

প্লে-অফ নিশ্চিত ছিল আগেই, গ্রুপ পর্বের শেষদিনের খেলায় আজ চার দলই লড়েছে কোয়ালিফায়ার নিশ্চিতের লড়াইয়ে। দিনের প্রথম ম্যাচে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সকে হারিয়ে দুই নম্বর জায়গা নিশ্চিত করে রাজশাহী রয়্যালস (দ্বিতীয় ম্যাচের আগে এক নম্বরেই ছিল)। আর রান বন্যার দ্বিতীয় ম্যাচে মুমিনুল হক ও মেহেদী হাসানের ব্যাটে চড়ে ঢাকা প্লাটুনের দেওয়া ২০৬ রানের লক্ষ্য নাজমুল হোসেন শান্তের দুর্দান্ত এক সেঞ্চুরিতে ৮ উইকেট হাতে রেখেই জিতে নেয় খুলনা টাইগার্স।
১২ ম্যাচে ৮ জয়ে চট্টগ্রাম, রাজশাহীর সমান ১৬ পয়েন্ট নিয়েও রান রেটে এগিয়ে খুলনা টাইগার্স গ্রুপ পর্ব শেষ করলো শীর্ষে থেকেই।
২০৬ রানের বড় লক্ষ্য তাড়ায় খুলনার শুরুটা যেমন হওয়া দরকার ছিল খুলনার দুই ওপেনার মেহেদী হাসান মিরাজ ও নাজমুল হোসেন শান্ত এনে দেন তেমন শুরুই। পাওয়ার প্লের ৬ ওভারে কোন উইকেট না হারিয়ে দুজনে তোলেন ৬০ রান, ৬.৫ ওভার স্থায়ী জুটিতে আসে ৭০ রান। আগের ম্যাচে ৭৪ রান করে রিটায়ার্ড হার্ট হওয়া মিরাজ আজ খেলেন ২৫ বলে ৭ চার ১ ছক্কায় ৪৫ রানের ইনিংস। মেহেদী হাসানের বলে বোল্ড হয়ে মিরাজ ফিরলে রাইলি রুশোকে নিয়ে রানের গতি একই রকম রাখার কাজটা করেন শান্ত।
বরং মিরাজের বিদায়ের পর শান্ত যেন আরও অশান্ত হয়ে ওঠেন, খেলতে থাকেন হাত খুলে। দুজনে তৃতীয় উইকেট জুটিতে যোগ করেন ৪০ বলে ৮১ রান যেখানে রুশোর অবদান ১৭ বলে ২৩। রুশো ফিরলেও ২৭ বলে ফিফটিতে পৌঁছানো নাজমুল হোসেন শান্ত ঠিকই তুলে নেন সেঞ্চুরি। বিপিএল ইতিহাসে পঞ্চম বাংলাদেশী হিসেবে নাম লেখান সেঞ্চুরিয়ান হিসেবে। ৫১ বলে ৭ চার ৬ ছক্কায় সেঞ্চুরিতে শান্ত যখন সেঞ্চুরিতে পৌঁছান ততক্ষণে দলের জয়ের ভিতটা হয়ে যায় শক্ত। মুশফিকুর রহিমকে নিয়ে পথটা সহজে পাড়িও দেন বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান।
দুজনের অবিচ্ছেদ্য ৫৬ রানের জুটিতে ১১ বল ও ৮ উইকেট হাতে রেখেই জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় খুলনা টাইগার্স। ৫৭ বলে ৮ চার ৭ ছক্কায় ১১৫ রানে শান্ত ও ১৮ রানে অপরাজিত থাকেন মুশফিক। টুর্নামেন্টে এর আগের ম্যাচগুলো খেলে শান্ত করতে পেরেছিলেন ১১৫ রান, আজ এক ম্যাচেই করলেন ১১৫! ঢাকা প্লাটুনের হয়ে একটি করে উইকেট ভাগাভাগি করেন মেহেদী হাসান ও শাদাব খান।
সকালের সূর্য ইঙ্গিত দেয় দিনের আবহাওয়া কেমন হতে পারে, তবে মাঝে মাঝে বৈরি আবহাওয়া সব পূর্বাভাসই করে দিতে পারে এলোমেলো। চলতি বিপিএলের গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে মুমিনুল হক ও মেহেদী হাসানের অনেকটা সেরকম দুই ঝড়ে তালগোল পাকিয়ে ফেলে বেশ দুর্দান্ত শুরু করা খুলনা টাইগার্স বোলাররা। পাওয়ার প্লের ৬ ওভারে তিন উইকেট হারিয়ে ৩৬ রান তোলা ঢাকা প্লাটুন ইনিংস শেষ করে ৪ উইকেটে ২০৫ রানে।
গায়ে টেস্ট ক্রিকেটার তকমা লেগে যাওয়া মুমিনুল হক ওপেন করতে নেমে দলের প্রাথমিক বিপর্যয় কাটিয়ে খেলে ফেলেন ঝড়ো এক ইনিংস, তাঁর সাথে সমানতালে তান্ডবে অংশ নেয় টুর্নামেন্টে ধুমধাড়াক্কা ইনিংস খেলার সুখ্যাতি পেয়ে যাওয়া অফ স্পিন অলরাউন্ডার মেহেদী হাসান। দুজনে মিলে চতুর্থ উইকেট জুটিতে যোগ করেন ৮০ বলে ১৫৩ রান। সোয়া এক ঘন্টার ঝড়ে বেশি তোপ সহ্য করতে হয় খুলনা পেসার শফিউল ইসলামকে।
প্রথম দুই ওভারে ১৪ রান খরচ করা শফিউল শেষ দুই ওভারে দেন ৩৬ রান। শুরুতে দলের হাল ধরতে গিয়ে ৪১ বলে ফিফটিতে পৌঁছানো মুমিনুল শেষ পর্যন্ত থামেন ৫৯ বলে ৭ চার ৪ ছক্কায় ৯১ রান করে। মুমিনুলের বিদায়ে জুটি ভাঙলেও রানের গতি কমতে দেননি মেহেদী হাসান। শেষ ওভারেই মুমিনুল-মেহেদী ঝড়ে প্লাটুন তোলে ৯৭ রান। ৩১ বলে ফিফটিতে পৌঁছানো মেহেদী অপরাজিত থাকেন ৩৬ বলে ৩ চার ৫ ছক্কায় ৬৮ রানে। প্লাটুনের হয়ে সর্বোচ্চ দুটি উইকেট রবি ফ্রাইলিঙ্কের, একটি করে শিকার মোহাম্মদ আমির ও শফিউল ইসলামের।
সংক্ষিপ্ত স্কোরঃ
ঢাকা প্লাটুন ২০৫/৪ (২০), তামিম ১, মুমিনুল ৯১, বিজয় ১০, জাকের ১৪, মেহেদী ৬৮*, পেরেরা ৬*; আমির ৪-০-৩৫-১, ফ্রাইলিঙ্ক ৪-০-৩৫-২, শফিউল ৪-০-৫০-১।
খুলনা টাইগার্স ২০৭/২ (১৮.১), শান্ত ১১৫*, মিরাজ ৪৫, রুশো ২৩, মুশফিক ১৮*; মেহেদী ৪-০-৩৯-১, শাদাব ৪-০-৩২-১।
ফলাফলঃ খুলনা টাইগার্স ১১ বল ও ৮ উইকেট হাতে রেখে জয়ী।
ম্যাচসেরাঃ নাজমুল হোসেন শান্ত (খুলনা টাইগার্স)।