

একজন ব্যাটসম্যানের পক্ষে যত রেকর্ড নিজের করে নেয়া সম্ভব, প্রায় সবগুলোই তিনি নিজের করে নিয়েছিলেন। অনেকের চোখেই তিনি সর্বকালের সেরা। কারো কারো চোখে তিনি “ক্রিকেট ঈশ্বর”। তিনি আর কেউ নন, তিনি “শচীন রমেশ টেন্ডুলকার”। যে সম্ভাবনা নিয়ে ক্যারিয়ার শুরু হয়েছিল তার পুরোটা দিতে পারছিলেন না শুরুতে। তবে মিডল অর্ডার থেকে ওপেনিং পজিশনে ব্যাট করতে শুরু করার পর বদলেছিল গল্প।

৬৯ ম্যাচের ৬৬ ইনিংসে ব্যাট করে ৩০.৮৪ গড়ে ১৭৫৮ রান। ১২ ফিফটির সাথে নেই কোন সেঞ্চুরি, সর্বোচ্চ ৮৪ রান। স্ট্রাইক রেটটা ৭৪.৩৬। বেশ সাদামাটা এক ওয়ানডে ক্যারিয়ার বলা চলে।
১৯৯৪ সালের ২৬ মার্চ অব্দি এমন সাদামাটাই ছিল শচীন টেন্ডুলকারের ওয়ানডে ক্যারিয়ার। ওয়ানডে অভিষেকে ৫ নম্বরে ব্যাটিং করেছিলেন। ঐ ৫ নম্বরে নেমেই নিজের প্রথম দুই ওয়ানডেতে সাজঘরে ফিরেছিলেন কোন রান না করে। এরপর কখনো ৫, কখনো ৬, কখনো ৭ এবং কখনো ৪ নম্বরে ব্যাটিং করার সুযোগ পাচ্ছিলেন শচীন।
১৯৯৪ সালে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে ওয়ানডে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে (২৭ মার্চ) ইনজুরির কারণে খেলা হয়নি নভজোৎ সিং সিধুর। অধিনায়ক মোহাম্মদ আজহারউদ্দিন সেদিন অজয় জাদেজার সঙ্গে ওপেন করতে পাঠান শচীন টেন্ডুলকারকে।
ম্যাচের আগে ওপেন করার জন্য অবশ্য শচীনই অনুরোধ করেছিলেন। তখনকার ভারতীয় দলের ম্যানেজার অজিত ওয়াড়েকর ও অধিনায়ক মোহাম্মদ আজহারউদ্দিনকে বলেছিলেন নিজের ওপেন করার ইচ্ছের কথা। ম্যানেজার ওয়াড়েকরকে শচীন বলেছিলেন,
‘যদি আমি ব্যর্থ হই তাহলে আর কখনো এমন কিছু চাইবো না’।
১৪৩ রানের ছোট লক্ষ্য তাড়া করতে বড্ড বেশি তাড়াহুড়া ছিলো যেনো শচীনের। ম্যাথু হার্টের বলে তাঁকেই ক্যাচ দিয়ে ফেরার সময় শচীনের নামের পাশে জ্বলজ্বল করছে ৮২ রান। ১৫ চার ও ২ ছয়ের সাহায্যে ৮২ রান করতে শচীন খেলেন মাত্র ৪৯ বল; স্ট্রাইক রেট ১৬৭.৩৪!
ঐ ম্যাচে শচীনের ব্যাটিং দেখুনঃ
😍Tendulkar’s first innings as an opener in ODIs !😍 pic.twitter.com/aj7tJgkXeZ
— Ritesh (@Sachislife) March 27, 2019
অকল্যান্ডে শচীনের ঐ দাপুটে ব্যাটিং তাঁর ওয়ানডে ক্যারিয়ারকে সঠিক পথ দেখিয়েছিল। ভারত পেয়েছিল তাঁদের তথা ক্রিকেট বিশ্বের অন্যতম সফল ওয়ানডে ওপেনার। পরের ম্যাচেই, ওয়েলিংটনে ইনজুরি কাটিয়ে একাদশে ফিরেছিলেন বটে সিধু, তবে ওপেনার হিসাবে খেলা হয়নি তাঁর। নেমেছিলেন ৩ নম্বরে। সে ম্যাচেও শচীন খেলেন ৭৫ বলে ৯ চারে ৬৩ রানের এক ইনিংস। ক্রাইস্টচার্চে চতুর্থ ও শেষ ওয়ানডেতে করেন ২৬ বলে ৪০ রান।
যেখানে মিডল অর্ডারে নেমে ক্যারিয়ারের শুরুর দুই ম্যাচে কোন রান না করে ফিরেছিলেন, সেখানে ওপেন করতে নেমে শুরুর দুই ম্যাচেই ফিফটি পেয়েছিলেন শচীন।
৪৯ টি ওয়ানডে শতকের মালিক শচীন টেন্ডুলকার ওপেন করতে শুরু করার পর ১০ম (সাকুল্যে ৭৬ তম ইনিংসে) নিজের প্রথম ওয়ানডে শতকের দেখা পেয়েছিলেন।

ওয়ানডেতে ৪৫২ ইনিংস ব্যাট করে ৪৪.৮৩ গড়ে ১৮৪২৬ রান করেছেন শচীন টেন্ডুলকার। যার মধ্যে ওপেনার হিসাবে ব্যাট করেছেন ৩৪০ ইনিংসে। ওপেনার শচীন রান করেছেন ৪৮.৩০ গড়ে। ওপেনার হিসাবে ওয়ানডেতে শচীনের চেয়ে বেশি রান নেই আর কোন ব্যাটসম্যানেরই।
ওপেনার হিসাবে সর্বোচ্চ ওয়ানডে রান (সেরা ১৫)- (২৬ মার্চ, ২০২১ পর্যন্ত)
১. শচীন টেন্ডুলকার (ভারত)- ৩৪০ ইনিংসে ১৫৩১০ রান
২. সনাথ জয়সুরিয়া (শ্রীলঙ্কা)- ৩৮৩ ইনিংসে ১২৭৪০ রান
৩. ক্রিস গেইল (উইন্ডিজ)- ২৭৪ ইনিংসে ১০১৭৯ রান
৪. অ্যাডাম গিলক্রিস্ট (অস্ট্রেলিয়া)- ২৫৯ ইনিংসে ৯২০০ রান
৫. সৌরভ গাঙ্গুলি (ভারত)- ২৩৬ ইনিংসে ৯১৪৬ রান
৬. ডেসমন্ড হেইন্স (উইন্ডিজ)- ২৩৭ ইনিংসে ৮৬৪৮ রান
৭. সাঈদ আনোয়ার (পাকিস্তান)- ২২০ ইনিংসে ৮১৫৬ রান
৮. হাশিম আমলা (দক্ষিণ আফ্রিকা)- ১৭৫ ইনিংসে ৮০৮৩ রান
৯. ভিরেন্দর শেবাগ (ভারত)- ২১২ ইনিংসে ৭৫১৮ রান
১০. তামিম ইকবাল (বাংলাদেশ)- ২১১ ইনিংসে ৭৪৫২ রান
১১. তিলকারত্নে দিলশান (শ্রীলঙ্কা)- ১৭৬ ইনিংসে ৭৩৬৭ রান
১২. রোহিত শর্মা (ভারত)- ১৪০ ইনিংসে ৭২০১ রান
১৩. গ্রায়েম স্মিথ (দক্ষিণ আফ্রিকা)- ১৯৩ ইনিংসে ৬৯৭৪ রান
১৪. গ্যারি কারস্টেন (দক্ষিণ আফ্রিকা)- ১৭৫ ইনিংসে ৬৬৪৭ রান
১৫. মার্টিন গাপটিল (নিউজিল্যান্ড)- ১৬২ ইনিংসে ৬৩০২ রান।