

কুমিল্লা ওয়ারিয়র্সের প্লে অফ খেলার স্বপ্ন কার্যত আগের ম্যাচেই খুলনা টাইগার্সের কাছে হেরে শূন্যের কোঠায় চলে এসেছিল, কাগজে কলমে যে হিসাবটুকু বেঁচে ছিল সেটাও খুলনার বিপক্ষে আজ (১০ জানুয়ারী) হেরে শেষ হয়ে গেল। মুশফিক-মিরাজের ব্যাটে চড়ে খুলনার দেওয়া ২১৯ রানের লক্ষ্য তাড়ায় গ্রুপ পর্বে নিজেদের শেষ ম্যাচে কুমিল্লা হেরেছে ৯২ রানে।
মিরপুরের উইকেট বিবেচনায় ২১৯ তাড়া করে জিততে যেমন শুরুর দরকার ছিল কুমিল্লার হয়েছে তাঁর বিপরীত। ইনিংসের তৃতীয় বলেই ওপেনিংয়ে উন্নতি হওয়া সাব্বির ফিরেছেন খালি হাতে। এরপর বাকিরাও শামিল হন আসা যাওয়ার মিছিলে।
খুলনার বোলারদের তোপে নিয়মিত বিরতিতে পড়ে উইকেট। ৩২ রানে ৩ উইকেট হারানো কুমিল্লার হয়ে কিছুটা লড়াইয়ের ইঙ্গিত দেন লঙ্কান ব্যাটসম্যান উপুল থারাঙ্গা। ২৩ বলে ৩২ রান করে চতুর্থ ব্যাটসম্যান হিসেবে তিনিও ফিরে যান দলীয় ৬০ রানের মাথায়।
১৭ বলে ধীরগতির ১০ রানের ইনিংস খেলে সৌম্য মোহাম্মদ আমিরের দেওয়া দুর্দান্ত এক ইয়র্কারে এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়লে ৭৬ রানেই কুমিল্লা হারায় ৫ উইকেট। শেষদিকে ইয়াসির আলি রাব্বি, ফারদীন হাসানরা কেবল হারের ব্যবধানই কমাতে পারেন। ইয়াসির আলির ব্যাট থেকে আসে ২০ রান। ফারদীন হাসান করতে পারেননি ২২ রানের বেশি। কুমিল্লাকে থামতে হয় ৯ উইকেটে ১২৬ রানে।
খুলনার হয়ে সর্বোচ্চ তিনটি উইকেট নেন শহিদুল ইসলাম। দুটি করে শিকার মোহাম্মদ আমির, আমিনুল ইসলাম বিপ্লবের। একটি করে উইকেট ভাগাভাগি করেন রবি ফ্রাইলিঙ্ক ও শামসুর রহমান শুভ।
এর আগে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে আবারও ব্যর্থ হন ওপেনার নাজমুল হোসেন শান্ত। ইফরান হোসেনের করা ইনিংসের প্রথম ওভারেই শান্ত ফিরেছেন ১ রান করে। এরপর ব্যাটিং অর্ডারে উন্নতি হয়ে ওপেনার বনে যাওয়া মেহেদী হাসান মিরাজ ও দলপতি মুশফিকের ঝড়ো দুই ইনিংসে খুলনা পায় ২১৮ রানের পাহাড়সম পুঁজি। দলীয় ৩৩ রানে রাইলি রুশো ২৪ রান করে ফিরলে বাকী গল্প নিজেদের ব্যাট দিয়ে লিখেন মিরাজ-মুশফিক। দুজনে জুটিতে যোগ করেন ১৬৮ রান।
রান নিতে গিয়ে পেশীতে টান পেয়ে মিরাজ মাঠ ছাড়লে দুজনের বিচ্ছেদ হয়। ততক্ষণে নামের পাশে ৭৪ রান যোগ করে ফেলেন এই অলরাউন্ডার। ৩৩ বলে ফিফটিতে পৌঁছানো মিরাজ মাঠ ছাড়ার আগে ইনিংসটি সাজান ৪৫ বলে ৫ চার ৩ ছক্কায়।
মিরাজ ফিরে গেলেও ততক্ষণে ফিফটিতে পৌঁছানো মুশফিকের সামনে ছিল সেঞ্চুরি তুলে নেওয়ার সুযোগ। কিন্তু আবারও ৯৮ রানে অপরাজিত থেকে পুড়তে হয়েছে আক্ষেপে, টুর্নামেন্টে এর আগে ৯৬ রান করে আউট হয়েছিলেন তিনি।
আজ সেঞ্চুরি করার ছিল বেশ ভালো সম্ভাবনা। সৌম্য সরকারের করা ইনিংসের শেষ ওভারের দ্বিতীয় বলেই চার মেরে পৌঁছান ৯৬ রানে, বাকি চার বলে ৪ রান করা ছিল সময়ের ব্যাপার মাত্র। কিন্তু তৃতীয় বলে সিঙ্গেল নিয়ে নাজিবউল্লাহ জাদরানকে দেন স্ট্রাইক। পঞ্চম বলে জাদরান সিঙ্গেল নিয়ে স্ট্রাইক দিলেও মুশফিকের সামনে ছিল সুযোগ, মারতে হত বাউন্ডারি। তবে সৌম্যের দেওয়া ফুলটসে একরানের বেশি নিতে না পারায় মিস করতে হয়েছে সেঞ্চুরি। দল থামে ২ উইকেটে ২১৮ রানে। কুমিল্লার হয়ে উইকেট দুটি ভাগাভাগি করেন ইরফান হোসেন ও মুজিব উর রহমান।
সংক্ষিপ্ত স্কোরঃ
খুলনা টাইগার্স ২১৮/২ (২০), শান্ত ১, মিরাজ ৭৪ (রিটায়ার্ড হার্ট), রুশো ২৪, মুশফিক ৯৮*, নাজিবউল্লাহ ৭*; ইফরান ৩-০-৩৮-১, মুজিব ৪-০-১৮-১।
কুমিল্লা ওয়ারিয়র্স ১২৬/৯ (২০), ভ্যান জিল ১০, সাব্বির ০, থারাঙ্গা ৩২, মালান ৮, সৌম্য ১০, রাব্বি ২০, ফারদিন ২২, রনি ৩, মুজিব ২, সুমন ৯*, ইফরান ১*; আমির ৪-০-২৪-২, শহিদুল ৪-০-২৭-৩, শুভ ২-০-১৭-১, বিপ্লব ৪-০-১৯-২, ফ্রাইলিঙ্ক ৪-০-২৫-১
ফলাফলঃ খুলনা টাইগার্স ৯২ রানে জয়ী।
ম্যাচসেরাঃ মুশফিকুর রহিম (খুলনা টাইগার্স)।