
বাংলাদেশ জাতীয় দলের সাবেক ক্রিকেটার ও বর্তমান বোর্ড কর্মকর্তা খালেদ মাহমুদ সুজন বিশ্বকাপ নিয়ে স্মৃতি রোমন্থন করতে গিয়ে দিয়েছেন এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। ১৯৯৯ বিশ্বকাপে ঐতিহাসিক জয়ের ম্যাচে পাকিস্তানের কিংবদন্তি ক্রিকেটার ওয়াসিম আকরামের সাথে বাগবিতণ্ডায় জড়িয়ে পেয়েছিলেন খুন হওয়ার হুমকি। প্রতিশোধ নিতে ওয়াসিম হন্যে হয়ে খুঁজেছিলেন খালেদ মাহমুদকে।

১৯৯৯ বিশ্বকাপে প্রথমবার বিশ্বকাপ খেলতে যাওয়া নবাগত বাংলাদেশ ১৯৯২ বিশ্বকাপজয়ী পাকিস্তানকে হারিয়ে ঘটিয়ে বসে অঘটন, দেয় আগমনী বার্তা। মোড় ঘুরে যায় বাংলাদেশ ক্রিকেটের। আর সে ম্যাচেই কিনা শক্তিশালী পাকিস্তান দলের দলপতির দিকে তেড়েফুঁড়ে যান বিশ্বমঞ্চে একেবারেই নবাগত বাংলাদেশ দলের এক পেসার। ব্যাপারটি দৃষ্টিকটু লাগলেও খালেদ মাহমুদ জানিয়েছেন তৎকালীন কোচের পরামর্শেই নিজের আচরণে আগ্রাসী ভাব আনতেই অমন কান্ড ঘটিয়েছিলেন তিনি।
সেবার আগে ব্যাট করা বাংলাদেশ শাহরিয়ার হোসেন, আকরাম খান ও খালেদ মাহমুদের ছোট ছোট কার্যকরী ইনিংসে ভর করে ২২৩ রানের পুঁজি পায়। লক্ষ্য তাড়ায় ব্যাট করতে নামা পাকিস্তান ইনিংসেই দুজনের উত্তপ্ততা ছড়িয়ে পড়ে। শুরুটা অবশ্য খালেদ মাহমুদই করেন। দলের বিপর্যয়ের পর ব্যাট হাতে নামা ওয়াসিম আকরামকে করা প্রতিটি বলের পরই ম্যাচের নায়ক সুজন তেড়ে যান তার দিকে, দৃষ্টি দিয়ে ঝরান আগুন, আগ্রাসী চাহনিতে ভড়কে দিতে চান ব্যাটসম্যান ওয়াসিমকে।
নবাগত দলের অখ্যাত এক বোলারের এমন তির্যক আচরণ মোটেও পছন্দ হয়নি ততদিনে দল হিসেবে বিশ্বকাপ শিরোপা জিতে ফেলা পাকিস্তানের অধিনায়ক ওয়াসিম আকরামের। অসাধারণ ইয়র্কার, সুইং বিষে নীল করে দেওয়া ওয়াসিম যে নিজেও হয়ে গেছেন বিশ্বতারকা। ব্যাটিং করার সময় কাভারে ফিল্ডিং করা আকরাম খানকে ডেকে দিয়েছেন সুজনকে খুনের হুককি। উচ্চতায় ছোট বলে সম্বোধন করেছেন ভিন্ননামে, ‘তোমাদের ছোটুকে বল, আমি ওকে মেরে ফেলবো।’
১০২ রানের মাথায় সপ্তম ব্যাটসম্যান হিসেবে মিনহাজুল আবেদীনের শিকার হয়ে ফিরে যান ওয়াসিম, পাকিস্তান অল আউট ১৬১ রানে। নর্দাম্পটনে বাংলাদেশ ম্যাচটি জিতে নেয় ৬২ রানে, অলরাউন্ড নৈপুণ্যে ম্যাচ সেরা খালেদ মাহমুদ। লজ্জাজনক হারে খালেদ মাহমুদ ইস্যু সেদিন ঢাকা পড়লেও প্রতিশোধের আগুন জ্বালিয়ে রেখেছিলেন ওয়াসিম।
পরের বছর বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে এশিয়া কাপে ভাগে পেয়ে যান খালেদ মাহমুদকে। দুর্দান্ত ইয়র্কার, সুইং আর বাউন্স দিয়ে সুজনকে দিশেহারা করার স্বপ্নে বিভোর কিং অফ সুইং ওয়াসিম আকরাম। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে স্বপ্ন পূরণ হয়নি ওয়াসিমের, ৩২১ রানে লক্ষ্যে ব্যাট করা বাংলাদেশ গুটিয়ে যায় মাত্র ৮৭ রানে। দলের পঞ্চম ব্যাটসম্যান হিসেবে ৫১ রানের মাথায় ৪ রান করে আজহার মাহমুদের বলে সাঈদ আনোয়ারকে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন খালেদ মাহমুদ।
মজার বিষয় উচ্চতায় বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানরা কাছাকাছি হওয়ায় ও নিয়মিত উইকেট পতনের ফলে ক্রিজে কে আসছে কে যাচ্ছে বুঝার সময়ই পাননি ওয়াসিম। খালেদ মাহমুদ আউট হয়ে ফিরে গেলেও দৃষ্টি এড়িয়ে যায় ওয়াসিমের, ক্রিজে আসা বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানদের জিজ্ঞেস করতে থাকেন সুজন কোথায়?
২০০৬ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে বিদায় নেওয়া ৭৭ ওয়ানডে ও ১২ টেস্ট খেলা বাংলাদেশ অলরাউন্ডার খালেদ মাহমুদ নিজেই দিয়েছেন সে বর্ণনা। ম্যানেজার হিসেবে ইংল্যান্ড যাওয়ার আগে জনপ্রিয় সংবাদে মাধ্যম ডেইলি স্টারকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সুজন জানান, ‘আমাদের সবার উচ্চতাই প্রায় সমান ছিল। আমি ব্যাটিংয়ে নেমে দ্রুতই আব্দুল রাজ্জাকের (মূলত আজহার মাহমুদ) বলে আউট হয়ে যাই। ওয়াসিম সেটা খেয়াল করেনি, তাই বাকীদের জিজ্ঞেস করে ছোটু কোথায়? ও কি ব্যাটিংয়ে নামবেনা? ভাগ্য ভালো দ্রুতই আউট হয়েছি নইলে বাউন্সারে নাস্তানাবুদ হতাম।’