

ইংল্যান্ডের মাটিতে আর দিনকয়েক পরই শুরু হয়ে যাবে ক্রিকেট বিশ্বকাপের ব্যাট-বলের মহারণ। বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলকে ফেবারিট তকমা না দিলেও ‘আন্ডারডগ’ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। অনেকে আবার মনে করছেন ‘আন্ডারডগ’-এর চেয়েও বেশি কিছু। বিশেষ করে আয়ারল্যান্ডের কন্ডিশনে বাংলাদেশ ত্রিদেশীয় সিরিজের ট্রফি জেতার পর আলোচনাটা বেশি হচ্ছে। দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট কিংবা টেলিগ্রাফের মতো শীর্ষ ইংলিশ মিডিয়া দাবি করেছে, বাংলাদেশের বিশ্বকাপ জয়ের সম্ভাবনা উইন্ডিজ, শ্রীলঙ্কার থেকেও কম। এছাড়াও বাংলাদেশ দলে কোনো বিগ হিটার নেই ও সেমিফাইনালে যাওয়ার মতো শক্তি নেই বলেই জানিয়েছে তারা।
সদ্য আয়ারল্যান্ডের মাটিতে উইন্ডিজকে হারিয়ে ত্রিদেশীয় সিরিজের ট্রফি জিতে বিশ্বকাপ খেলতে গেছে বাংলাদেশ। টুর্নামেন্টে একবারও বাংলাদেশকে হারানো তো দূরের কথা, চ্যালেঞ্জও জানাতে পারেনি উইন্ডিজ।
আর সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান দেখলে ওয়ানডে জয়ের হিসেবে বাংলাদেশ বেশ কিছু বড় দলের চেয়ে এগিয়ে। ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৯ সালের ২০ মে পর্যন্ত ওয়ানডেতে ম্যাচ জয়ে বাংলাদেশ তৃতীয়। দক্ষিণ আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া, পাকিস্তান, নিউজিল্যান্ডের মতো দলের অবস্থান বাংলাদেশের পরে। বাংলাদেশ এ সময় ২৭ ম্যাচে ১৭ জয় তুলে নিয়েছে।
বিশ্বকাপের আগে লেস্টারে তিন দিনের ক্যাম্প করেছে বাংলাদেশ দল। বুধবারই ছিল সেই ক্যাম্পের শেষ দিন। কিছুটা ঢিমেতালে চলা এই ক্যাম্পের পর দল আজ এসেছে কার্ডিফে। সেখানেই আইসিসির অতিথি হয়ে শুরু হচ্ছে বিশ্বকাপ মিশন। ২৬ ও ২৮ মে দুটি প্রস্তুতি ম্যাচে পাকিস্তান ও ভারতের সঙ্গে খেলবে বাংলাদেশ।
এখন পর্যন্ত পাঁচবার (১৯৯৯, ২০০৩, ২০০৭, ২০১১ ও ২০১৫) বিশ্বকাপ খেলেছে বাংলাদেশ। প্রতিবারই খেলতে গিয়েছে বড় কোনো লক্ষ্য ছাড়াই। তবে এবার বাংলাদেশ নিজেদের পঞ্চম বিশ্বকাপ খেলতে গেছে শিরোপা জয়ের লক্ষ্য নিয়ে। ২ জুন ওভালে সাউথ আফ্রিকার বিপক্ষে বিশ্বকাপের আসল লড়াইয়ে নামার আগে আদর্শ প্রস্তুতিই যোগান দিতে পারে নতুন ইতিহাস রচনায় সঙ্ঘবদ্ধ একটি দলকে অদম্য হয়ে ওঠার সাহস এবং আত্মবিশ্বাস।
কোনো বড় টুর্নামেন্টের আগে ইংলিশ মিডিয়ার নানান ধরনের হাস্যকর প্রেডিকশন নতুন কিছু নয়। এবারও প্রেডিকশন দিয়ে সমালোচনার মুখে কয়েকটি ব্রিটিশ গণমাধ্যম।
এবারের বিশ্বকাপে সবচেয়ে ভাঙাচোরা দল বলা যায় শ্রীলঙ্কা। কিন্তু অভিজ্ঞ লাসিথ মালিঙ্গার কারণে তাদের রেটিং দেয়া হয়েছে ৫০/১। সদ্য বাংলাদেশের কাছে হেরে গেলেও উইন্ডিজ রেটিং পেয়েছে ১৮/১। কারণ হিসেবে বলা হয়েছে দলে গেইল-রাসেলের প্রত্যাবর্তনের কথা।
বিশ্বকাপে এবার পাকিস্তানের অবস্থা সুবিধার নয়। ঘরের মাঠ আর ইংল্যান্ডের মাটিতে সর্বশেষ দুটি ওয়ানডে সিরিজেই তারা করুণভাবে হেরেছে। তারপরেও তাদের রেটিং ১৪/১। দুই ও তিনে আছে যথাক্রমে ভারত (৩/১) এবং অস্ট্রেলিয়া (৪/১)। নিউজিল্যান্ড আর দক্ষিণ আফ্রিকার রেটিং ১০/১ করে।
৮০/১ রেটিং নিয়ে নবম স্থানে আছে বাংলাদেশ। ১০০/১ রেটিং নিয়ে শেষের স্থানে আছে আফগানিস্তান।
বাংলাদেশ দলকে নিয়ে ইংলিশ গণমাধ্যম দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট বলেছে,
‘বাংলাদেশ দলে মাশরাফির নেতৃত্ব গুরুত্বপূর্ণ। এ দলে সাকিব আল হাসান, মুস্তাফিজুর রহমানের মতো তারকা ক্রিকেটার আছে। কিন্তু দলটিতে কোনো বিগ হিটার নেই, যারা অল্প সময়ে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে। এছাড়া দলটি ৩০০+ স্কোর চেজ করতে অস্বস্তিবোধ করে। কিন্তু এখন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এমন স্কোর হরহামেশাই হচ্ছে। তারা টুর্নামেন্টে একটা আপসেটের জন্ম দিতে পারে। তবে মাশরাফি যে সেমিফাইনালে খেলার লক্ষ্যের কথা বলেছেন, তা অলীক কল্পনা।’
টেলিগ্রাফ বাংলাদেশকে শ্রীলঙ্কা আর উইন্ডিজের পেছনে রাখার কারণ ব্যখ্যা করেছে এভাবে,
‘সাম্প্রতিক সময় শ্রীলঙ্কা এবং উইন্ডিজকে ওয়ানডেতে হারিয়েছে বাংলাদেশ। তাদের আছে বিশ্বমানের পেস প্রতিভা মুস্তাফিজুর রহমান; যিনি ২০১৬ সালে আইসিসির ইমার্জিং ক্রিকেটার হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছিলেন। ওয়ানডেতে তার অর্ধশতাধিক (আসলে ৮৩টি) উইকেট রয়েছে এবং এই টুর্নামেন্টে সে দারুণ কিছু করতে পারে। কিন্তু সেমিফাইনালে যাওয়ার মতো শক্তি এই দলটির নেই।’