

পাক-ভারত ম্যাচ, কখনও একটি প্রার্থনা আবার এখনও একটি যুদ্ধ। আবেগ ছাড়িয়ে অনেকখানি মুগ্ধতা আবার কখনও সহিংস রুদ্রমূর্তি। এ যেন যুদ্ধ জয়ের উপাখ্যান। কিন্তু সময়ের চোরা স্রোতে ভারত যতটা না এগিয়েছে পাকিস্তান পিছিয়েছে তার চেয়ে বেশি। তাই হয়তো এখনকার সময়ে ভারত পাকিস্তান ম্যাচ মানে পাকিস্তানের অসহায় আত্মসমর্পণ। এবার আইসিসি ট্রফির প্রথম ম্যাচে সেই একই চিত্র। কিন্তু আন্ডার ডগ হিসেবে শুরু করা পাকিস্তান ম্যাচ বাই ম্যাচ ধরে এগিয়েছে, বিপরীতে ভারতের রীতিমতো বীরের বেশে ফাইনালে প্রত্যাবর্তন। কিন্তু পাকিস্তান এমন একটা দল, সবার যেখানে শেষ তাদের সেখান থেকে শুরু। তাইতো ম্যাচের আগেই লোক মুখের চ্যাম্পিয়ন ভারতকে এক রকম উড়িয়ে দিয়ে স্বপ্নের শিরোপা নিজেদের করে নিয়েছে। এই প্রথম আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির শিরোপা জিতলো পাকিস্তান। সেটাও ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে ১৮০ রানের ব্যবধানে বিশাল এক জয় দিয়ে।
আজও টস হেসেছিলো ভারতের হয়ে, টসে জিতে ক্যাপ্টেন বিরাট কোহলির ফিল্ডিং এর সিদ্ধান্ত। এই পিচে বল করার চেয়ে ব্যাট করা অনেক সহজ কাজ, তাই লম্বা ব্যাটিং লাইনআপ নিয়ে রান চেজকেই বেছে নিইয়েছিলেন কোহলি।
পাকিস্তানের হয়ে গোড়াপত্তনে নামেন এই টুর্নামেন্টেই অভিষেক হওয়া দারুণ ফর্মে থাকা ফখর জামান ও অভিজ্ঞ আজহার আলী। এই টুর্নামেন্টে একমাত্র বৈচিত্র্যময় বোলারের নাম ভুবেনেশ্বর কুমার, তার সুইং বাউন্স বুঝতে খুব কষ্ট হয়েছে তাকে মোকাবেলা করা ব্যাটসম্যানদের। আজকের ম্যাচের শুরুটাও তার মত করে, প্রথম ওভারটাই মেডেন আদায় করে নেন। ইনিংসের নবম বলে প্রথম রান পায় পাকিস্তান। শুরুতে ব্যাটসম্যানরা কষ্ট করলেও সময়ের সাথে হাত খুলে খেলতে থাকেন। ৯.২ ওভারে কোন উইকেট না হারিয়ে দলের অর্ধশত রান পূর্ণ করেন পাকিস্তানের দুই উদ্ভোধনী ব্যাটসম্যান। এরপর ভারতীয় বোলারদের নিজেদের নিয়ন্ত্রনে নিয়ে নেয় আজহার ও ফখর। প্রথম পাওয়ার প্লেতে বিনা উইকেটে ৫৬ রান এবং ১৮ তম ওভারের শেষ বলে দলের শত রান পূর্ণ হয়। এদিন ভারতের একমাত্র ভুবেনেশ্বর ছাড়া কেউ লাইন লেন্থ বজায় রেখে বল করতে পারিনি। ১২৮ রানের মাথায় পাকিস্তানের প্রথম উইকেটের পতন। আজহার ফেরেন রান আউট হয়ে, আউট হবার আগে ৭১ বলে ৫৯ রানের এক মুল্যবান ইনিংস খেলে যান। এরপরের সময়টা ফখর জামান ময়। এই টুর্নামেন্টের সবচেয়ে বিস্ময়ের নাম তিনি। আগের তিন ম্যাচে দুই ফিফটির পর ফাইনালে ভারতের অভিজ্ঞ বোলিং লাইনআপকে সাধারণ বানিয়ে তুলে নেন ক্যারিয়ারের প্রথম শতক। ৯২ বলে ১২টি চার ও ২টি ছয়ের মাধ্যমে তিনি শতক পূর্ণ করেন। দলীয় ২০০ রানের সময় তিনি ১০৬ বলে ১১৪ রান করে আউট হন। এরপর মালিক তাড়াতাড়ি ফিরলেও হাফিজ ও ইমাদ ওয়াসিম বাকিটা সময় কাটিয়ে দেন। শেষ পর্যন্ত হাফিজ ৫৭ ও ইমাদ ২৫ রানে অপারজিত থাকেন। ভারকে ৩৩৯ রানের জয়ের লক্ষ্য বেঁধে দেয়। ভারতের হয়ে ভুবেনেশ্বর, পান্ডিয়া, যাদব প্রত্যেকে ১টি করে উইকেট লাভ করেন।
জয়ের জন্য ৩৩৯ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে আমিরের আগুন ঝরানো এক স্পেলের কাছেই হেরে যায় ভারত। ইনিংসের প্রথম ওভারেই ইনসুইংগারে ইনফর্ম শর্মাকে এলবিডব্লিউ করে শুরু, এরপর ভারতের ব্যাটিং স্তম্ভ কোহলিকে যখন আউট করেন তখন ভারতের রান মাত্র ৬। ধাওয়ানও টিকতে পারেননি বেশি সময়। বাউন্সারে কিপারের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ধাওয়ান, এবারও বোলার সেই আমির। শুরুর সেই ধাক্কা সামলাতে পারেনি ভারত। একমাত্র হার্ডিক পান্ডিয়া ছিলেন স্রোতের বিপরীতে। ৪৩ বলে পান্ডিয়ার ৭৬ রানের ক্যামিও শেষ হয় রান আউটের শিকার হলে। ভারত সবকটি উইকেট হারিয়ে বসে ৩০.৩ ওভারেই। পাকিস্তান ম্যাচটি জিতে নেয় ১৮০ রানের বড় ব্যবধানে।