

২০০৭ বিশ্বকাপে কুইন্স পার্ক ওভালে ডাউন দ্যা উইকেটে এসে জহির খানকে হাঁকানো ছক্কা একটা সময় পর্যন্ত তামিম ইকবালের বিজ্ঞাপনই হয়ে গিয়েছিল। সময় গড়িয়েছে, বয়স বেড়েছে, নিজস্ব বোধ জেগেছে। তামিম হয়েছেন পরিণত, হাত খুলে খেলা তামিম কমিয়েছেন শট, পেয়েছেন সাফল্য। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে টি-টোয়েন্টির মত ধুম ধাড়াক্কা ক্রিকেট ফরম্যাটেও তামিমের ইনিংস সাজানোর রেসিপি নিয়ে হচ্ছে নানা সমালোচনা। বিশেষ করে সদ্য সমাপ্ত বিপিএলে ঢাকা প্লাটুনের হয়ে খেলা তার ইনিংসগুলো ফরম্যাট বিবেচনায় অনেকের কাছেই মনপুত হয়নি।
১২ ম্যাচে ৩৯.৬০ গড়ে রান করেছেন ৩৯৬, স্ট্রাইক রেট ১০৯.৩৯। সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের তালিকায় তামিম আছেন ৭ম অবস্থানে। যেখানে স্ট্রাইক রেট বিবেচনায় নিলে বাংলাদেশি নিয়মিত অনিয়মিত বাকি যেসব ওপেনার ব্যাট করেছে তাদের স্ট্রাইক রেট বেশিরভাগেরই ১৩০-১৪০ এর মধ্যে। ১২ ম্যাচের ৭ ইনিংসেই ৩০ বা তার বেশি রান করেছেন তামিম ইকবাল, যার তিনটিকে রুপ দিয়েছেন ফিফটিতে। দুটো ফিফটিই আবার অপরাজিত থেকে। তামিমের ধীরে খেলার পেছনে অবশ্য চাইলে কিছু যুক্তিও দাঁড় করানো যায়। অন্যান্য দলের মত মিডল অর্ডার শক্ত না থাকাটা হতে পারে অন্যতম কারণ।
তবে পরিস্থিতি যেমনই ছিল তামিম প্রায় প্রতি ম্যাচেই খেলেছেন একই কৌশলে। শুরুতে ধীরে খেলা তামিম শেষে হাত খুলে বল রানের ব্যবধান নিতেন বাড়িয়ে। ব্যাপারটা এমন দাঁড়িয়েছিল তামিম যেন সাপোর্টিং চরিত্রে পরিণত হয়েছেন। পরিস্থিতি আমলে নিলেও সেট ব্যাটসম্যান তামিম যখন রানের গতি বাড়াবেনা স্বাভাবিকভাবেই অন্য প্রান্তের নতুন ব্যাটসম্যানের উপর চাপ বাড়বে। ১২০ বলের খেলা টি-টোয়েন্টিতে যেখানে প্রতিটি বলই হিসেব করে খেলতে হয়।
প্লাটুন কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিন অবশ্য বলেছেন তামিমকে এমন ভূমিকাই দেওয়া হয়েছে। এক যুগের বেশি সময় ক্রিকেট খেলা একজন ব্যাটসম্যানের ভূমিকা টি-টোয়েন্টিতে কেবলই সঙ্গীকে সমর্থন জুগানো যা সত্যি বেমানান। যদিও বিপিএলে তামিমের ব্যাটিং অ্যাপ্রোচ পছন্দ হয়নি তার বয়সভিত্তিক কোচ নাজমুল আবেদিন ফাহিমেরও। তামিমের এই ব্যাটিং ধরণ টি-টোয়েন্টির জন্য আদর্শ নয় বলে মনে করেন দেশের অন্যতম অভিজ্ঞ এই কোচ। দেশসেরা ওপেনার তামিমের বিপিএল ব্যাটিং ধরণ অনেকটা আন্তর্জাতিক ওয়ানডেতে তার শেষ কয়েক বছরের প্রতিচ্ছবিই। ওয়ানডে ক্রিকেট বলে লম্বা সময় ক্রিজে টিকে থেকে দলকে নির্ভার করার টোটকা কার্যকর ভূমিকা রাখে দলেও।
ডোমিঙ্গো কি ভাবছেন?
কিন্তু একই স্টাইলে টি-টোয়েন্টি খেলা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও দলকে চাপে ফেলতে পারে। তার বিপিএল ব্যাটিং অ্যাপ্রোচ নিয়ে গতকাল (১৯ জানুয়ারি) মিরপুরে পাকিস্তান সফরের অনুশীলন ক্যাম্পের প্রথম দিন কথা বলেছেন কোচ রাসেল ডোমিঙ্গোও। এই দক্ষিণ আফ্রিকান জানান তারা এখনো সিদ্ধান্ত নেননি তামিম আসলে কোন ভূমিকায় খেলবেন। অপর প্রান্তের সঙ্গী বিবেচনায় বদল হতে পারে তামিমের ব্যাটিং ধরণে, ‘তামিমের সাথে আমার এটি প্রথম সফর। আশা করি এখন তাকে আরেকটু বেশি বুঝতে পারবো।’
‘বিপিএলে তার ব্যাটিং ধরণ আমি বুঝতে পারছি, আমাদের আলোচনার প্রয়োজন সে আসলে কোন ভূমিকায় খেলবে দলে। এই মুহুর্তে তার ভূমিকা নিয়ে কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। আগামী দুইদিন পর এটা নিয়ে আমি ভাববো। এটা কার সঙ্গে সে ওপেন করছে তার উপরও অনেকটা নির্ভর করে। ড্যাশিং কোন ব্যাটসম্যানের সাথে ওপেন করতে নামলে তার ভূমিকা এমনই থাকবে। আর অনভিজ্ঞ কারও সাথে ওপেন করলে তাঁকেই সামনে থেকে খেলতে হবে। এসব সিদ্ধান্ত সময় অনুযায়ী নেওয়া হবে।’