

বাংলাদেশের এই দলটি যাচ্ছে বিশ্বকাপ জয়ের লক্ষ্য নিয়ে। সে সামর্থ্য যে রয়েছে, সেটি আজ সংবাদ সম্মেলনে প্রবল আত্মবিশ্বাসের সঙ্গেই বলেছেন মাশরাফি বিন মর্তুজা। যদি অমন ঐতিহাসিক কিছু হয়েই যায়, তাহলে এই ছবিটির গুরুত্ব কতো বেশি–চিন্তা করুন তো। আর নাই-বা ট্রফি জিতল বাংলাদেশ, কিন্তু বিশ্বকাপ খেলতে যাওয়া স্কোয়াডের অফিসিয়াল ফটোসেশনের গুরুত্বও তো অসীম।
অথচ এই ছবিটি পূর্ণতা পেল না। সাকিব আল হাসান নেই যে!
আইপিএল পর্ব শেষ করে কাল ঢাকা ফিরেছেন সাকিব। আজ এসেছিলেন স্টেডিয়ামেও। কিন্তু দুপুরের পর বোর্ড সভাপতি ও পরিচালকদের সঙ্গে যে মধ্যাহ্ন ভোজ কিংবা এরপরের জার্সি উন্মোচন অথবা অফিসিয়াল ফটোসেশনের সময় ছিলেন না। এর আগেই চলে গেছেন স্টেডিয়াম ছেড়ে। জাতীয় দলের বিশ্বকাপ যাত্রার এই গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়গুলোকে এতটুকুন তোয়াক্কা না করে।
বিপিএল ফাইনালে ইনজুরির পর থেকেই দীর্ঘদিন মাঠের বাইরে ছিলেন সাকিব। তাঁকে জাতীয় দলের ক্যাম্পে যোগ দেবার জন্য চিঠিও দিয়েছিল বিসিবি। কিন্তু কাজ হয়নি। জনি বেয়ারস্টো, ডেভিড ওয়ার্নাররা বিশ্বকাপ ক্যাম্পে যোগ দেবার জন্য আইপিএল ছাড়েন; আর আমাদের সাকিব বিশ্বকাপ ক্যাম্পে যোগ না দিয়ে আইপিএল খেলার সম্ভাবনা তৈরী হওয়ায় ভারতে থেকে যান। বোর্ডের ইচ্ছের চেয়ে সাকিবের ব্যক্তিগত ইচ্ছেই প্রাধান্য পেয়েছে বরাবর; এক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম না।
দলীয় খেলায় ব্যক্তির চেয়ে দল সব সময় বড়। তা তিনি যতো বড় খেলোয়াড়ই হন না কেন! বাংলাদেশের ইতিহাসের সর্বকালের সেরা ক্রিকেটার যে সাকিব, এ নিয়ে কারো বিন্দুমাত্র সংশয় থাকার কথা নয়। কিন্তু সেই তিনি কি তাই বলে দলের ঊর্ধ্বে? সাকিবকে যে বোর্ড সামলাতে পারছে না, সেটি কালকের বিশ্বকাপ দলের ফটোসেশন শেষে বিসিবি প্রেসিডেন্ট নাজমুল হাসান পাপনের কথাবার্তা থেকেই পরিষ্কার।
প্রশ্ন : দেশের মাটিতে আজ বিশ্বকাপ দলের শেষ অনুশীলন, জার্সি উন্মোচন এবং ফটোসেশন ছিল। সেখানে সাকিব ছিলেন না। আসলে ব্যাপারটি কেমন হলো?
পাপন : দুঃখজনক। আর কী বলব! এটা দুঃখজনক, যেহেতু দলের ফটোসেশন ছিল। আমি এসে তারপরও জিজ্ঞেস করেছি। সত্যি বলতে, আমি যখন স্টেডিয়ামে ঢুকছি, তখন আমি ফোন করেছিলাম সাকিবকে। জিজ্ঞেস করলাম, কোথায় তুমি? ও বলল, আমি তো চলে এসেছি। ও যে বাংলাদেশে এসেছে, তা আমি জানি না। পেপারে দেখেছি। আমার সঙ্গে ওর যোগাযোগ হয়নি। সাকিব বলল, আপনার বাসায় আসব রাতে। আমি বললাম, ‘কেন? এখনই তো দেখা হবে।’ ও বলল, ‘না, আমি বেরিয়ে গেছি।’ আমি এসে জিজ্ঞেস করলাম। আমাকে বলা হলো যে, সাকিবকে আগেই বলা হয়েছে যে আজ দলের ফটোসেশন আছে। তো জাতীয় দল যাচ্ছে বিশ্বকাপে; ফটোসেশনে একসঙ্গে থাকবে এটি আমরা আশা করেছিলাম। এমনিতেই তো দলের অনুশীলনে ছিল না। কিন্তু সে নেই। এটিই বাস্তবতা।
প্রশ্ন : সাকিব দলের বিশ্বকাপ ক্যাম্পে ছিলেন না। তাঁকে আইপিএল থেকে ফেরার জন্য চিঠি দেবার কথা আপনি জানিয়েছিলেন। পরে ম্যাচ খেলার সুযোগ তৈরী হওয়ায় তিনি থেকে যান। এরপর আজ দেশে প্রস্তুতির শেষ দিনের ফটোসেশনেও সাকিব অনুপস্থিত। দলের একাত্মবোধে এটি প্রভাব ফেলবে বলে মনে করেন কিনা?
পাপন : আমার মনে হয়, দলের অন্যরা এত দিনে অভ্যস্ত হয়ে গেছে ওর এসব ব্যাপারে। যাই হোক, এছাড়া আর কী বলব! আমি মনে করি, এটি ওর জন্যই দুর্ভাগ্য। আমাদের যে বিশ্বকাপ দল যাচ্ছে, তার সঙ্গে ও যে থাকতে পারল না– সেটি আমি মনে করি, ওরই কপাল খারাপ। আর কী বলব!
প্রশ্ন : আপনি বলছেন, ওর সঙ্গে অন্যরা অভ্যস্ত হয়ে গেছে। বোর্ডও কি সাকিবের এমনসব আচরণের সঙ্গে অভ্যস্ত হবে?
পাপন : প্রশ্নই ওঠে না। প্রশ্নই ওঠে না। যেহেতু পরশু দিনই দল চলে যাচ্ছে, এটি নিয়ে তাই বেশি কথা বলছি না আমরা। কিন্তু আমি অবশ্যই মনে করি, এটি একটি দুঃখজনক ব্যাপার।
……………………….
প্রবল ক্ষমতাধর বোর্ড প্রেসিডেন্টকেও যেন সাকিবের ‘ক্ষমতা’র সামনে অসহায় লাগে! আর বিশ্বকাপ যাত্রার আগে দলীয় ফটোসেশনে সাকিবের অনুপস্থিতি দলীয় সংহতির খুব ভালো বার্তা দেয় না।
লেখাঃ নোমান মোহাম্মদ, বিশেষ ক্রীড়া সংবাদদাতা, কালের কণ্ঠ।