

সৌম্য সরকারের উত্থানটা যেন রূপকথার গল্পের মত। ২০১৫ বিশ্বকাপের আগে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ২০ রানের ছোট্ট একটা ইনিংসই জায়গা করে দেয় বিশ্ব মঞ্চে। বিশ্বকাপের মত বড় আসরের আগে অভিজ্ঞতা বলতে জাতীয় দলের হয়ে ওই একটি ম্যাচেই ব্যাটিং করা। বিশ্বকাপে ব্যাট করেছেন তিন নম্বরে, নিয়মিত ওপেনার এনামুল হকের চোট পরবর্তীতে দলে খেলেন ওপেনারের ভূমিকায়, এর পরের গল্পটা সবারই জানা।
এরপর আবার হারিয়েছেন ছন্দ, বাদ পড়েছেন দল থেকেও। সৌম্য ফিরেছেন আবার চেনা রুপে, জানিয়েছেন খারাপ সময়টা কীভাবে উতরেছেন। গত বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে খেলা ৪০ রানের ইনিংসটিকে দেখছেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর রসদ হিসেবে।
গত বিশ্বকাপে ফিফটি করেছেন মোটে একটা, তবে ছোট ছোট ইনিংসগুলোয় দেখিয়েছেন আত্মবিশ্বাসী আর ভয়-ডরহীন ক্রিকেটের ঝলক। পুরো টুর্নামেন্টেই ভালো শুরু করেও ইনিংস বড় করতে পারছিলেননা। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ঐতিহাসিক জয়ের ম্যাচে খেলেছেন ৪০ রানের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস।
৮ রানেই দুই ওপেনার তামিম-ইমরুলের বিদায়ে প্রাথমিক ধাক্কা সামলায় সৌম্য-রিয়াদের ৮৬ রানের জুটি। সৌম্য বলছেন এত বড় দলের বিপক্ষে বিশ্বকাপের মত মঞ্চে, হাজার হাজার দর্শকের সামনে খেলা ইনিংসটিই তাকে করেছে সাহসী। ঘরের মাঠে ওই বছরই পাকিস্তান, ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজ জয়ে রেখেছেন অনন্য ভূমিকা। তিন সিরিজের ৯ ম্যাচে করেছেন ৪৯৭, বছর শেষ করেছেন ১৫ ম্যাচে ৫১.৬৯ গড়ে ৬৭২ রান।
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে খেলা ইনিংস নিয়ে বলতে গিয়ে সৌম্য বলেন, ‘৪০ রানের ওই ইনিংসটি আমাকে আত্মবিশ্বাসী করেছে। দল হিসেবে তারা দুর্দান্ত বলেই আমার মাথায় তখন অনেক কিছু কাজ করছিল। এত দর্শকের সামনে আর চাপের মধ্যে খেলা আসলেই অনেক বড় কিছু ছিলো। এবার ব্যাপারটা আলাদা, তারপরেও আমি পেছনে ফিরে যেতে চাই। ওই ম্যাচগুলো আমায় অনুপ্রেরণা জোগায়।’
২০১৫ পরবর্তী সৌম্য দেখেছেন মুদ্রার অন্য পিঠও। দল যখন তাকে নিয়ে অনেক বেশি উচ্ছ্বসিত, তাকে নিয়ে বড় পরিকল্পনা শুরু করেছে, তখনই সৌম্যের পতন। ব্যাটে রান খরা, চারদিকে সমালোচনার তির। একপর্যায়ে বাদই পড়েন দল থেকে। চার ম্যাচে ব্যাট করে ২০১৬ সালে করেছেন মাত্র ৩২ রান। পরের বছরও ছিলেননা ধারাবাহিক, ১২ ম্যাচে মোটে ২৪৩ রান।
পড়তি ফর্মে জায়গা হারানো সৌম্য নিজের মত ছন্দে ফিরেছেন ২০১৮ সালে, ৬ ম্যাচে সমান ১ সেঞ্চুরি ও ১ ফিফটিতে ৪২.৫০ গড়ে ২৫৫ রান। আর সাম্প্রতিক সময়েতো আছেন ফর্মের তুঙ্গেই, ত্রিদেশীয় সিরিজে হাঁকিয়েছেন টানা তিন ফিফটি।
বিশ্বকাপের আগে সৌম্যের দারুণভাবে ফেরাটা স্বস্তি বাংলাদেশের জন্যই, তবে পথটা এত মসৃণ ছিল না একেবারেই। দলে আসা যাওয়ার ভীড়ে নিজেকে ফিরে পেতে করেছেন সংগ্রাম, নিজের সাথে যুদ্ধ জয়ের গল্পটা শুনিয়েছে সৌম্য। কৃতিত্ব দিয়েছেন তার বিকেএসপির কোচ মিশুকেও।
বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান বলেন, ‘ওই সময়টায় (২০১৫ পরবর্তী) কিছুই ভালো যাচ্ছিলনা। ওই মুহূর্তে আমি সিদ্ধান্ত নিই কারও কাছ থেকে পরামর্শ নেওয়াটা বৃথা হবে। আমি শুধু একা থাকতে চেয়েছি, অথবা খুব কাছের কারও সাথে। তারা আমার আত্মবিশ্বাস বাড়িয়েছে এবং আমার প্রতি কদমেই দোষ খোঁজেনি। মিশু স্যার (বিকেএসপিএ) আমাকে উপদেশ দিয়েছেন আমি যেন নিজেই খারাপ সময় থেকে বের হওয়ার পথ খুঁজে নিই, নিজের উপর যেন বিশ্বাস রাখি।’