

বাংলাদেশের কত প্রথম এসেছে তার হাত ধরে তা হিসাব করেও যে বের করা কষ্টসাধ্য। তার ভালো খেলা মানেই যেন রেকর্ড বইয়ে ওলট পালট। একের পর এক মাইলফলক অর্জন হয় সাকিবের নামের পাশে, তিনি ছাড়িয়ে যান নিজেকে, অতীত কিংবদন্তীদের, ক্ষেত্র বিশেষ হয়ে ওঠেন রেকর্ডের একমাত্র মালিক। এই যেমন কাল ব্যাট হাতে ৫১ রানের পাশাপাশি বল হাতে ৫ উইকেট নিয়ে একাই গুড়িয়ে দিলেন আফগান ইনিংস, এতেই অনেকগুলো রেকর্ডে নাম লেখালেন।
ক্যারিয়ারের এ পর্যায়ে কিংবদন্তী বলার সব রসদই আছে সাকিবের, তবুও সে ভার ছেড়ে দিয়েছেন আমার আপনার হাতেই। এবারের বিশ্বকাপে অংশ নেওয়া দলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে অভিজ্ঞ খেলোয়াড়দের একজন, এবার নিয়ে খেলছেন চতুর্থ বিশ্বকাপ। বছরের পর বছর এক নম্বর অলরাউন্ডার হয়ে ছিলেন, বহু রেকর্ড তার হাত ধরেই দেখেছে বিশ্ব, পারফর্ম করে বহু কিংবদন্তীদের এলিট ক্লাবে ঢুকে পড়েছেন।
তবে বিশ্বকাপে সাকিব ছিলেন তার ছায়া হয়ে, তিন বিশ্বকাপে ২১ ম্যাচ মিলিয়ে রান সর্বসাকুল্যে ৫৪০, পাঁচটি ফিফটি থাকলেও ছিলনা কোন সেঞ্চুরি, উইকেট ২৩ টি! অথচ এবার সাকিব যেন কোমর বেঁধে নেমেছেন এবারের বিশ্ব্বকাপটা নিজের করেই নিবেন, ঘুচিয়ে দিবেন বিশ্বকাপ আক্ষেপও। ৬ ম্যাচে ব্যাট হাতে রান দুই সেঞ্চুরি আর তিন ফিফটিতে ৪৭৬, উইকেট ১০ টি, এখনো পর্যন্ত টুর্নামেন্ট সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক।
তিন বিশ্বকাপে ছিলনা কোন পাঁচ উইকেট কিংবা ম্যান অব দ্যা ম্যাচও। আসরে বাংলাদেশের আগের দুই জয়ী ম্যাচেই ম্যান অব দ্যা ম্যাচ সাকিব, গতকাল (২৪ জুন) সাউদাম্পটনে আফগান শিবিরে স্পিন ভেলকি দেখিয়ে পূর্ণতা এনে দিলেন পাঁচ উইকেট প্রাপ্তির অপূর্ণতাতেও, সাথে যুবরাজ সিংয়ের পর দ্বিতীয় ক্রিকেটার হিসেবে বিশ্বকাপে ফিফটি ও পাঁচ উইকেট নিলেন বাংলাদেশের পোস্টারবয় সাকিব।
ম্যাচে সাকিব রেকর্ড গড়েছেন আরও, যেখানে পেছনে ফেলেছেন অনেক মহারথীদের, একটা জায়গায় আবার নিজেই গড়েছেন প্রথমের কীর্তি। গতকাল ৩৫ রান করলেই সাকিব হতেন বিশ্বকাপের ১৯ তম ক্রিকেটার হিসেবে এক হাজার রানের মালিক, সাথে দুই উইকেট নিলে হতেন ৩০ উইকেট ও এক হাজার রান করা প্রথম ক্রিকেটার । সাকিব রান করেছেন ৫১ , উইকেট নিয়েছেন ৫ টি!
১৯ তম ক্রিকেটার হিসেবে বিশ্বকাপে এক হাজার রান, প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে ৩০ উইকেট ও একহাজার রানের মালিক। এক হাজার রানের পথে ছাড়িয়ে গেছেন স্যার ভিভ রিচার্ডস, সৌরভ গাঙ্গুলি, স্টিভ ওয়াহ, মার্ক ওয়াহ, অর্জুনা রানাতুঙ্গাদের। বোলিংয়ে ৩৩ উইকেট নিয়ে পেছনে ফেলেছেন শোয়েব আখতার, শন পোলক , ইয়ান বোথামদের। সেমিতে না গেলেও বাংলাদেশের এখনও দুটি ম্যাচ খেলা নিশ্চিত, সেমিতে গেলে ম্যাচ বাড়বে আরেকটি সাকিবের সুযোগ রয়েছে আরও অনেককেই ছাড়িয়ে যাবার।
এত এত কীর্তির পর বিনা দ্বিধায় কিংবদন্তী বলাই যায় সাকিব আল হাসানকে। অন্তত এবারের বিশ্বকাপের অপূর্ণতা পূর্ণ করে দেওয়ার পর আরতো রইলোনা বাকি কিছুই। তবুও সাকিব আছেন নমনীয়, আগেরমত বলছেন এসব নিয়ে তার মাথাব্যথা নেই, এসব দেখার ভার ছেড়ে দিয়েছেন আমজনতার হাতেই, “আমি কি করে বলবো? এটাতো বলতে পারবেন আপনারা। আর এসব আমায় খুব একটা ভাবায় না।”
ম্যাচ পরবর্তী সাকিব বলছেন নিজের পারফরম্যান্সে সন্তুষ্ট, দলে অবদান রাখতে পারায় তৃপ্ত, “আমি সন্তুষ্ট। আমার নিজের কথা বলি আর দলের কথা, এটা খুব দরকার ছিল। ভাগ্য পক্ষে ছিল যে আমি এটা করতে পারছি আর টুর্নামেন্ট এভাবে যাচ্ছে। দুটি গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ বাকী, ভারতের সাথে ম্যাচ হবে কঠিন।”