

টুর্নামেন্টে টিকে থাকতে হলে পাকিস্তানের জয়ের কোন বিকল্প ছিলনা। প্রথম ম্যাচে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারতের কাছে হেরে ব্যাকফুটে ছিলো পাকিস্তান, বিপরীতে দক্ষিণ আফ্রিকা প্রথম ম্যাচে শ্রীলংকাকে উড়িয়ে দিয়ে বেশ ফুরফুরে মেজাজেই ছিল। কিন্তু প্রথমে বোলারদের নিয়ন্ত্রিত বোলিং ও পরে এই টুর্নামেন্টের বেশিরভাগ ম্যাচের ফলাফল নিয়ন্ত্রক বৃষ্টির কল্যাণে ১৯ রানের জয় পায় পাকিস্তান।
টস জয়ের হাসি নিয়ে প্রথমে ব্যাট করতে নেমেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা, ভালই শুরু করেছিল অনেক দিনের দুই পরীক্ষিত হাশিম আমলা ও কুইন্টন দি কক জুটি। হিসাব করে পাঁচ রানরেট নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছিলেন এই দুই ব্যাটসম্যান, তবে প্রথম আঘাত আসে নবম ওভারের দ্বিতীয় বলে পাকিস্তানী বাহাতি অফব্রেক বোলার ইমাদ ওয়াসিমের স্কিড করে ভিতরে ঢোকা বলের ফ্লাইট বুঝতে না পেরে লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়েন গত ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান হাশিম আমলা, আমলা যখন আউট হন দলের রান তখন ৪০। ডি ককও থাকতে পারেননি বেশি সময়, তিনিও আউট হন প্রায় একই ধরনের ডেলিভারিতে, তবে এবার বোলার মোহাম্মদ হাফিজ। ৬০ রানে দুই উইকেট হারিয়ে বসলে মাঠে আসেন ৩৬০ডিগ্রী খ্যাত এবি ডি ভিলিয়ার্স।
১৫তম ওভারের চতুর্থ বল, ইমাদ ওয়াসিমের টার্ন করে বেরিয়ে যাওয়া বলে ব্যাট চালালে পয়েন্টে মোহাম্মাদ হাফিজের হাতে ধরা পড়েন এবি এবং ক্যারিয়ারের ২২১ তম ম্যাচে এসে প্রথম গোল্ডেন ডাকের দেখা পান তিনি। ২২১ ম্যাচের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে এই নিয়ে সপ্তমবার ডাক মারেন ডি ভিলিয়ার্স, তবে গোল্ডেন ডাক প্রথমবার। এর আগে সর্বশেষ ডাক মারেন চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতেই ২০১৩ সালের সেমিফাইনালে ওভালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৯ বল খেলে শূন্য রানে আউট হন তিনি।
ডিভিয়ার্সের বিদায়ের পর ক্রিজে আসেন ডেভিড মিলার, ডুপ্লেসিসের সঙ্গী হন তিনি, দলীয় ৯০ রানে হাসান আলীর বলে বোল্ড হয়ে ফিরে যান ডুপ্লেসিস। এরপর পারনেল ও ডুমিনির দ্রুত বিদায়ে ২৯ ওভারে ১১৮ রান তুলতেই ৬ উইকেট হারিয়ে ধুঁকতে থাকে দক্ষিণ আফ্রিকা। ডেভিড মিলার জ্বলে উঠলেন তখনই। আজকের মিলার ভিন্ন, ‘কিলার মিলার’ এর বিপরীতে ঠাণ্ডা মাথায় পুরো ইনিংস খেলে প্রোটিয়াদের লড়াকু ২১৯/৮ এর পুঁজি এনে দেন।
ক্রিস মরিসকে নিয়ে ৭ম উইকেটে ৪৭ ও ৮ম উইকেটে কাগিসো রাবাদাকে নিয়ে ৪৮ রানের জুটি গড়েন মিলার। ক্রিস মরিস ৪৫ বলে ২৮ ও রাবাদা ২৩ বলে ২৬ রান করেন। মিলার তুলে নেন ক্যারিয়ারের ১০ম ওয়ানডে ফিফটি, এই সময়ে বল খেলেন ৮৩টি, যা তার ক্যারিয়ারে সবচেয়ে ধীর গতির ফিফটি। ১০৪ বলে মাত্র ১ চার ও ৩ ছক্কায় ৭৫ রানে অপরাজিত থাকেন তিনি।
পাকিস্তানের বোলারদের মধ্যে হাসান আলী ২৪রানে তিনটি, জুনায়েদ খান ৫৩রানে ও ইমাদ ওয়াসিম ২০ রানে দুটি করে উইকেট লাভ করেন।
পাকিস্তান ২২০ রানের জয়ের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই এদিন আভিষিক্ত ফখর জামানের ছোট্ট এক টর্নেডো ইনিংস। মর্কেলের বলে যখন স্লিপে আমলার হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তখন দলের রান ৪০ যার মধ্যে তারই ৩১ রান। তিনি ২৩ বলে ৩১ রান করেন, এই ৩১ রানের মধ্যে ২৪ রানই আসে বাউন্ডারি থেকে। ফখরের আউটের পর একই ওভারে ফিরে যান অফ ফর্মে থাকা আজহার আলী, শর্ট লেন্থের বল উড়িয়ে মারতে গিয়ে থার্ডম্যানে ধরা পরেন ইমরান তাহিরের হাতে।
এরপর বাবর আজম আর হাফিজের ৫২ রানের জুটিতে প্রাথমিক বিপর্যয় কাটিয়ে ওঠে পাকিস্তান। ২৮তম ওভারের দ্বিতীয় বলে আগের আউটের রিপ্লে কপি, একই বোলার আর ফিল্ডার শুধুই ব্যাটসম্যান আলাদা। এবার ফিরে গেলেন মোহাম্মাদ হাফিজ, দলের রান তখন ৯৩। এরপর শোয়েব মালিক কে সাথে নিয়ে দলকে এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকেন বাবর আজম। ২৭ ওভার শেষে দলের রান যখন ১১৯ তখন বৃষ্টির কারণে খেলা বন্ধ হয়ে যায়। ডি/এল আইনে পাকিস্তানের ২৭ ওভারে প্রয়োজন ছিল ১০০ রান, সেই হিসেবে পাকিস্তান ১৯ রানে এগিয়ে ছিল। শেষ পর্যন্তু মাঠ খেলার উপযুক্ত না হওয়ায় পাকিস্তানকে জয়ী ঘোষণা করা হয়। এই জয়ের সুবাদে পাকিস্তান বি-গ্রুপের তিন নম্বর অবস্থানে উঠে এসেছে, দক্ষিণ আফ্রিকার অবস্থান দুই। এই গ্রুপে সবার উপরে আছে ভারত আর সবার শেষে শ্রীলংকা।
সংক্ষিপ্ত স্কোরঃ
দক্ষিণ আফ্রিকা-২১৯/৮ (৫০ ওভার), মিলার-৭৫*, ডি কক-৩৩, মরিস-২৮, হাসান-২৪/৩, ইমাদ-২০/২ জুনায়েদ-৫৩/২
পাকিস্তান-১১৯//৩ (২৭ ওভার), ফখর-৩১, বাবর-৩১*, হাফিজ-২৬, মর্কেল-১৮/৩
ফলাফলঃ ডি/এল আইনে পাকিস্তান ১৯ রানে জয়ী।
প্লেয়ার অফ দ্যা ম্যাচঃ হাসান আলী (পাকিস্তান)