

ঢাকা-চট্টগ্রাম হয়ে বিপিএল ফিরেছে ঢাকায় তবে ভাগ্য বদলায়নি সিলেট থান্ডারের। মাঝে চট্টগ্রামে খুলনার বিপক্ষে জেতা ম্যাচটি এখনো পর্যন্ত তাদের একমাত্র সফলতা। চট্টগ্রামে সিলেটের কাছে হেরে জয়ের ধারায় বাধ পড়ে খুলনার, এরপর হারে আরও এক ম্যাচ। তবে ঢাকায় ফিরে আজ (২৮ ডিসেম্বর) সিলেটের বিপক্ষে জয় দেখলো দলটি।
টানা দুই জয়ে পয়েন্ট টেবিলে নিজেদের জায়গাটা আরও শক্ত করলো মুশফিকুর রহিমের দল। দুই ওপেনার শান্ত-মিরাজের ব্যাটে চড়ে ৮ উইকেটের বড় জয় পায় খুলনা টাইগার্স, অনবদ্য ইনিংস খেলেন মিরাজ।
যথারীতি টস জিতে সিলেটকে ব্যাটিংয়ে পাঠায় খুলনা টাইগার্স কাপ্তান মুশফিকুর রহিম। টুর্নামেন্টে প্রথম খেলতে নেমে সিলেট ওপেনার রুবেল মিয়ার ধীরগতির ব্যাটিংয়ে বেশ বিপাকে পড়তে হয় সিলেটকে। একপাশে আন্দ্রে ফ্লেচার ব্যাট চালালেও অন্য প্রান্তে রুবেলের অনেকটা টেস্ট ঘরানার ব্যাটিং দর্শকদেরও অনেকটা বিরক্ত করে। প্রথম ৩১ বলে ১৭ রান করা রুবেল শেষদিকে কিছুটা এলোপাতাড়ি শটে ৪৪ বলে ২ চার ১ ছক্কায় ৩৭ রান করে শহিদুল ইসলামের শিকার হন।
এর আগেই বিদায় নেন দুই ক্যারিবিয়ান আন্দ্রে ফ্লেচার ও জনসন চার্লস। ২৪ বলে আন্দ্রে ফ্লেচার ৩৭ ও ১২ বলে ১৭ রান করেন চার্লস। খালি হাতে ফেরেন উইকেট রক্ষক ব্যাটসম্যান মোহাম্মদ মিঠুনও। এরপর রাদারফোর্ড ও অধিনায়ক মোসাদ্দেকের ৫৩ রানের জুটিতে ৪ উইকেট হারিয়ে ১৫৭ রানের পুঁজি পায় সিলেট। ২০ বলে রাদারফোর্ড ২৬ ও ১৮ বলে ২৩ রানে অপরাজিত থাকেন মোসাদ্দেক।
আজও বল হাতে আলো ছড়ান শহিদুল ইসলাম। আগের ম্যাচে চার উইকেটের পর আজ নেন দুই উইকেট। সমান দুটি উইকেট নেন রবি ফ্রাইলিঙ্কও, তবে ৪ ওভারে হজম করেন ৫৮ রান। বিপিএলের ইতিহাসে ১ ইনিংসে বেশি রান হজম করার তালিকার তিনে এখন ফ্রাইলিঙ্কের নাম।
View this post on Instagram
Shahidul shines again. #BPLT20 #BBPLT20 #BangabandhuBPL #BBPL #bplseason7 #KTvST #STvKT
জবাবে টুর্নামেন্টে ব্যাট হাতে খুলনার সবচেয়ে ব্যর্থ দুই ব্যাটসম্যানই এক জুটিতে ম্যাচ বের করে নিয়ে আসেন। টানা চার ম্যাচে দুই অঙ্ক ছুঁতে না পারা শান্ত আগের ম্যাচে করেছেন ৩০ কিন্তু আজকের আগে তিন ম্যাচে ব্যাট হাতে নিয়ে মিরাজ ব্যর্থ হয়েছেন তিনবারই। শেষ দুই ম্যাচে ওপেন করতে নেমেও সর্বোচ্চ রান ১২!
কিন্তু আজকের দিনটি যেন মিরাজ-শান্তরই ছিল। দুজনে মিলে ১২.২ ওভারের জুটিতে দুজনে যোগ করেন ১১৫ রান। এবাদত হোসেনের বলে নাইম হাসানের হাতে ধরা পড়ে শান্ত ফিরলে ভাঙে জুটি। ৩১ বলে ৫ চারে ৪১ আসে শান্তর ব্যাট থেকে। কিন্তু অন্য পাশে মিরাজ যেন নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়ার পণ করেই নেমেছেন। উইকেটের চারপাশে শট খেলে দিশেহারা করে দেন সিলেট থান্ডার বোলারদের।
৩১ বলে ৫ চার ২ ছক্কায় ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ফিফটিতে পৌঁছানো মিরাজকে দুহাত ভরে দিতেই প্রস্তুত ছিল ক্রিকেট বিধাতাও। নয়তো ইনিংসের ১৬ তম ওভারে ব্যক্তিগত ৭৬ রানের মাথায় নাইম হাসানের করা প্রথম বলে পয়েন্টে সহজ ক্যাচই কেন মিস করতে যাবে সান্টোকি?
শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থাকেন ৬২ বলে ৯ চার ৩ ছক্কায় ৮৭ রানে। যা তার টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের সেরা ইনিংস, আগের সর্বোচ্চ ছিল ৫১। শুধু টি-টোয়েন্টি কেনো, যেকোন ধরণের ফরম্যাট মিলে এটি মিরাজের সবচেয়ে বেশি রান করার রেকর্ড। এর আগে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে একবার খেলেছিলেন ৮০ রানের ইনিংস।
এমন দিনে সিলেটের রান কম হওয়ায় সেঞ্চুরি মিসের আক্ষেপ করারই কথা খুলনা টাইগার্স অলরাউন্ডারের। দলকে জয় থেকে মাত্র ১০ রান দূরে রেখে রাইলি রুশো (১৫) রান করে রাদারফোর্ডের বলে ফিরে গেলে মুশফিকুর রহিমকে (৩) নিয়ে জয়ের আনুষ্ঠানিকতা সারেন মেহেদী মিরাজ। ৮ উইকেট ও ১৩ বল হাতে রেখে খুলনা পেল টুর্নামেন্টে নিজেদের পঞ্চম জয়। সিলেটের হয়ে উইকেট দুটি ভাগাভাগি করেন এবাদত হোসেন ও শেরফানে রাদারফোর্ড।
সংক্ষিপ্ত স্কোরঃ
সিলেট থান্ডার ১৫৭/৪ (২০), ফ্লেচার ৩৭, রুবেল ৩৯, চার্লস ১৭, রাদারফোর্ড ২৬*, মিঠুন ০, মোসাদ্দেক ২৩*; ফ্রাইলিঙ্ক ৪-০-৫৮-২, শহিদুল ৪-০-২৬-২।
খুলনা টাইগার্স ১৫৮/২ (১৭.৫), শান্ত ৪১, মিরাজ ৮৭*, রুশো ১৫, মুশফিক ৩*; এবাদত ৪-০-২০-১, রাদারফোর্ড ১-০-৯-১।
ফলাফলঃ খুলনা টাইগার্স ১৩ বল ও ৮ উইকেট হাতে রেখে জয়ী।
ম্যাচসেরাঃ মেহেদী হাসান মিরাজ (খুলনা টাইগার্স)।