

পেশাদারিত্বের জায়গায় আবেগ ভালোবাসা কতটা ত্যাগ করতে হয় তার যোগ্য উদাহরণ ক্রীড়াঙ্গণের কোচরা। এই যেমন একজন ইংলিশ হয়েও চলতি বিশ্বকাপে বাংলাদেশ প্রধান কোচ স্টিভ রোডস চান ইংল্যান্ড নয় ট্রফি জিতুক বাংলাদেশই। ঠিক দলের অন্যান্য কোচিং স্টাফদের ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা এমনই, স্পিন কোচ ভারতীয় সুনীল যোশিতো পরের ম্যাচে ভারতবধের পরিকল্পনাও এঁটে ফেলেছেন, বেশ আত্মবিশ্বাস নিয়ে বলছেন হবে দুর্দান্ত কিছুই।

ইংল্যান্ডের কন্ডিশন পেস বান্ধব হলেও বাংলাদেশের অন্যতম শক্তির জায়গা স্পিনই। একটা সময় নিয়ম রক্ষার দুই পেসারের সাথে দলে তিনজন স্পিনার নিয়েও খেলেছে বাংলাদেশ। তবে সময় গড়ানোর সাথে সাথে পেস আক্রমণেও এসেছে পরিবর্তন কিন্তু শক্তির জায়গা যে স্পিনই সেটি কিন্তু প্রমাণ হয়েছে অনেকবারই।
দলে বিশেষজ্ঞ স্পিনার সাকিব, মিরাজের সাথে হাত ঘুরান রিয়াদ, মোসাদ্দেকরাও। চলতি বিশ্বকাপে সাকিবতো ১০ উইকেট তুলে নিয়ে আছেন সর্বোচ্চ উইকেট সংগ্রাহকের তালিকায় ৮ নম্বরে। সাউদাম্পটনে ৫ উইকেট তুলে সাকিব গুড়িয়ে দিয়েছেন আফগানিস্তানকে, ওই ম্যাচে বোলারদের নেওয়া আফগানদের ৯ উইকেটের ৬ টিই নিয়েছেন স্পিনাররা। প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে সাকিবের বিশ্বকাপে পাঁচ উইকেটের সাথে মোসাদ্দেকের এক।
চলতি বিশ্বকাপে সাকিব আছেন উড়ন্ত ফর্মে, ব্যাট হাতে ৬ ম্যাচে ২ সেঞ্চুরি আর ৩ হাফসেঞ্চুরিতে ৪৭৬ রান বল হাতে ইতোমধ্যে তুলে নিয়েছেন ১০ উইকেট। ভালো ছাত্র পেলে খুশি থাকেন যেকোন শিক্ষকই কারণ তাদের কেবল পথ বাতলে দিলে নিজেই পোঁছাতে পারে সাফল্যের চূড়ায়। সাকিবকেও দলের স্পিন কোচ সুনীল যোশি সেরকমই বলছেন।
এখনই সাকিবকে কিংবদন্তী বলতেও দ্বিধা নেই এই ভারতীয় সাবেক স্পিনারের, “যেকোন স্পিন কোচের স্বপ্ন সাকিবের মত স্পিনার হাতে পাওয়া। সে যে কিংবদন্তী তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশের কোন সুযোগ নেই। ব্যাটে-বলে-ফিল্ডিংয়ে সাকিবের ধারাবাহিকতা অতুলনীয়, তাকে দলে পাওয়া গর্বের।”

সাকিবের সাফল্যের ক্ষুধাটা মাঠে তার শরীরী ভাষা দেখলেই স্পষ্ট বোঝা যায়। আইপিএলে লম্বা সময় সাইড বেঞ্চে কাটালেও নিজ উদ্যোগে ফিটনেস আর অনুশীলনে নিংড়ে দিয়েছেন নিজের সর্বোচ্চ। আর সেটিই আরেকবার তুলে ধরলেন বাংলাদেশ স্পিন কোচ, “এখন ফিটনেসের প্রতি সাকিবের জোর অধিক। এরমধ্যে সাত কেজি ওজনও কমিয়েছে, ফলটাওতো হাতে নাতে পাচ্ছে। উইকেটে তার দৌড়ের গতি দেখেছেন? সাফল্যের ক্ষুধা তার অনেক বেশি যেটি ছড়িয়ে পড়ছে অন্যদের মধ্যেও।”
বাংলাদেশের পরের ম্যাচ ২ জুলাই হ্যাম্পশায়ারে ভারতের বিপক্ষে। জন্মভূমির বিপক্ষে খেলা তবুও টাইগারদের সাফল্য দেখতে মুখিয়ে যোশি। দুদলের স্পিন লড়াইটাও দেখার মত হবে বলে মনে করেন তিনি। সময়ের সেরা দুই স্পিনার কুলদ্বীপ যাদব ও যুজবেন্দ্র চাহাল। তাদের কি ঠিকঠাক সামলাতে পারবে বাংলাদেশ?
এমন প্রশ্নে টাইগার স্পিন কোচ বলছেন বাংলাদেশ কি পারে সেটি প্রমান করেছে ইতোমধ্যে, এ প্রসঙ্গে তিনি আরও যোগ করেন, “ হ্যা ওরা স্পিনটা ভালো খেলে। আর আফগানিস্তান ম্যাচেইতো দেখেছেন আমরাও কম যাইনা। সাদা বলে আমরা যে বেশ ভালো করছি তার প্রমান সম্প্রতি সময়ে বারবার দিয়েছি। গত তিনবছরে ভারতকেও তিনবার প্রায় হারিয়েই দিচ্ছিলাম।”
দু দলের স্পিন সমানে সমান উল্লেখ করে ভারতের হয়ে ১৫ টেস্ট ও ৬৯ ওয়ানডে খেলা যোশি বলেন, “ ভালো মানের স্পিনার তাদেরও আছে আমাদেরও আছে। ম্যাচে স্পিন বল খেলা আর করা প্রায় একই কথা, প্রতি বলেই মনযোগ থাকতে হয় দৃঢ়। দেখুন সবারই শক্তিমত্তা-দূর্বলতা থাকে। ভারতের সাথে সব খেলাই আমার গভীরভাবে দেখা। তাদের কোথায় বল করতে হবে আমাদের ভালো করেই জানা।”