

টেস্ট অভিষেকের পর প্রায় ৫ বছরের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে ২০০৫ সালের আজকের দিনে (১০ জানুয়ারি) মধ্য দুপুরে বাংলাদেশ ক্রিকেট পায় প্রথম টেস্ট জয়ের স্বাদ। চট্টগ্রামের এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে ম্যাচের পঞ্চম দিন লাঞ্চের ঘন্টাখানেক পর এনামুল হক জুনিয়রের করা বলে জিম্বাবুয়ের ক্রিস এমপফু যখন শর্টে দাঁড়ানো মোহাম্মদ আশরাফুলকে ক্যাচ দেয় ততক্ষণে গ্যালারি মেতে উঠে উৎসবে।
৩৫ তম টেস্টে এসে কাঙ্ক্ষিত জয় পেয়ে আনন্দে পাগলপ্রায় অবস্থা বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটারদেরও। মাঠের চারপাশে জাতীয় পতাকা হাতে ল্যাপ অব অনার, ডিগবাজি খাওয়ার দৃশ্য এখনো চোখের সামনে ভাসে ক্রিকেট প্রেমীদের।
জিম্বাবুয়েকে ৩৮১ রানের টার্গেট দিয়ে এনামুল হক জুনিয়রের বাঁহাতি স্পিন ঘুর্ণিতে আঁটকে রাখা যায় মাত্র ১৫৪ রানে। প্রথম ইনিংসে উইকেট শূন্য থাকা এনামুল ৪৫ রান খরচায় একাই তুলে নেন ৬ উইকেট। সাথে মাশরাফি ও তাপস বৈশ্যের দুটি করে উইকেট। বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট জয়ের নায়ক বনে যাওয়া এনামুল হন ম্যাচ সেরা। ১৮ বছর তরুণ এক ক্রিকেটার দেশের প্রথম টেস্ট জয়ের নায়ক। সময় গড়িয়ে বাংলাদেশও টেস্টে সম্ভাবনার ছিটেফোঁটাও বাস্তবে রূপ দিতে পারেনি, গত ১৫ বছরে কাঠামোগত উন্নতিও চোখে পড়েনি খুব একটা।
বাংলাদেশের জার্সিতে বাঁহাতি এই স্পিনারও টেস্ট খেলতে পারেননি বেশিদিন, ২০০৯ সাল পর্যন্ত নিয়মিত হলেও এরপর দলে জায়গা পান ২০১৩ সালে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে হারারে টেস্টের পর আর সুযোগ মেলেনি জাতীয় দলে, সবশেষ ওয়ানডে খেলেছেন তারও অনেক আগে ২০০৯ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেই। জাতীয় দলের দরজা বন্ধ হয়ে গেলেও সিলেট থেকে উঠে আসা ৩৩ বছর বয়সী এই স্পিনার ঘরোয়া ক্রিকেটের নিয়মিত মুখ। চলতি বিপিএলে খেলছেন চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের হয়ে। যদিও টিম কম্বিনেশনের দরুণ সুযোগ মেলেনি এক ম্যাচের বেশি।
আজকের দিনে বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট জয়ের স্মৃতি রোমন্থন করতে গিয়ে এনামুল হক জুনিয়রের কণ্ঠে পাওয়া যায় গর্বের ছাপ। যাবেই না বা কেন, বাংলাদেশের প্রথম জয়ের কথা উঠলেই যে নিতে হবে তার নাম! আগামীকাল (১১ জানুয়ারী) রাজশাহী রয়্যালসের বিপক্ষে চলতি বিপিএলের গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচ সামনে রেখে আজ (১০ জানুয়ারী) মিরপুরে অনুশীলন করে এনামুলের চট্টগ্রাম।
অনুশীলন শেষে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট জয়ের প্রসঙ্গ আসতেই বাঁহাতি এই স্পিনার বলেন, ‘একশ বছর পরেও যদি কেউ ইতিহাসের পাতা খুলে তাহলে দেখবে যে বাংলাদেশ প্রথম যে টেস্ট জিতেছে সেখানে আমিই ছিলাম ম্যান অফ দ্যা ম্যাচ। অবশ্যই এটা আমার জন্য একটা গর্বের ব্যাপার আর সত্যি কথা বলতে যে আসলে এখনও দশ জানুয়ারি এসে পড়লে মনে হয় যে আমি বাংলাদেশের জন্য কিছু করেছি।’
৩৫ তম টেস্টে এসে প্রথম জয় পাওয়া বাংলাদেশ এরপরের ১৫ বছরে খেলেছে আরও ৮২ টেস্ট, জয় মাত্র ১২ টি। যা স্পষ্ট ইঙ্গিত দেয় সেভাবে উন্নতি হয়নি বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেটের। এতবছর টেস্ট খেলেও সেভাবে উন্নতি না হওয়াটা পোড়ায় প্রথম টেস্ট জয়ের নায়ককে, ‘অবশ্যই পোড়ায়, কখনো মনে হয় হয়তো আমাদের ভুল, হয়তো আমরা সেভাবে স্ট্রাকচার গড়ে তুলতে পারিনি। যেভাবে আমরা এগোতে চেয়েছিলাম টেস্ট ক্রিকেটে সেভাবে পারিনি। অবশ্যই আমাদের উচিত ছিল আমাদের ধারাবাহিকভাবে টেস্ট ক্রিকেটটি ভালো খেলা। সেটা হয়ে ওঠেনি। আশা করবো যে আমরা আরো গুরুত্ব দিব লাল বল ক্রিকেটটাকে ভবিষ্যতে।’
ক্রিকেটারদের স্কিল নিয়ে সন্দেহ না থাকা এনামুলের চোখে উন্নতি না হওয়ার পেছনে কাঠামোগত ঘাটতিই দায়ী, ‘অবশ্যই আমাদের স্কিলের অভাব নেই বাংলাদেশে। আমাদের ট্যালেন্টেরও অভাব নেই। হয়তো আমরা সেভাবে কাজে লাগাতে পারিনি এবং সেভাবে আমাদের স্ট্রাকচারটি গড়ে তুলতে পারিনি।’