

বিপর্যয়ের সীমানায় দাঁড়িয়ে মিঠুন, সাইফউদ্দিন, মিরাজের ব্যাটে লড়াই করার মতো একটা স্কোর পায় বাংলাদেশ। নিউজিল্যান্ডের জন্য লক্ষ্যটা বড় ছিল না, ২৩৩। নিউজিল্যান্ডের মাটিতে তাদের এ রানের আগে আঁটকে রাখতে হলে জাদুকরী বোলিং উপহার দিতে হতো মাশরাফি-মুস্তাফিজদের। তবে বল হাতে দ্যুতি ছড়াতে পারলেন না তারা। ফলাফল যা হওয়ার তাই হলো। বাংলাদেশের বিপক্ষে হেসেখেলে জিতল কিউইরা। ৮ উইকেটের দাপুটে জয়ে তিন ম্যাচ সিরিজে ১-০তে এগিয়ে গেল তারা। জয়ের নায়ক ১১৭ রানের ইনিংস খেলা মার্টিন গাপটিল, হয়েছেন ম্যাচ সেরা।
নেপিয়ারে সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে টস জিতে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা মোটেও ভালো হয়নি বাংলাদেশের। দলীয় ৯৪ রানেই হারিয়ে ফেলেছে ৬ উইকেট। কিউই বোলারদের তোপের মুখে একে একে বিদায় নিয়েছেন টপ অর্ডারের ব্যাটসম্যানরা। দুই ওপেনার তামিম ইকবাল (৫) ও লিটন দাস (১) বিদায় নেন দলীয় ১৯ রানের মধ্যে। সুবিধা করতে পারেননি মুশফিক (৫) ও মাহমুদউল্লাহও (১৩)। ব্যক্তিগত ১৩ রানে বিদায় নেন সাব্বির রহমানও।
তবে তিন নম্বরে নেমে কিছুটা আশা দেখাচ্ছিলেন সৌম্য। বাঁ-হাতি এই হার্ড হিটার খেলছিলেন স্বভাব সুলভ ভঙ্গিতেই। কিন্তু তার ২২ বলের ইনিংসটি থেমে যায় ৩০ রানে। একটি ছক্কা ও ৫টি চার মারেন তিনি।
এরপর শুরু মোহাম্মদ মিঠুনের লড়াই। নিউজিল্যান্ডের মতো কঠিন কন্ডিশনে লেজের দুই ব্যাটসম্যান মিরাজ ও সাইফউদ্দিনকে নিয়ে দলকে সম্মানজনক একটি যায়গায় নিয়ে যান তিনি। মিরাজের সাথে মিঠুনের জুটিটা ছিল ৩৭ রানের। ব্যক্তিগত ২৬ রানে মিরাজ আউট হলে ভেঙে যায় সেই জুটি। এরপর সাইফউদ্দীনের সাথে জুটি গড়েন মিঠুন। এই জুটিতেই বিপর্যয় সামাল দিয়ে দুইশ রান পার করতে পারে সফরকারীরা।
সাইফউদ্দীন আউট হন দলীয় ২১৫ রানে। তার কিছুক্ষণ পরই হার মানেন মিঠুনও। তবে তার আগে ৬২ রানের এক লড়াকু ইনিংস খেলে ফেলেন তিনি। ফলে ৪৮.৫ ওভারে ২৩২ রান করে অল আউট হয়ে যায় মাশরাফি বিন মর্তুজার দল।
নিউজিল্যান্ডের হয়ে ৩টি করে উইকেট নিয়েছেন ট্রেন্ট বোল্ট ও মিচেল সান্টনার। এচাড়া দুইটি করে উইকেট নিয়েছেন ম্যাট হেনরি ও ফার্গুসন।
জবাবে ব্যাট করতে নেমে উড়ন্ত সূচনা করেন হেনরি নিকোলস ও মার্টিন গাপটিল। স্ট্রোকের ফুলঝুরি ছোটান তারা। তাতে উড়ন্ত গতিতে ছোটে নিউজিল্যান্ড। বিনা উইকেটেই ১০০ রান তুলে ফেলে স্বাগতিকরা। এরপরই খেই হারান নিকোলস। মেহেদী হাসান মিরাজের বল উইকেট ছেড়ে মারতে এসে ইনসাইড এজ হয়ে ফেরেন তিনি। ফেরার আগে তুলে নেন ক্যারিয়ারের অষ্টম ফিফটি। ৮০ বলে ৫ চারে ৫৩ রান করেন বাঁহাতি ব্যাটার।
২৩৩ রানের টার্গেটে খেলতে নেমে ১০৩ রানে প্রথম উইকেট হারায় কিউইরা। নিকোলস ফিরলে ক্রিজে আসেন কেন উইলিয়ামসন। তবে বেশিদূর যেতে পারেননি তিনি। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের বলে এলবিডব্লিউ হয়ে ফেরেন অধিনায়ক। ১১ রানে যখন তিনি প্যাভিলিয়নে ফেরত যান তখন দলীয় রান ছিল ১৩৭।
একে একে দুই সঙ্গী বিদায় নিয়েছেন। তবে থেকে গেছেন গাপটিল। শুরুতে একটু নড়বড়ে দেখালেও সময় গড়ানোর সঙ্গে ছন্দে ফেরেন। পরে স্ট্রোকের পসরা সাজান। ফিফটি তুলে এগিয়ে যান সেঞ্চুরির পথে। অবশেষে কাঙ্ক্ষিত তিন অংকের ম্যাজিক ফিগার স্পর্শ করলেন তিনি।
তার অসাধারণ সেঞ্চুরিতে জয়ের পথে নিউজিল্যান্ড। করেছেনও তাই। ৪৪.৩ ওভার পর্যন্ত খেলে দলকে জিতিয়েই মাঠ ছেড়েছেন। ৪টি ছক্কা ও ৮টি চারে সাজিয়ে ১১৬ বলে অপরাজিত ছিলেন তিনি ১১৭ রানে। আর অন্যপ্রান্তে ৪৫ রান নিয়ে অপরাজিত ছিলেন রস টেইলর।
সংক্ষিপ্ত স্কোরঃ
বাংলাদেশঃ ২৩২/১০ (৪৮.৫ ওভার) তামিম ৫, লিটন ১, সৌম্য ৩০, মুশফিক ৫, মিঠুন ৬২, মাহমুদউল্লাহ ১৩, সাব্বির ১৩, মিরাজ ২৬, সাইফ ৪১, মাশরাফি ৯*; হেনরি ২/৪৮, বোল্ট ৩/৪০, ফার্গুসন ২/৪৪, স্যান্টনার ৩/৪৫
নিউজিল্যান্ডঃ ২৩৩/২ (৪৪.৩ ওভার) গাপটিল ১১৭*, টেইলর ৪৫*, হেনরি ৫৩, উইলিয়ামসন ১১ ; মাহমুদউল্লাহ ১/২৭, মিরাজ ১/৪২
ফলাফলঃ নিউজিল্যান্ড ৮ উইকেটে জয়ী
ম্যাচ সেরাঃ মার্টিন গাপটিল