং করে আমাকে তার চেয়ে বেশি স্লেজিং করেছে।’
তামিমও অবশ্য স্বীকার করেছেন রকিবুল স্লেজিং করেননি, ‘স্লেজিং করে নাই (রকিবুল), তবে দোয়া তো নিশ্চয়ই করেছে (হাসি)।’
এদিকে নিজের রেকর্ড গড়া ট্রিপল সেঞ্চুরি সম্পর্কে তামিম বলছেন কখনোই আলাদা করে ভাবতেন না এসব। এর আগে একমাত্র বাংলাদেশি হিসেবে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ট্রিপল ছিল রকিবুলের। রকিবুলের ইনিংস নিয়ে বিভিন্ন সময়ে প্রশংসা করতেন বলেও জানান বাঁহাতি এই ওপেনার। বিশেষ করে এত লম্বা সময় ধরে ব্যাটিং করার ধৈর্য নিয়ে বেশ অবাকই হতেন তামিম, ‘সত্যি কথা আমি কখনোই ভাবিনি যে আমাকে ৩০০ করতে হবে। তবে আমি যখনই চিন্তা করতাম রকিবুলের ব্যাপারে যে আমাদের একজনই ৩০০ করেছে- আমরা সবসময়ই বলতাম কত ধৈর্য এর যে ৩০০ করে ফেলছে!’
রকিবুলের রেকর্ড ভাঙবেন এমন পরিকল্পনা কখনোই ছিলনা তামিমের,’৩০০ করা তো এতো ইজি না। নরমালি আমাদের উইকেট নরমালি স্লো থাকে, স্পিনিং থাকে। তো এই জায়গাটাই ৩০০ করাটা একটু কঠিন হয়ে যায়। ফাস্ট উইকেট, আউটফিল্ড ফাস্ট থাকলে তুলনামূলক সহজ হয়। আমি সবসময় চিন্তা করতাম করলো টা ক্যামনে, এটা আমাদের জাতীয় দলেও কথা বলার টপিক ছিল যে কিভাবে এতো ধৈর্য, আর ও তো মনে হয় ৬০০ এর কিছু বেশি বলও খেলছে। আপনি যদি জিজ্ঞাসা করেন যে আমি কোনদিন এটা নিয়ে ভেবেছি কিনা, প্ল্যান করেছি কিনা- সত্যি কথা বলতে না, প্ল্যান করিনি।’