

ব্যাটে, বলে, ফিল্ডিংয়ে দুর্দান্ত বেন স্টোকস! আর তাতেই বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বিশাল জয় পেয়েছে ইংল্যান্ড। ৩১২ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে ইংলিশ পেসারদের গতির তোড়ে রীতিমতো কাঁপছে দক্ষিণ আফ্রিকা। স্কোরবোর্ডে ২০৭ রান করতেই সব উইকেট হারিয়ে ফেলে প্রোটিয়ারা। ব্যাট হাতে স্টোকসের ৮৯, বল হাতে দুই উইকেট। জফরা আর্চারের আগুন বোলিংয়ে আসে ৩ উইকেট। ইংল্যান্ড ম্যাচ জিতে ১০৪ রানে।
ইংল্যান্ডের কাছে পাত্তাই পায়নি দক্ষিণ আফ্রিকা। ব্যাটে-বলে অসাধারণ খেলেছেন বেন স্টোকস-আর্চাররা। তাদের ব্যাটে বলের নৈপুণ্যের দিনে সেভাবে লড়াই করতে পারেনি দক্ষিণ আফ্রিকা। বড় জয়ে বিশ্বকাপে নিজেদের মিশন শুরু করল ইংল্যান্ড। উদ্বোধনী দিনের একমাত্র ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ১০৪ রানের বিশাল ব্যবধানে জয় পেয়েছে স্বাগতিকরা। চার হাফ-সেঞ্চুরিতে ৩১১ রান তুলেছিল ইংলিশরা। জবাবে ৬১ বল বাকি থাকতেই দক্ষিণ আফ্রিকা গুটিয়ে যায় মাত্র ২০৭ রানে।
লন্ডনের কেনিংটন ওভালে বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচে টস জিতে ফিল্ডিং বেছে নেয় দক্ষিণ আফ্রিকা। পেসের স্বর্গরাজ্যে স্পিন দিয়ে বোলিং ওপেন করেন প্রোটিয়া অধিনায়ক ফাফ ডু প্লেসিস। শুরুতেই আসে সাফল্য। ইনিংসের দ্বিতীয় বলেই জনি বেয়ারস্টোকে ফেরত পাঠান ইমরান তাহির। বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচেই ‘গোল্ডেন ডাক’ এর ঘটনা দেখা গেল।
ইনিংসের প্রথম ওভারেই ধাক্কা খাওয়ার পর ইংল্যান্ডকে পথ দেখান ওপেনার জেসন রয় এবং জো রুট। দুজনে মিলে গড়েন ১০৬ রানের দ্বিতীয় উইকেট জুটি। শেষ পর্যন্ত এই জুটিতে ভাঙন ধরান তারকা পেসার কাগিসো রাবাদা। ৫৯ বলে ৫ বাউন্ডারিতে ৫১ রান করা জো রুট ক্যাচ তুলে দেন জেপি ডুমিনির হাতে। পরের ওভারেই জেসন রয়কে (৫৪) ডু প্লেসির তালুবন্দি করেন আন্দিলে ফেসুকায়ো।
এই বিপর্যয় কাটিয়ে ব্যাট হাতে দাঁড়িয়ে যান অধিনায়ক ইয়ন মরগান এবং অলরাউন্ডার বেন স্টোকস। দুজনেই ফিফটি পূরণ করেন। ১২৫ রানের এই জুটি ভাঙেন সেই ইমরান তাহির। ৬০ বলে ৫৭ রান করা মরগান তাহিরের দ্বিতীয় শিকারে পরিণত হন।
১৮ রানে থাকা বিপজ্জনক জস বাটলারকে বোল্ড করে দেন লুঙ্গি এনগিডি। এই পেসারের দ্বিতীয় শিকার মঈন আলী (৩)। তবে একপ্রান্ত আগলে রেখেছিলেন বেন স্টোকস। শেষ পর্যন্ত এই অলরাউন্ডার ৭৯ বলে ৯ বাউন্ডারিতে ৮৯ রানের দারুণ ইনিংস খেলে এনগিডির শিকার হন। তারপরেও ইংলিশদের স্কোর তিনশ অতিক্রম করে ক্রিস ওকস (১৩), লিয়াম প্ল্যাঙ্কেট (৯*) আর জফরা আর্চারদের (৭*) ব্যাটে।
দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে লুঙ্গি এনগিডি নেন সর্বোচ্চ ৩ উইকেট। ইমরান তাহির ও কাগিসো রাবাদা নেন ২ টি করে উইকেট। আন্ডিলে ফেলুকওয়ায়ো নেন ১ উইকেট।
ইংল্যান্ড জফরা আর্চারকে বিশ্বকাপ দলে অন্তর্ভূক্ত করেছে মূলত তাঁর ভয়ঙ্কর গতির কারণে। বিশ্বকাপে সেই গতির ঝড় তোলা শুরু করেছেন আর্চার। প্রোটিয়াদের বিপক্ষে বল হাতে নেমে গতিময় এক বাউন্সারে মাঠ ছাড়তে বাধ্য করেছেন হাশিম আমলাকে। পরে তুলে নিয়েছেন দুই উইকেট।
৩১২ রানের বিশাল টার্গেট তাড়া করতে নেমে ইংলিশ তরুণ জোফরা আর্চারের গতিকে বিধ্বস্ত দক্ষিণ আফ্রিকা। দলীয় ১৪ রানে চোটাক্রান্ত হয়ে মাঠ ছাড়েন হাশিম আমলা। দক্ষিণ আফ্রিকার এই ক্রিকেটারকে বাউন্সার দেন জফরা।
কপালে চোট নিয়ে মাঠ থেকে সাজঘরে ফেরেন আমলা। তার বিদায়ের পর ব্যাটিংয়ে নেমেই বিপদে পড়েন মার্করাম। ১২ বলে ১১ রান করে জোফরার বলে ক্যাচ তুলে দিয়ে ফেরেন মার্করামও।
৮ রানের ব্যবধানে জফরাকে বাউন্ডারি হাঁকাতে গিয়ে ক্যাচ তুলে দেন দক্ষিণ আফ্রিকান অধিনায়ক ফাফ ডু প্লেসিস। ৯.৩ ওভারে ৪৪ রানে আমলা রিটায়ার্ড হার্টসহ তিন উইকেট হারিয়ে চাপের মধ্যে পড়ে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা।
এরপর সময়ের ব্যবধানে উইকেট হারিয়ে ম্যাচ থেকে কার্যত ছিটকে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা। ইনিংসের শুরু থেকেই উইকেটের এক পাশ আগলে রাখেন কুইন্টন ডি কক। দলীয় ১২৯ রানে ফেরেন তিনি। তার আগে ৭৪ বলে ৬ চার ও দুই ছক্কায় ৬৮ রান করেন ডি কক।
ডি ককের বিদায়ের পর রীতিমতো উইকেট হারাতে থাকে দক্ষিণ আফ্রিকা। সময়ের ব্যবধানে উইকেট হারিয়ে ম্যাচ থেকে ছিটকে যায় তারা। শেষ দিকে ব্যাটসম্যানদের আসা-যাওয়ার মিছিলে কিছুটা প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করেন দাসুন। তিনি ৬১ বলে ৫০ রান করে আউট হন।
হাশিম আমলা সুস্থ্য হয়ে শেষ দিকে মাঠে ফিরলেও ব্যাট হাতে জ্বলে উঠতে পারেননি। তাই ১৯৩ রানে অষ্টম ব্যাটসম্যান হিসেবে যখন আমলা আউট হন তখন পরাজয় অনেকটাই নিশ্চিত হয়ে যায়। শুধু বাকি থাকে আনুষ্ঠানিকতা।
জফরা আর্চার ৭ ওভারে ১ মেডেনসহ মাত্র ২৭ রানে নিয়েছেন ৩ উইকেট। দুটি করে উইকেট নিয়েছেন বেন স্টোকস আর লিয়াম প্ল্যাংকেট।