

পাকিস্তানকে মাত্র ২২৮ রানের লক্ষ্য দিয়েও রাশিদ-নবিদের স্পিন ঘুর্ণিতে প্রায় জিতেই যাচ্ছিলো আফগানিস্তান। ম্যাচের একপর্যায়ে মনেই হচ্ছিলনা পাকিস্তান এ ম্যাচ জিততে পারে, অথচ আফগান অধিনায়ক গুলবেদিন নাইবের এক অবাক করে দেওয়া সিদ্ধান্ত কেবল ম্যাচই হারায়নি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে থেকে ক্রিকেট বিশ্লেষক সবার কাছে নিজেকে প্রমাণ করেছেন অযোগ্য, ব্যর্থ অধিনায়কে। যে সিদ্ধান্তের ব্যাখ্যা কোনভাবেই হয়না, তবুও গুলবাদিন জানিয়েছে অমন সিদ্ধান্তের কারণ।

স্পিনারদের দুর্দান্ত বোলিংয়ে বেশ ভালো চাপেই পড়ে পাকিস্তান। মোহাম্মদ নবি, রাশিদ খান ও মুজিব উর রহমানের স্পিন বিষে নীল হতে থাকে পাকিস্তান ব্যাটসম্যানরা। ভালো শুরুর পরও ৮ রানের ব্যবধানে সেট হয়ে যাওয়া ইমাম উল হক ও বাবর আজমকে ফিরিয়ে মোহাম্মদ নবি ম্যাচে ফেরায় আফগানিস্তানকে।
এরপর যতক্ষন ক্রিজে ছিল পাকিস্তান ব্যাটসম্যানরা করেছে হাঁফসাফ, প্রতিটি রান তুলতে পোহাতে হয়েছে কঠিন বেগ। বলের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে রান প্রয়োজনীয়তা, ওদিকে নির্দিষ্ট বিরতিতে উইকেটও তুলে নিচ্ছে আফগান বোলাররা। রাশিদ, নবি, মুজিবের সাথে চতুর্থ স্পিনার শিনওয়ারি করছেন দুর্দান্ত বোলিং, একমাত্র পেসার অধিনায়ক গুলবেদিন।
স্পিনাররা ম্যাচ কীভাবে আফগানদের পক্ষে নিয়ে যাচ্ছিলো ৪২ তম ওভার থেকে ৪৫ তম ওভারগুলোর রান সংখ্যা তুলে ধরলে বিষয়টি আরও পরিষ্কার হবে। ৮ ওভারে দরকার পাকিস্তানের ৫৯ রান, ওভারপ্রতি ৭.৩৭ করে। মুজিবের করা ৪৩ তম ওভারে রান আসে ৫, রাশিদের করা ৪৪তম ওভারে আসে ৬, শিনওয়ারির করা ৪৫তম ওভারে আসে মাত্র ২!
শেষ ৫ ওভারে দরকার ৪৬, ক্রিজে স্পিনে হিমশিম খাওয়া ৩৭ বলে ২৩ রান করা ইমাদ ওয়াশিম ও ১৫ বলে ৬ রান করা শাদাব খান। ওদিকে শিনওয়ারি, মুজিব ও রাশিদের মিলে ঠিক ৫ ওভারই বাকী। পাড়ার ক্রিকেটেও কোন অধিনায়ককে সিদ্ধান্ত নিতে বললে ওই মুহুর্তে রাশিদ, মুজিব, শিনওয়ারিকে দিয়েই বাজি ধরতেন। অথচ আগের ৮ ওভারে ৪৭ রান দেওয়া অধিনায়ক গুলবেদিনই আসলেন তার স্বল্প গতির পেস নিয়ে।
ফলাফল স্পিনে দমে যাওয়া ইমাদ ওয়াশিম সুযোগ কাজে লাগালেন দুহাত ভরে, লাইন লেন্থের বালাই ঠিক না রেখে গুলবেদিনের করা এলোমেলো ফুলটস, হাফবলিকে বাউন্ডারিতে পরিণত করে রান নিয়েছেন ১৮! ৩০ ওভারে ৪৬ থেকে ২৪ বলে ২৮ রানের সহজ সমীকরণে দাঁড়ায় ম্যাচ, যেখান থেকে আর ফেরা সম্ভব নয়। তবুও রাশিদ, মুজিবরা ম্যাচ নেন শেষ ওভারে, দরকার ৬ বলে ৬!
তবুও দুই ওভার বাকী থাকা শিনওয়ারি নয় এলেন নাইবই, ফলাফল যা হওয়ার তাই, ২ বল হাতে রেখেই জয় তুলে নেয় পাকিস্তান, পয়েন্ট টেবিলে উঠে যায় চারে। ম্যাচ শেষে গুলবেদিন এমন সিদ্ধান্তের যে জবাবই দিতেন ধোপে টিকতোনা তাই। আনুষ্ঠানিকভাবে দিয়েছেন ব্যাখ্যা তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার মুন্ডুপাত করা সমর্থকদের থামাতে যথেষ্ট নয় কোনভাবেই, আর ক্রিকেট বিশ্লেষকরাতো মুচকি হেসেই উড়িয়ে দিবেন তার ব্যাখ্যা।
মূলত পেসার হামিদ হাসানের না থাকাই নাকি তাকে বাধ্য করেছে বল করতে, “আমরা ধরে নিয়েছি সব বোলার তাদের লক্ষ্য নয়। সবারই নিজস্ব পরিকল্পনা থাকে। ৪৬ তম ওভারটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল যেটা আমি করেছি। খুব বাজে হয়েছে। হামিদ থাকলে হয়তো আমি এত ওভার বলও করতাম না, এখানে বল করার মত গতি আমার নাই।” অথচ ম্যাচের পরিস্থিতি বলছে হামিদের প্রয়োজনীয়তা পড়েনি একবারের জন্যও। ওই সময় হামিদ নয় রাশিদ-মুজিবদে হাতে বল তুলে দিলেই হতে পারতো স্মৃতিতে জমিয়ে রাখার মত কিছু।