

বাংলাদেশের পাকিস্তান সফর যতটা অনিশ্চত ছিল ঠিক ততটাই নিশ্চিত ছিল পাকিস্তান যাচ্ছেন না মুশফিকুর রহিম। বাংলাদেশ জাতীয় দলের অন্যতম সিনিয়র এই ক্রিকেটার পাকিস্তান সুপার লিগের ড্রাফটেও নাম দেননি পুরো টুর্নামেন্ট পাকিস্তানে হবে বলে। তবে ভিন্ন ভিন্ন সময় ভিন্ন ভিন্ন কারণ জানা গিয়েছে তার পাকিস্তান সফরে না যাওয়ার পেছনে। সবশেষ এমন খবর শোনা গিয়েছিল যে বিশ্রামের লক্ষ্যেই টি-টোয়েন্টি সিরিজ থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছে যার মানে দাঁড়াচ্ছিল অন্য ফরম্যাটে সম্ভাবনা থাকতেও পারে।
কিন্তু বিপিএল ফাইনাল হারের পর সংবাদ সম্মেলনে মুশফিক সোজা জানিয়ে দিলেন নিরাপত্তা ইস্যুতে পরিবার চাইছেনা বলেই যাচ্ছেন না, সেটা কেবল টি-টোয়েন্টি নয় অদূর ভবিষ্যতে পাকিস্তান সফরেই পাওয়া যাবেনা তাঁকে।
একদিন আগে প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন নান্নু জানিয়েছে মৌখিকভাবে জানানো মুশফিককে আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। সংবাদ সম্মেলনে মুশফিক জানালেন নিয়মানুসারে ইতোমধ্যে দেওয়া হয়েছে চিঠিও। তাই পাকিস্তান সফরে যাবেন কিনা, সিদ্ধান্তে বদল এসেছে কিনা এমন প্রশ্নে একটু চটলেন মুশফিক।
‘সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হওয়ার কি আছে? আমি আগেই বলে দিয়েছি আমি যাবো না। এটা আমার পারিবারিক কারণ। আমি অনুরোধ করেছি এবং এটা তারা (বোর্ড) মেনে নিয়েছে। আমি অফিসিয়াল লেটারও দিয়েছি। পাকিস্তানেই যাচ্ছি না।’
নিরাপত্তা ইস্যু নাকি পারিবারিক অভ্যন্তরীণ কোন সমস্যা? সাংবাদিকের করা এমন কড়া প্রশ্নের উত্তরে উইকেটরক্ষক এই ব্যাটসম্যানের জবাবও ছিল ঝাঁঝালো, ‘অন্য কি কারণ হতে পারে? আপনি না জানলে কিছু করার নেই আমার। পারিবারিক কারণ এটা তো বললামই। তারা ভয়ে শঙ্কিত। এভাবে মানসিক চাপ নিয়ে গিয়ে আমি খেলতে পারি না।’
বিশ্রাম নিতে গিয়ে কিংবা পারিবারিক কারণে জাতীয় দলের খেলা মিস করেছেন মুশফিক এমন ঘটনা তার ক্রিকেট ক্যারিয়ারেই বিরল। কিন্তু পাকিস্তান সফর চূড়ান্ত হওয়ার আগেই মুশফিকের পাকিস্তান সফরে যেতে না চাওয়ার কারণ বিশ্রাম নয় ধারণা করা গিয়েছে আগেই। তবে তার বাবা একদিন আগে কয়েকটি সংবাদ মাধ্যমে জানিয়েছেন বিপিএল শেষে বিশ্রাম নিবেন মুশফিক তা আগেই নাকি পরিবারকে বলে রেখেছেন। ফলে কিছুটা ধোঁয়াশা তৈরি হয় আসলে নিরাপত্তা ইস্যু নাকি বিশ্রাম?
বাংলাদেশ দলের অভিজ্ঞ এই ক্রিকেটার সরাসরি জানালেন বিশ্রাম চাওয়াকে মনে করেন পাপ হিসেবে। ফলে পাকিস্তান সফরের দল থেকে নিজেকে যে নিরাপত্তা আতঙ্কেই সরিয়ে নিয়েছেন তা স্পষ্ট, ‘না না অবশ্যই। আমাকে যদি বলেন বাংলাদেশের একটা সিরিজ থেকে বিশ্রাম নিতে হবে। এটার চেয়ে বড় পাপ হতে পারে না। আমার কাছে কিন্তু সুযোগও ছিল পিএসএলের মতো বড় আসরে খেলার। আমি কিন্তু শুরুতেই না করে দিয়েছি। কারণ আমি জানি এবার পুরো আসর পাকিস্তানে হবে। আমি তখনই বলেছি, এখানে যেহেতু আমার পরিবার অনুমতি দিচ্ছে না। আমি যেতে পারি না।’
জীবনের আগে ক্রিকেট নয় উল্লেখ করে মুশফিক যোগ করেন, ‘জীবনের আগে কখনোই ক্রিকেট না। আমি জানি গত দুই বছর পাকিস্তান অনেক ভালো জায়গা। কিন্তু আরও দল যদি সেখানে যায় ব্যক্তিগতভাবে আমার আত্মবিশ্বাস আসবে, আমি চাই এটা। আমি পাকিস্তানে আগেও গিয়েছি। ২০০৮ সালে ওই ঘটনার আগে। উপমহাদেশে খেলার জন্য সেটা অসাধারণ জায়গা অবশ্যই। পাকিস্তানের ব্যাটিং ফ্রেন্ডলি উইকেট মিস করব। আগামি ২-৩ বছর যদি সবগুলো দল একটানা পাকিস্তান যায়, আমারও যদি সুযোগ আসে, তাহলে না যাওয়ার কারণ নেই।’